পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি : অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করার জের ধরে খুলনার পাইকগাছায় সাংবাদিক শাহজামান বাদশাকে প্রকাশ্যে লাঞ্ছিত ও হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আয়শা ফুড অ্যান্ড বেকারির মালিক মিনারুল ইসলাম সানার বিরুদ্ধে। ঘটনাটি ঘটে সোমবার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে পৌরসভার শিববাটি ব্রীজ সংলগ্ন প্রধান সড়কে। এ ঘটনায় থানায় জিডি হলেও ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হওয়ার পরও অভিযুক্ত মিনারুল প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এতে সাংবাদিক সমাজ ও স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেদিন সকালে মোটরসাইকেলে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন দৈনিক স্বাধীনমতের উপজেলা প্রতিনিধি শাহজামান বাদশা। এ সময় আয়শা ফুডের মালিক মিনারুল ইসলাম তার পথরোধ করে গাড়ি থেকে নামিয়ে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন। সাংবাদিক বাদশা ঘটনাটি মোবাইলে ধারণ করতে চাইলে তার ফোন ছিনিয়ে রাস্তায় আছড়ে ফেলা হয়।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক শাহজামান বাদশা বলেন,
“কিছুদিন আগে আমি আয়শা ফুড অ্যান্ড বেকারির অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদন নিয়ে প্রতিবেদন করি। এর পর থেকেই মালিক মিনারুল ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সেই সংবাদ প্রকাশের জের ধরেই আমাকে প্রকাশ্যে হামলা চালিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি শুধু আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, সাংবাদিকতার স্বাধীনতাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।”
স্থানীয় সূত্র জানায়, মিনারুল ইসলাম একসময় স্থানীয় আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তিনি এনসিপি’র যুগ্ম সমন্বয়কারী পদ দখল করেন। নানা সময় টাকার বিনিময়ে বিভিন্ন প্রভাবশালী মহলকে ম্যানেজ করে অবৈধভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য চালিয়ে আসছেন তিনি।
অভিযোগ রয়েছে, মিনারুলের বেকারির কোনো বৈধ লাইসেন্স নেই। নেই বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর অনুমোদন। তবুও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্য উৎপাদন ও বিক্রির মাধ্যমে বিপুল অর্থ উপার্জন করে কোটিপতি বনে গেছেন তিনি। স্থানীয়রা বলেন, বাজার ও দোকানে প্রায়ই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হলেও মিনারুলের প্রতিষ্ঠানে কোনো অভিযান চালানো হয় না। ফলে তার বিরুদ্ধে কেউ সহজে মুখ খুলতে সাহস পান না।
কিছুদিন আগে পাইকগাছা থানা পুলিশ তাকে আটক করলেও রহস্যজনক কারণে ছেড়ে দেওয়া হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে তিনি ছাড়া পান।
এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে স্থানীয় সাংবাদিক সমাজ একত্রিত হয়ে নিন্দা জানায়। তারা বলেন—
“সাংবাদিকরা জনস্বার্থে কাজ করেন। তাদের ওপর হামলা মানে সংবাদপত্রের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা। এ ধরনের ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে মাঠপর্যায়ে সংবাদ সংগ্রহ আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে।”
তারা অবিলম্বে মিনারুলের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
পাইকগাছা থানায় সাংবাদিক বাদশার পক্ষ থেকে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কোনো অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
বাংলাদেশে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলা ও হুমকির ঘটনা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এবং বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের তথ্য অনুযায়ী, অনুসন্ধানী বা সমালোচনামূলক প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাংবাদিকরা প্রায়ই প্রভাবশালী মহলের টার্গেটে পরিণত হচ্ছেন। পাইকগাছার এ ঘটনাও সেই ধারাবাহিকতার অংশ।
ঘটনার পর স্থানীয় জনগণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে সাংবাদিক শাহজামান বাদশার পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। তাদের বক্তব্য—
“একজন সাংবাদিকের ওপর হামলা মানে গোটা সমাজের কণ্ঠরোধ করা। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষা করা সমাজের সবার দায়িত্ব।”
পাইকগাছায় সাংবাদিক শাহজামান বাদশার ওপর হামলার ঘটনাটি আবারও প্রমাণ করেছে, মাঠপর্যায়ে সাংবাদিকতার পরিবেশ এখনো নিরাপদ নয়। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে গণতন্ত্রের অন্যতম স্তম্ভ সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বারবার হুমকির মুখে পড়বে।