সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার শ্যামনগর ও আশাশুনির উপকূলীয় এই দুই উপজেলার মানুষের জীবন-জীবিকা মারাত্মক ঝুঁকির মুখে। এ বিষয়ে দৈনিক পত্রদূত পত্রিকায় শনিবারের সংখ্যায় পৃথক দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছেÑ শ্যামনগরের চুনকুড়ি নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে চারটি পরিবার ঘরবাড়ি ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে। একই সময়ে আশাশুনির বিছটে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধে আবারও বড় ধরনের ফাঁটল দেখা দিয়েছে। এসব ঘটনায় মানুষের মধ্যে তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকার মানুষ বহু বছর ধরে এই বেড়িবাঁধের ওপর নির্ভর করে বেঁচে আছে। এ বাঁধ শুধু ঘরবাড়ি নয়, মানুষের প্রাণ, কৃষিজমি, মৎস্যঘের, হাটবাজার, স্কুল-কলেজ ও মসজিদ-মন্দির রক্ষার একমাত্র ভরসা। অথচ প্রায়ই দেখা যায়, বেড়িবাঁধ রক্ষণাবেক্ষণে অবহেলা করা হয়। ভাঙন দেখা দেওয়ার পর তড়িঘড়ি করে কিছু অস্থায়ী কাজ করা হয়, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি সমাধান মিলছে না। এর ফলেই বারবার একই স্থানে ভাঙন ও প্লাবনের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। এমন অবস্থায় শ্যামনগরের মথুরাপুর গ্রামের চারটি পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে রাস্তায় বসবাস করছে—এ দৃশ্য যে শুধু হৃদয়বিদারক তাই নয়, সরকারের দুর্বল পরিকল্পনারও প্রমাণ। অন্যদিকে বিছটে গত বছর বেড়িবাঁধ ভেঙে ১১টি গ্রাম ডুবে গিয়েছিল, হাজারো পরিবার আজও সেই ক্ষতি থেকে ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। অথচ একই এলাকায় আবারও ভয়াবহ ফাঁটল দেখা দিয়েছে। এ যেন অবহেলার ধারাবাহিকতা।
আমরা মনে করি, এই মুহূর্তে তিনটি বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া দরকার: ১. জরুরি প্রতিরোধমূলক কাজ: বাঁশের খাঁচা, জিওব্যাগ ও অন্যান্য উপকরণ ব্যবহার করে দ্রুত ভাঙন রোধ করা। ২. দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ: কেবল মেরামত নয়, আধুনিক প্রকৌশল সমাধান ব্যবহার করে টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে। ৩. পুনর্বাসন পরিকল্পনা: যেসব পরিবার ভিটেমাটি হারিয়েছে, তাদের জন্য স্থায়ী পুনর্বাসন ও জীবিকায়ন সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনের সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এ দুরবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে না। তাছাড়া উপকূলীয় এলাকার মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের মারাত্মক প্রভাব মোকাবিলা করছে—এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও জরুরি।
সাতক্ষীরার মানুষ বারবার একই দুর্যোগে ভুগবে কেন? প্রতিবার ক্ষতির পর ত্রাণ আর আশ্বাস দেওয়ার চেয়ে পরিকল্পিত ও স্থায়ী সমাধান এখন সময়ের দাবি। উপকূলের বেড়িবাঁধ রক্ষায় কার্যকর উদ্যোগই পারে মানুষকে বাঁচাতে, কৃষি ও অর্থনীতিকে টিকিয়ে রাখতে।
জেলা প্রশাসকের নির্দেশ অমান্য করে কোচিং বাণিজ্যের অভিযোগ
নিজস্ব প্রতিনিধি: শিক্ষার মানোন্নয়নে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বারবার কঠোর নির্দেশনা দিলেও তা যেন কর্ণপাত করছে না সংশ্লিষ্ট শিক্ষকরা। প্রকাশ্যে না হলেও গোপনে চলছে কোচিং বাণিজ্যের জমজমাট ব্যবসা। জেলার স্বনামধন্য নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকরা সেই নির্দেশ অমান্য করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে গড়ে তুলেছেন অবৈধ টিউশনি সাম্রাজ্য।
অভিযোগ রয়েছে, শহরের একটি গার্লস স্কুলের সহকারী শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম ডে-নাইট কলেজের সামনে বড় বাজার সংলগ্ন একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় দশজন শিক্ষার্থীকে মাসিক দুই হাজার টাকা করে পড়ান। শুধু তাই নয়, সাতক্ষীরা প্রি-ক্যাডেট স্কুলের পাশেও তিনি আলাদা ব্যাচ পরিচালনা করছেন। ইংরেজি শিক্ষক হওয়ার কারণে নিজের প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার্থীদের বাধ্য করছেন তাঁর কাছে পড়তে।
অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়Ñ “স্কুলের স্যারদের কাছে না পড়লে ক্লাসে অপমান করেন। এমনকি পরীক্ষায় পাশ করানোর বিষয়েও হুমকির মুখে থাকতে হয়।”
এদিকে শহরের একটি গার্লস স্কুলের সহকারী শিক্ষক আক্তারুজ্জামান প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ৮টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত সুলতানপুর এলাকার আব্দুর রশিদের বাড়িতে ষষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সব বিষয়ে পড়ান। মাসিক ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা আদায় ছাড়াও পরীক্ষার আগে প্রশ্নপত্রে দাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে।
সহকারী শিক্ষক এমএম নওরোজ সুলতানপুর এলাকায় প্রিন্স নামের এক ব্যক্তির বাড়িতে সপ্তাহে তিন দিন মাগরিবের নামাজের পর কোচিং করান। সেখানে গণিত, ইংরেজি ও বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ানো হয়।
অন্যদিকে সহকারী শিক্ষক কবির আহমেদ সুলতানপুর ঝিলপাড়া এলাকায় একাধিক বাসায় নিয়মিত ব্যাচ পরিচালনা করছেন। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকার বিনিময়ে কোচিং নেওয়া এসব শিক্ষকের বিরুদ্ধে ক্রমাগত অভিযোগ জমছে।
নবারুণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক গাজী বলেন, “২০১২ সালের কোচিং নীতিমালা সম্পর্কে শিক্ষকদের অবগত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের মাইকিং ও সভার নির্দেশনাও জানানো হয়েছে। তবে কে কোথায় কোচিং করছে— সে বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই।”
এর আগে জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ “শিক্ষার মানোন্নয়ন করণীয়” শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ঘোষণা দেন-সকাল ৭টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কোনো কোচিং সেন্টার চালু রাখা যাবে না। পাশাপাশি কোনো শিক্ষক নিজ বাড়ি বা অন্যত্র কোচিং পরিচালনা করলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। জেলা প্রশাসকের নির্দেশ অমান্য করে একাধিক শিক্ষক প্রকাশ্যে নয়, গোপনেই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। এ ঘটনায় অভিভাবক ও সচেতন মহল তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের দাবি, “যারা সরকারি চাকরিজীবী হয়েও নিয়ম-শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করছে, তাদের বিরুদ্ধে এখনই প্রশাসনকে দৃশ্যমান ব্যবস্থা নিতে হবে।”