1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
রবিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৬:৩০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সাতলায় লাল শাপলা ধংশের মুলে, বিলে মাছের চাষাবাদ মোংলা সরকারি কলেজ ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে ক্ষোভ, ১৫ নেতাকর্মীর পদত্যাগ ফকিরহাটে পুকুরের পানিতে ডুবে নারীর মৃত্যু নগরীতে অনিবন্ধনকৃত ইজিবাইক আটক অভিযান শুরু নড়াইলে অজ্ঞাত ব্যক্তির কঙ্কাল উদ্ধার দুইটি বুলেটপ্রুফ গাড়ি কেনার অনুমতি পেল বিএনপি, অস্ত্রের আবেদন প্রক্রিয়াধীন শাহজালালে আগুন: ৩ দিন ননসিডিউল ফ্লাইটে ভ্যাট-ট্যাক্স মওকুফ শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুনের ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ৫ সদস্যের কমিটি উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টির সম্ভাবনা; অন্যত্র আকাশ থাকবে আংশিক মেঘলা ভোমরা ‌স্থলবন্দ ‌,আঞ্চলিক অর্থনীতিতে আসবে বড় পরিবর্তন

সুন্দরবনে ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণে বন বিভাগের উদ্যোগ

  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৪১ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : গাবিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সমুদ্র থেকে ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু করেছে বন বিভাগ।
সুন্দরবনে ভেসে আসা প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণে বন বিভাগের উদ্যোগ।
বন কর্মকর্তারা জানান, সমুদ্রের জোয়ারে ভেসে আসা এসব প্লাস্টিক শুধু বনাঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নষ্ট করছে না, ক্ষতি করছে বনের প্রাণী, পরিবেশের ভারসাম্য ও মানবদেহেরও।

সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “পূর্ব বিভাগে যোগদানের পর বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে দেখি, সমুদ্রতীরবর্তী বনসংলগ্ন স্থানে প্রচুর প্লাস্টিক বর্জ্য জমে আছে। এরপর থেকেই সুন্দরবনকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখার উদ্যোগ নিই।”

তিনি আরও জানান, প্রতি মাসের প্রথম তিন দিনের যেকোনো একদিন বনরক্ষীরা বনের বিভিন্ন এলাকায় প্লাস্টিক বর্জ্য অপসারণের কাজ করবে। প্রয়োজনে শ্রমিক নিয়োগের নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। ইতিমধ্যে সুন্দরবনের ডিমের চর ও কচিখালী বীচ এলাকায় বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

রেজাউল করিম বলেন, “সংগ্রহ করা বর্জ্য খুলনায় নিয়ে পুনর্ব্যবহারের (রিসাইকেল) ব্যবস্থা করা হবে। এতে একদিকে বন পরিচ্ছন্ন থাকবে, অন্যদিকে পরিবেশও সুরক্ষিত থাকবে। আমাদের এই কার্যক্রম নিয়মিত ও অব্যাহত থাকবে।

বন বিভাগ জানায়, সুন্দরবনকে প্লাস্টিকমুক্ত রাখতে স্থানীয় জনগণ, পরিবেশবাদী সংগঠন ও পর্যটকদের সহযোগিতা অপরিহার্য। সচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়মিত মনিটরিংয়ের মাধ্যমে এই বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী বনকে দূষণমুক্ত রাখার প্রচেষ্টা চলবে।

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কাজ করা বেসরকারি সংস্থা ‘সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশন’-এর চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, “প্লাস্টিক বর্জ্য মানবদেহের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি এটি সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্যের জন্যও মারাত্মক হুমকি। এসব বর্জ্য মাছের শরীরে প্রবেশ করলে এবং সেই মাছ মানুষ খেলে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়।”

