সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের একটি বড় অংশ সাতক্ষীরায় অবস্থিত, যা এখানকার প্রধান পর্যটন কিংবা পরিবহন থেকে নামলেই দেখা যায় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের দৃশ্য। তাই বলা হয়, ‘সাতক্ষীরার আকর্ষণ, সড়ক পথে সুন্দরবন’। বাংলাদেশের ছয় জেলা জুড়ে সুন্দরবনের অবস্থান হলেও একমাত্র সাতক্ষীরা থেকে সরাসরি সড়ক পথে গিয়ে দেখা যায় বনের দৃশ্য।
সুন্দরবনের ভেতরে কলাগাছিয়া ও কচিখালী স্থানগুলো পর্যটকদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। তবে দেবহাটার রূপসি ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এবং মুন্সিগঞ্জের আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার উল্লেখযোগ্য স্থান। এই মিনি সুন্দরবন সীমান্তের ইছামতি নদীর তীরে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য চমৎকার একটি স্থান। আর আকাশলীনা ইকো ট্যুরিজম সেন্টার সুন্দরবন সংলগ্ন এই কেন্দ্রে মাছের জাদুঘরসহ বিভিন্ন আকর্ষণ রয়েছে। এছাড়াও যশোরেশ্বরী কালীমন্দির ও নলতা শরীফ এর মতো ধর্মীয় এবং ঐতিহাসিক নিদর্শনও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।
সাতক্ষীরার পর্যটন শিল্পের প্রধানভিত্তি হলো সুন্দরবন কেন্দ্রিক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহাসিক স্থাপনা। কিন্তু নানা কারণে সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জে পর্যটক কমেছে।
সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত একাধিক ব্যক্তি জানান, সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের বেহাল দশা, সুন্দরবনের প্রবেশ মূল্য বৃদ্ধি এবং রাত্রিকালিন অবস্থানের পাশ না দেওয়ার কারণে পর্যটক দিন দিন কমে যাচ্ছে। এতে পর্যটনের উপর নির্ভরশীল উপকূলীয় এলাকার মানুষের জীবন-জীবীকায়ও ভাটা পড়েছে। যদিও বন বিভাগ বলছে, অনলাইনে সুন্দরবনে প্রবেশের ফি প্রদান করে রিসিট জমা দিলে সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকেই রাত্রিকালীন অবস্থানের পাশ দেওয়া সম্ভব।
শ্যামনগর এলাকার বাসিন্দা আইয়ুব হোসেন জানান, আমাদের এই অঞ্চলের মানুষ সুন্দরবনের উপর অনেকটা নির্ভরশীল। তারা পর্যটন খাতেই বেশি আয় করে থাকেন। কিন্তু রাস্তাঘাট সংস্কারের অভাব ও টুরিস্ট বোর্ডের ভাড়া বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন কারণে আমাদের এই অঞ্চলে পর্যটক কমে গেছে। তবে পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে হলে আগে সাতক্ষীরা থেকে মুন্সীগঞ্জ পর্যন্ত সড়কটি সংস্কার করা খুবই জরুরি। সুন্দরবনে ২-৩ দিন বা রাত্রিকালীন অবস্থানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিলে রেঞ্জ অফিসের সে ক্ষমতা না থাকায় পর্যটকদের এ অঞ্চলে আসার আগ্রহ অনেক কমে গেছে। মূলত রাত্রিকালীন পাশ আনতে খুলনায় যেতে হয়, এটা পর্যটকদের কাছে একটা বিড়ম্বনা। রাত্রিকালীন পাশ পারমিট চালু হলে এই অঞ্চলে পর্যটক অনেক বাড়বে।
স্থানীয় সংবাদকর্মী অনাথ মন্ডল বলেন, “বাংলাদেশের একমাত্র জেলা সাতক্ষীরা যেখান থেকে সড়কপথে সুন্দরবন উপভোগ করা সম্ভব। কিন্তু সাতক্ষীরা থেকে মুন্সিগঞ্জের প্রধান সড়কটির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক ও জরাজীর্ণ। বর্তমানে ঢাকা থেকে সাতক্ষীরায় আসতে সাড়ে চার ঘণ্টা সময় লাগে। আর সাতক্ষীরা থেকে মুন্সীগঞ্জ ধআসতে সময় লাগে চার ঘণ্টা। যেমন সড়কের অবস্থা, তেমনি এ সড়কের পরিবহণ ব্যবস্থা। দ্রুত সড়কটি সংস্কার করে চার লেনে প্রশস্ত করা হলে এবং সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কেজশশসরাসরি পর্যটকবাহী বাস চলাচলের উদ্যোগ নিলে পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে পারে।
সাতক্ষীরার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহ্যকে কাজে লাগিয়ে পরিকল্পিতভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রচারণার মাধ্যমে পর্যটন শিল্পকে আরও বিকশিত করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।ঢযধ
সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) ফজলুল হক বলেন, পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে গেলে অবশ্যই সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের উন্নয়ন করতে হবে। আর সুন্দরবনের প্রবেশ ফি বাড়ানো কমানোর বিষয়টি সরকারের। তবে গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে রাত্রিকালীন পাশের জন্য অনলাইনে টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে। পেমেন্ট স্লিপ দেখালেই পাশ দেওয়া যাবে।