বিশেষ প্রতিনিধি : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সাতক্ষীরাজুড়ে তৈরি হয়েছে এক ধরনের অনিশ্চয়তা ও নীরব উত্তেজনা। নির্বাচন কমিশন ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে, প্রার্থীরা কেউ কেউ শুরু করেছেন সীমিত প্রচারণা, কিন্তু মাঠপর্যায়ে ভোটের উৎসবের আমেজ এখনও অনুপস্থিত। সাধারণ মানুষ বলছেন, “ভোট হবে তো? হলে কেমন ভোট হবে?”
রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান, প্রার্থীদের সক্রিয়তা ও নির্বাচনী মাঠে সাধারণ জনগণের নীরবতা সব মিলিয়ে তৈরি হয়েছে এক অদৃশ্য অনিশ্চয়তার পরিবেশ।
গ্রাম থেকে শহর-চায়ের দোকান, বাজার কিংবা অফিসপাড়া সর্বত্রই চলছে ভোট নিয়ে গুঞ্জন ও কৌতূহল। অনেকে বলছেন, “আগের মতো তো কিছুই হচ্ছে না।” আবার কেউ কেউ মনে করছেন, “নির্বাচন হোক, কিন্তু সেটা যেন হয় অংশগ্রহণমূলক ও নিরপেক্ষ।”
জনগণের এই প্রত্যাশা যেন একটাই-ভোট হোক সবার, ভয় নয়; গণতন্ত্র ফিরুক আস্থায়, প্রতিযোগিতায় আর মানুষের ভোটাধিকারেই ফুটুক দেশের ভবিষ্যৎ।
শহরের কাটিয়া এলাকার ব্যবসায়ী রেজাউল করিম মিঠুন বলেন, “আগের নির্বাচনে অন্তত কিছু তোড়জোড় ছিল, এবার সেই আমেজই নেই। মানুষ ভোট নিয়ে কথা বলতে ভয় পায়, আবার অনেকে আগ্রহও হারিয়ে ফেলেছে।”
কলেজছাত্রী সুমী আক্তার বলেন, “আমরা প্রথমবার ভোট দিতে পারবো, কিন্তু সবাই বলছে ভোটে নাকি কিছুই হয় না। তবুও আশা করি, সুষ্ঠু ভোট হলে আমরাও গর্ব করে ভোট দিতে পারবো।”
শ্যামনগর থেকে আসা কৃষক আব্দুল গফ্ফার গাজী বলেন, “আমরা মাঠে কাজ করি, খবর তেমন পাই না। কেউ বলে ভোট হবে, কেউ বলে হবে না। কিন্তু আমরা চাই শান্তিতে ভোট দিতে, যাকে ভালো লাগে তাকেই ভোট দিতে।”
প্রভাষক সিরাজুল ইসলাম মনে করেন, ভোটের মাঠে মানুষের আস্থা ফেরানোই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। তিনি বলেন, “মানুষের মনে ভয় আছে, আগের মতো নিরাপত্তা থাকবে তো? ভোট দিতে গিয়ে কোনো বিপদে পড়তে হবে না তো? এই আশঙ্কা দূর না হলে ভোটের প্রতি আগ্রহ কমবেই।”
তরুণ উদ্যোক্তা আরিফুল ইসলাম বলেন, “ভোট মানে এখন অনেকে মনে করে আনুষ্ঠানিকতা। তবে আমি বিশ্বাস করি, যদি প্রশাসন নিরপেক্ষ থাকে এবং সব দল অংশ নেয়, তাহলে মানুষ আবার ভোটে ফিরবে।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সাতক্ষীরার মতো রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ জেলায় ভোটের পরিবেশ সৃষ্টি করা অত্যন্ত জরুরি। তারা মনে করেন, সাধারণ মানুষ এখন অপেক্ষায় আছে সব দলের অংশগ্রহণে একটা প্রতিযোগিতামূলক, নির্ভেজাল নির্বাচন দেখার জন্য।
নির্বাচন কমিশনের স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তারা শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু ভোট আয়োজনের সব প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে মাঠপর্যায়ে ভোটারদের উদাসীনতা এখনো কাটেনি।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা শাহাবুদ্দিন খন্দকার বলেন, “ভোট মানে জনগণের অধিকার, কিন্তু সেই অধিকার নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। সবাই চায় নির্বাচন হোক, তবে সেটা যেন বিশ্বাসযোগ্য হয়।”
সাতক্ষীরার বিভিন্ন বাজার, চায়ের স্টল, রাজনৈতিক আড্ডা সব জায়গায় এখন আলোচনা একটাইÑএবার ভোট কেমন হবে?
সাধারণ মানুষ বলছেন, তারা সংঘাত নয়, চায় শান্তিপূর্ণ ভোট। কেউ চায় না রক্তপাত বা সহিংসতা। সবাই চায় একটাই জিনিস নিজের ভোটের অধিকার প্রয়োগের সুযোগ।
সাতক্ষীরার প্রশাসনিক সূত্র জানিয়েছে, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। সংরক্ষিত ভোটকেন্দ্র, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা ও অতীতের সংঘাতপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে মোতায়েন করা হবে অতিরিক্ত পুলিশ ও বিজিবি সদস্য।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, “আমরা চাই, ভোট যেন উৎসবমূখর হয়, আতঙ্ক নয়। প্রশাসন সম্পূর্ণ প্রস্তুত আছে, যাতে জনগণ নির্ভয়ে ভোট দিতে পারে।”
সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ মনিরুল ইসলাম বলেন, “আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা ইতোমধ্যে আমাদের পুলিশ বাহিনীকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে প্রস্তুত করেছি এবং কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেদিকে সাতক্ষীরা জেলা পুলিশ সর্বদা সচেষ্ট।”
ভোটারদের প্রত্যাশা, নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক, নিরপেক্ষ ও সবার জন্য নিরাপদ। তারা চায়, নির্বাচনী মাঠে ফিরে আসুক পুরনো সেই আমেজ যেখানে ভোট ছিল উৎসব, আর জনগণের সিদ্ধান্তই ছিল চূড়ান্ত কথা।