তিনি আরও বলেন, “সামুদ্রিক জাহাজগুলো থেকে বিপুল পরিমাণে বর্জ্য ফেলার ফলে তা সমুদ্রপথে ভেসে সুন্দরবন ও উপকূলীয় এলাকায় পৌঁছায়। এতে জলজ প্রাণী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই জাহাজের বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় কঠোর মনিটরিং ও পর্যটকবাহী নৌযানে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে।”
কয়েক দশক ধরে বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের প্রাণীদের আবাসস্থল ও জীববৈচিত্র্য উভয়ের জন্যই প্লাস্টিক দূষণ মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী বলেন, খুলনা ও সুন্দরবনের কাছাকাছি অন্যান্য অঞ্চলে ব্যবহৃত ওয়ান টাইম প্লাস্টিক এখন এই বনেও প্রবেশ করেছে।
এছাড়াও, বনটির কাছে ভৈরব নদীর তীরে প্রায়শই প্লাস্টিকের বোতল ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, উপকূলীয় অঞ্চলে মাছের মাধ্যমে এই প্লাস্টিক খাদ্যশৃঙ্খলে প্রবেশ করছে- যা তাদের প্রজনন প্রক্রিয়া ও বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করছে। এছাড়া এই প্লাস্টিক দূষণ অন্যান্য জলজ প্রাণীর ওপর প্রভাব ফেলছে।
এই ওয়ান টাইম প্লাস্টিক সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি করেছে।
অধ্যাপক চৌধুরী বলেন, ‘প্লাস্টিকের কারণে সৃষ্ট দূষণের ভয়াবহতা- খালি চোখে যা দেখতে পাওয়া যায় তার চেয়েও বেশি। বন্যপ্রাণীরা প্রায়শই এই প্লাস্টিকগুলো খেয়ে ফেলে।’
ম্যানগ্রোভ বনভূমি উপকূলরেখাকে ক্ষয় ও নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে থেকে রক্ষা করে এবং দূষণকারী পদার্থ পরিশোধন করে পানির গুণমান উন্নত করে। এছাড়াও এই বনভূমি অনেক সামুদ্রিক প্রাণীর জন্য নার্সারি হিসেবে কাজ করে।
প্রতি বছর এই বনের গাছের পাতা, কাণ্ড, শিকড় ও মাটিতে লাখ লাখ টন কার্বন জমা হয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াই করতে অবদান রেখে যাচ্ছে।
বঙ্গোপসাগরের তীরে গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর ব-দ্বীপে অবস্থিত সুন্দরবন বাংলাদেশের উপকূলীয় সম্প্রদায়গুলোকে বর্ষা মৌসুমে ঘন ঘন আঘাত হানা ঘূর্ণিঝড় থেকে রক্ষা করতেও সাহায্য করে।
অধ্যাপক হারুন চৌধুরী বলেন,‘সুন্দরবন ও উপকূলীয় অঞ্চলগুলো এখন প্লাস্টিকে ঢাকা। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর।’
গবেষণার বেশিরভাগ ফলাফল উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের তিনটি প্রধান নদীতে কমপক্ষে ১৭ প্রজাতির মাছ ও তিন ধরণের শেলফিশ মাইক্রোপ্লাস্টিক দ্বারা সংক্রমিত।
এই ধরনের সমস্যা সমাধানের জন্য অধ্যাপক চৌধুরী টেকসই অনুশীলন প্রচারের জন্য দায়িত্বশীল পর্যটন ও ট্যুর অপারেটরদের সঙ্গে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহারকে (রিসাইক্লিং) উৎসাহিত করে ধীরে ধীরে এর ব্যবহার সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে একটি বৃত্তাকার অর্থনীতি গ্রহণের গুরুত্বের উপর জোর দেন।
তিনি পরিবেশবান্ধব উন্নয়নকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব সবুজের বৃদ্ধির জন্য একটি কৌশল-পরিকল্পনার কথাও উল্লেখ করেন।
অধ্যাপক হারুন চৌধুরী বলেন, ‘প্লাস্টিক ব্যবহার কমাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুশিক্ষিত করে গড়ে তোলা গুরুত্বপূর্ণ।’
খুলনার সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাসানুর রহমান এই প্রতিবেদককে‍বলেন, তারা সমস্ত ট্যুর অপারেটরদের জানিয়েছেন যে, সুন্দরবনে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
