ফকিরহাট প্রতিনিধি : হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা আসন্ন। এ উপলক্ষে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মন্দিরগুলোতে সাজ সাজ অবস্থা। বর্তমানে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রতিমা শিল্পীরা। এবার উপজেলা ৬৮টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিমা তৈরিতে কারিগরের ব্যস্ততা জানান দিচ্ছে দেবী দুর্গার আগমনী বার্তা।
এ বছর ২১ সেপ্টেম্বর মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে দেবীপক্ষ। আগামী ২৮ সেপ্টেম্বর মহাষষ্ঠীর মাধ্যমে শুরু হতে যাওয়া দুর্গাপুজায় চারদিকে এখনই শুরু হয়েছে উৎসবের আমেজ।এ উৎসবকে ঘিরে দেবী দুর্গাকে বরণ করে নিতে মণ্ডপ মণ্ডপে চলছে নানা প্রস্তুতি। শেষ মুহুর্তে প্রতিমা শিল্পীরা কল্পনায় দেবী দুর্গার অনিন্দ্যসুন্দর রূপ দিতে রাতভর প্রতিমা তৈরির কাজ করছেন। নিখুঁত হাতের কারুকার্য দিয়ে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তৈরি করছেন প্রতিমা। পূজার সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন প্রতিমা শিল্পীরা।
উপজেলার বিভিন্ন মণ্ডপে গিয়ে দেখা যায়, মণ্ডপে মণ্ডপে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি। এখন শেষ পর্যায়ে মূর্তিতে রং-তুলির আঁচড়ের কাজ চলছে। অন্যদিকে সাজসজ্জা, আলোকসজ্জা, প্যান্ডেল তৈরি ও ডেকারেশনসহ অন্যান্য কাজগুলোও ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছে। দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও মণ্ডপের জন্য তৈরি করা হয়েছে লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ, অসুর, সিংহ, মহিষ, পেঁচা, হাঁস, সহ অনেক প্রতিমা। প্রতিমা তৈরি কাজ দেখতে বিভিন্ন মণ্ডপে শিশু-কিশোরদের ভিড় করতে দেখা যাচ্ছে।
শিল্পী অরুণ পাল, লিটন পাল, ভাস্কর অখিল বিশ্বাস ও অসিত জোয়ার্দ্দারসহ কয়েকজন প্রতিমা তৈরীর কারিগর জানান, এবছর প্রতিমা তৈরির খরচ বাড়লেও মজুরী বাড়েনি। ধর্মীয় কারণে তারা প্রতিমা তৈরি করছেন। কিন্তু আর্থিকভাবে লাভ হয়নি। এছাড়া অতিবৃষ্টির কারণে প্রতিমা তৈরিতে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিমা গড়তে দুর দুর্দান্ত থেকে মাটি সংগ্রহ করে দো-আঁশ মাটির কাজ করা হয়। আর এসব প্রতিমা তৈরীতে আমাদের দম ফেলার ফুসরত নেই। দেবী মা দুর্গা তার সাথে বিদ্যার দেবী স্বরসতী, ধন সম্পদের দেবী লক্ষ্মী এবং দেব সেনাপতি কার্তিক ও গনেশসহ নানা দেব-দেবীর প্রতিমার রূপকে ফুটিয়ে তুলবো নিপুন হাতের ছোঁয়ায়।
সেই সাথে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির এ বাজারে পরিশ্রমের পর প্রতিমা তৈরি করে যে মজুরি পাই তা দিয়ে জীবন যাপন করা কষ্টকর হয়ে পড়ছে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে চলে গেছে। নানা সংকটের মধ্যে টিকে থাকা কষ্টকর। তাই প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি অনেকের অন্য পেশার কাজ করতে হচ্ছে।
ফকিরহাট উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি প্রভাষক মনোতোষ রায় কেষ্ট জানান, ফকিরহাটে এবার ৬৮টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। ফকিরহাটে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা বিশ^াস করি সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় একটি সুন্দর ও উৎসবমূখর পরিবেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে পারবো।
ফকিরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুমনা আইরিন বলেন, “সরকারি বরাদ্দ আসলে আমরা পূজা উদযাপন কমিটির সভা ডাকবো। সেখানে আইন-শৃঙ্খলাসহ সকল বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে যাতে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় অনুষ্ঠান সুন্দরভাবে শুরু হয়ে সুসম্পন্ন হয়।