ডেস্ক রিপোর্ট : কৃষি ভান্ডার খ্যাত দাকোপে মাচান পদ্ধতিতে তরমুজ ও সব্জি চাষে ব্যাপক সফলতা মিলছে। এক সময়ের লবনাক্ততা কাটিয়ে নতুন নতুন এলাকা আসছে চাষাবাদের আওতায়।
খুলনার উপকুলবর্তী উপজেলা দাকোপের অর্থনীতি এক সময় ছিল লবন পানির চিংড়ী চাষের উপর নির্ভরশীল। সময়ের ব্যবধানে সেই অবস্থার পরিবর্তন হতে থাকে। গত ৩ দশক ধরে গরমের তরমুজ চাষে ব্যাপক সফলতা মিলেছে। একই সাথে নানা ধরনের সব্জির চাষাবাদ করে চাষিরা হচ্ছে লাভবান। ধীরে ধীরে গোটা উপজেলা এখন লবন পানির চাষাবাদ মুক্ত হয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় বর্ষা মৌসুমে বসতভিটে এবং ঘেরের আইল সীমানার বেড়ীবাঁধের উপর শুরু হয় মাচান পদ্ধতিতে অসময়ের তরমুজ ও নানা ধরনের সব্জি চাষ। অনেকে আবার একই জায়গায় ধান, তরমুজ, সব্জির পাশাপাশি মাছ চাষ করছে। যেটাকে বলা হচ্ছে সমন্বিত চাষাবাদ। অনেক শিক্ষিত বেকার তরুন যুবক নতুন নতুন উদ্যোক্তা হিসাবে এ পেশায় ঝুঁকছেন। উপজেলার পানখালী ইউনিয়নের লক্ষিখোলা গ্রামের নতুন উদ্যোক্তা শেখ বায়েজিদ হোসেন এ বছর শুরু করেছেন সমন্বিত চাষাবাদ। নিজের ২ শ’ শতক জমির চারিপাশে আইল সীমানার বেড়ীভাধে মাচান পদ্ধতিতে করেছেন অসমেয়র তরমুজ ও সব্জি চাষ। জানা গেছে তিনি ১ হাজার তরমুজ বীজের গাছ থেকে ২ হাজার পিচ তরমুজ পাবেন। প্রতিটি তরমুজ ৪ কেজি থেকে শুরু করে ৯ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়ে উঠেছে। এ সপ্তাহেই তিনি বাজার জাত করবেন বলে আশা করছেন। এ ছাড়া বেড়ীবাঁধের উপর উচতে, বেগুন ও টমেটো চাষ করেছেন। গত ২ সপ্তাহ আগে থেকে তিনি সব্জি বিক্রি করছেন। সমন্বিত চাষাবাদের ঘেরে তিনি গলদা, বাগদা, হরিনা, পার্শ্বে, রুই ও গ্লাসকার্প মাছের চাষ করেছেন। নিজে শ্রম দেওয়ার পাশাপাশি তিনি একজন স্থায়ী শ্রমিক রেখে চাষাবাদ করছেন। সব মিলে চাষাবাদে তার খরচ হবে ২ লাখ টাকার মত। বর্তমানে তিনি আশা করছেন সেখানে সব মিলে ৮ থেকে ৯ লক্ষ টাকা বিক্রি করতে পারবেন। অর্থাৎ ২ মাসের ব্যবধানে তিনি সেখান থেকে ৫ থেকে ৬ লক্ষ টাকা লাভবান হবেন। বর্তমানে গোটা উপজেলা জুড়ে কমবেশী সমন্বিত চাষাবাদ হচ্ছে। উপজেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়, গত বছর দাকোপে মাচান পদ্ধতিতে যেখানে তরমুজ চাষ হয়েছিল ১৬ হেক্টর জমিতে এ বছর সেটা বেড়ে দাড়িয়েছে ২১ হেক্টরে। একই ভাবে ২২০ হেক্টর জমিতে সব্জি চাষের বিপরীতে এ বছর চাষাবাদ হয়েছে ২৭০ হেক্টর। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম আশার কথা তুলে ধরে বলেন, প্রতি বছর নতুন নতুন এলাকা চাষাবাদের আওতায় আসছে। প্রচুর লবনাক্ত এলাকা খ্যাত গড়খালী, নলডাঙ্গা ও আঁধার মানিকে এ বছর মাচান পদ্ধতির এই সমন্বিত চাষাবাদ শুরু হয়েছে। তবে চাষিদের অভিযোগ অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারনে উৎপাদন খরচ যেমন বেড়ে যায়, তেমনি পাইকারী ক্রেতা মাঠে না আসায় তারা নায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।