দাকোপ (খুলনা) প্রতিনিধি : খুলনার উপকূলীয় দাকোপের বটবুনিয়া এলাকায় প্রায় ১৫০ ফুট ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙে ঢাকি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্ল-াবিত হলে গত দুইদিনে বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়নি। ফলে পানির নীচে তলিয়ে রয়েছে প্রায় তিন হাজার হেক্টর রোপা আমন ধানের ক্ষেত। ৪০ থেকে ৪৫টি কাঁচা পাকা ঘর বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। পানি বন্ধি হয়ে পড়েছে প্রায় হাজারো পরিবার। ভেসে গেছে অসংখ্য পুকুরের মাছ। এতে কয়েক লক্ষ টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। পাউবো ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উদ্যোগে ভাঙন কবলিত স্থানে বাঁধ পুনঃ নির্মানের চেষ্টা অব্যহত রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় খুলনা জেলা প্রশাসক মোঃ তৌফিকুর রহমান এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আসমত হোসেন, জেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নজরুল ইসলাম ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছেন। এসময়ে ভাঙনে ১৫০ জন ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে ত্রান সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
এলাকাবাসি সূত্রে জানা গেছে, চলতি অমাবস্যার গোনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৩১ নম্বর পোল্ডারের তিলডাঙ্গা ইউনিয়নের বটবুনিয়া বাজারের পশ্চিম পাশে হরিসভা মন্দির সংলগ্ন এলাকায় ঢাকি নদীর জোয়ারের অতিরিক্ত পানির চাপে মঙ্গলবার দিন গত রাত ১২টার দিকে পাউবোর প্রায় ১৫০ ফুট ঝুঁকিপূর্ণ ওয়াপদা বেড়িবাঁধ ভেঙে ঢাকি নদী গর্ভে বিলীন হয়। সকালে ভাটায় জিও টিউবে বালি ভরে বাঁধ আটকানো চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ব্যর্থ হওয়ায় দুপুরের জোয়ারে আবার এলাকায় পানি ঢুেক পড়ে। এতে উত্তর কামিনীবাসিয়া, বটবুনিয়া, নিশানখালী ও আড়াখালী এলাকার অনেক ঘরবাড়ি, মৎস্য ঘের, পুকুর ও তিন হাজার বিঘা জমির আমন ফসলের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে এলাকার অনেক লোকজন সেচ্ছাশ্রমে দিন রাত পরিশ্রম করে বাঁধ পুনঃ নির্মানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অতি দ্রুত বাঁধ আটকাতে না পারলে আমন ফসলসহ জনসাধারণ ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। জানা গেছে, আগে দাকোপের ৩২ ও ৩৩ নম্বর পোল্ডারে বিশ্বব্যাংকের ঋণে প্রায় ১৫০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি এটি বাস্তবায়ন করেছে। এ ছাড়া ৩১ নম্বর পোল্ডারে জাইকার অর্থায়নে প্রায় ১৬৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ হাজার ৭৫০ মিটার স্থায়ী নদী শাসনের কাজ চলমান রয়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভার মধ্যে ৩১ নম্বর পোল্ডারের আওতায় পানখালী ও তিলডাঙ্গা ইউনিয়ন এবং চালনা পৌরসভা। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ প্রকল্পের কাজের ধীরগতিতে নদী ভাঙন সংকট আরো তীব্র হচ্ছে। এতে প্রশাসনেরও কোনো তদারকি নেই।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ বটবুনিয়া এলাকার প্রকাশ বালা, সনজিত বালাসহ আরো অনেকে অভিযোগ করে বলেন, ভাঙন কবলিত স্থানটি বেশ আগে থেকে বেড়িবাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ ছিলো। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা গুরুত্ব না দেওয়ায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙনে আমাদের ঘর বাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। এখন পরিবার পরিজন নিয়ে খোলা আকাশের নীচে অর্ধাহারে অনাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে।
তিলডাঙ্গা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জালাল উদ্দিন গাজি জানান, ঢাকি নদীর জোয়ারে অতিরিক্ত পানির চাপে বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়নি। দ্রুত বাঁধ আটকাতে না পারলে দক্ষিণ কামিনীবাসিয়া, ভাদলা বুনিয়া, মশামারী, গড়খালী ও কাকড়া বুনিয়াসহ প্রায় গোটা ইউনিয়ন প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না হওয়ায় প্রায়ই নদী ভাঙনের কারণে এলাকার লোকজন ক্ষতির মুখে পড়ছেন।
এব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল আলম জানান, এখন নদীতে উচ্চ জোয়ার চলছে। পানির অতিরিক্ত চাপের কারণে রাতে বাঁধ আটকানো সম্ভব হয়নি। সকল প্রকার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। নদীতে ভাটার সময়ে বাঁধ আটকানোর চেষ্টা করবো। চলমান প্রকল্পের কাজে ধীরগতি সম্পর্কে জানান নদী শাসনের কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু ভাঙন কবলিত স্থান নদী শাসন প্রকল্পের মধ্যে নেই। এ ছাড়া পাশ দিয়ে রিং বেড়িবাঁধ দেওয়ার জন্য কেউ জায়গা দিতে চায়নি বলে আমরা বাঁধ মেরামত পুরোপুরি ভাবে করতে পারেনি।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ আসমত হোসেন বলেন, জেলা প্রশাসকসহ ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেছি। অতি দ্রুত বেড়িবাঁধ যাতে মেরামত করা যায় সে লক্ষে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। এ ছাড়া উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থ ১৫০টি পরিবারের মাঝে ত্রান সামগ্রী হিসাবে শুকনো চিড়া, গুড়, চাল, ডাল, তেলসহ অন্যান্য সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। এর আগের দিনও ৪০টি পরিবারকে দেওয়া হয়।