তিনি বলেন, প্লাস্টিক শহরের নদী ও খাল দিয়ে সুন্দরবনে প্রবেশ করছে। এটা বন্ধ করাই এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ।
এ জেড এম হাসানুর রহমান এই প্রতিবেদককে ‌বলেন, ‘আমরা শহর এলাকায় প্লাস্টিকের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আরও সক্রিয় হওয়া উচিত।’
দায়িত্বজ্ঞানহীন পর্যটক আচরণের কারণে সৃষ্ট প্লাস্টিক দূষণ সুন্দরবনের প্রাণীদের বাসস্থানের বিপর্যয় ডেকে আনছে। তিনি পর্যটকদের ফেলে দেওয়া প্লাস্টিক বর্জ্যের ক্ষতিকারক প্রভাব তুলে ধরেন- যা অবশেষে মাইক্রো-প্লাস্টিকে ভেঙে যায়।
এই বন কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘এই প্রক্রিয়া বনভূমির উর্বরতা হ্রাস করে ও বীজ অঙ্কুরোদগমকে বাধাগ্রস্ত করে।’
বন ও নদী বাস্তুতন্ত্রের ওপর প্লাস্টিকের ধ্বংসাত্মক প্রভাবের চিত্র তুলে ধরে নুরুল করিম সুন্দরবনে প্লাস্টিক দূষণের প্রধান কারণ হিসেবে ট্রলার-ভিত্তিক ট্যুর অপারেটরদের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের অত্যধিক ব্যবহারের জন্য তিনি এদের দায়ী করেন।
উজানের নদী ও পার্শ্ববর্তী এলাকা থেকে প্লাস্টিক উপসাগরে প্রবেশ করে এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বর্জ্যের সাথে উপকূলীয় ভূমিকে শ্বাসরোধ করে।
বঙ্গোপসাগরের সমুদ্র ও উপকূলীয় অঞ্চলে প্লাস্টিক জমা কমানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এর জন্য সমন্বিত, বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
সুন্দরবন বাংলাদেশের উপকূলরেখা বরাবর বিস্তৃত। এটা বেঙ্গল টাইগার ও ইরাবতী ডলফিনসহ বিশ্বের কিছু বিরল প্রাণীর আবাসস্থল।
সুন্দরবনে অসংখ্য জলজ প্রাণী রয়েছে- যার মধ্যে রয়েছে ২১০ প্রজাতির সাদা মাছ, ২৬ প্রজাতির চিংড়ি, ১৩ প্রজাতির কাঁকড়া ও ৪২ প্রজাতির শামুক অন্যতম। প্রায় ৩০ লক্ষ মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য এগুলোর উপর নির্ভরশীল।
বনটি বড় ধরনের বন্য প্রাণী- বিশেষ করে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, লবণাক্ত পানির কুমির, হরিণ, বানর, শূকর, সাপ, সরীসৃপ ও অন্যান্য স্তন্যপায়ী প্রাণী দ্বারা সমৃদ্ধ। এছাড়াও, বনে অসংখ্য প্রজাতির পাখি রয়েছে।
প্লাস্টিক ও পলিথিনের দূষণ থেকে সুন্দরবনের এই জীববৈচিত্র্যের সংরক্ষণের জরুরি প্রয়োজন।
বন সংলগ্ন বসবাসকারী মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে বনের জীববৈচিত্র্য এবং প্রাণীদের আবাস্থল রক্ষার জন্য ৫৩০ জনেরও বেশি যুবক ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।
খুলনা-ভিত্তিক উন্নয়ন সংস্থা রূপান্তরের উদ্যোগে একটি প্রকল্পের আওতায় তরুণদের সংগঠিত ও ক্ষমতায়ন করে নারী-পুরুষ উভয়ের সমন্বয়ে একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে।
নুরুল করিম বলেন, ‘সুন্দরবনের দূষণ হ্রাস, পরিবেশের উন্নতি এবং বাংলাদেশে ম্যানগ্রোভ বন ও তাদের প্রভাব অঞ্চল’- শীর্ষক প্রকল্পটি খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, বরগুনা ও পিরোজপুর জেলার ১৭টি উপজেলায় বাস্তবায়িত হচ্ছে।
এই প্রকল্পটি সরকারের তিনটি ‘আর’ (রিডিউস, রিইউজ, ও রিসাইকেল) বাস্তবায়ন কৌশলের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে। সামগ্রিকভাবে এটি প্লাস্টিক দূষণের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি সম্পর্কিত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জনে অবদান রাখবে।
বাসসের সাথে আলাপকালে রূপান্তরের নির্বাহী পরিচালক স্বপন কুমার গুহ বলেন, তরুণরা প্লাস্টিক বর্জ্য ও দূষণ প্রতিরোধের পাশাপাশি এর মাটি ও পানিকে আরও অবক্ষয় থেকে রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট