1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৫ পূর্বাহ্ন

ডুমুরিয়ায় অবৈধ ভাবে নদীর মাটি কাটায় ইট ভাটার মালিককে জরিমানা

  • প্রকাশিত: বুধবার, ৫ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৮ বার পড়া হয়েছে

ডুমুরিয়া প্রতিনিধি : বুধবার সকাল ১১টা ৪৫মিনিটের সময় ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়নের শৈলগাতিয়া ব্রিজ নিকটে মোবাইল কোর্ট বসিয়ে স্টোন ব্রিজ ইট ভাটার মালিককে অবৈধ ভাবে নদীর মাটি কর্তণ করার অপরাধে ১,০০,০০০/- টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং সরকারী রাস্তা দখল করে ঘর নির্মাণ করায় অবৈধ উচ্ছেদ করেন ডুমুরিয়া উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি অমিত কুমার বিশ্বাস,
এসময় উপস্থিত ছিলেন ডুমুরিয়া উপজেলা ভাটা মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ শাহজাহান জমাদার,
ইট ভাটার মানিক মোঃ আজিজুর রহমান, উপজেলা ভূমি অফিসের নাজির ‌কিরণ বালা, অফিস সহকারী শামীম আহমেদ, ও ডুমুরিয়া থানার পুলিশ উপস্থিত ছিলেন।।
উল্লেখ্য ডুমুরিয়া উপজেলার কয়েকটি অবৈধ ইটভাটা আছে, সেসব উচ্ছেদে অভিযান চালায় পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রতিবছরই কমবেশি এ রকম অভিযান চলে এ বছরও এর ব্যতিক্রম হয়নি। যে এলাকায় যেদিন অভিযান শেষ করে তারা চলে যায়, তার পরপরই অথবা দু-একদিন পরই ওইসব ইটভাটা আগের মতোই আবার বহাল তবিয়তে কার্যক্রম শুরু করে। সরকারি এ অভিযানে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কোনো কোনো ইটভাটায় ফায়ার সার্ভিস পানি ঢেলে ভাটার আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। আবার কোথাও কোথাও ইটভাটার চিমনি ও বাউন্ডারি ক্লিন বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ অভিযান চালাতে সরকারের কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হয় এবং অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে এতে অংশগ্রহণ করতে হয়। এর ফলে প্রতিদিন যেসব শ্রমিক ইটভাটায় দৈনন্দিন পরিশ্রম করে ন্যূনতম পারিশ্রমিক নিয়ে সংসার চালায়, তাদের সেদিনের সেই আয় বন্ধ হয়ে যায়।
প্রশ্ন হলো, এসব অভিযান চালিয়ে বাস্তবিক অর্থে কোন্ পক্ষ লাভবান হয়-সরকারপক্ষ, নাকি অবৈধ ইটভাটার মালিকপক্ষ? এটা নিশ্চিত যে, উভয়পক্ষেরই অনেক আর্থিক ক্ষতি হয়। সরকারি এসব অভিযানে শুধু যে ইটভাটায় উচ্ছেদই চালানো হয় তা নয়; কোনো কোনো বছর অবৈধ ইটভাটা মালিকদের প্রকারভেদে কয়েক হাজার বা লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। আর্থিক জরিমানা অথবা উচ্ছেদ যাই হোক না কেন, সার্বিক অর্থে এ রকম অভিযানের মূল উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য কি ধারাবাহিক রুটিন অনুযায়ী লাখ লাখ টাকা ও জনবল ব্যয় করে শুধুই অভিযান চালিয়ে যাওয়া, নাকি প্রকৃত অর্থেই লাইসেন্সবিহীন অবৈধ ইটভাটার মাধ্যমে পরিবেশের যে মারাত্মক ও ব্যাপক ক্ষতি হয়, সেটা বন্ধ করা?
যদি ধরে নেওয়া হয় এটা নিয়মিত ধারাবাহিক অভিযান, তাহলে আলোচনা দীর্ঘায়িত করার দরকার আছে বলে মনে করি না। কিন্তু উদ্দেশ্যটা যদি হয় ইটভাটা দিয়ে পরিবেশের যে মারাত্মক ও ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে সেটা রোধ করা, তাহলে কিছু আলোচনা করা যেতে পারে। দেশের প্রতিটি জেলা, থানা ও ইউনিয়নে কতটি বৈধ ও অবৈধ ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে, তার সঠিক সংখ্যা জানা গেলে যারা পরিবেশবিদ আছেন, যারা পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করেন, তারা হয়তো সহজেই হিসাব কষে বলে দিতে পারবেন ইটভাটাগুলো দিয়ে পরিবেশের কতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর আইনে পরিষ্কার বলা আছে কোনো ব্যক্তি যদি অবৈধ ইটভাটা পরিচালনা করে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া, তাহলে তাদের কী কী দণ্ড ও জরিমানা দিতে হবে। পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিবেশনীতি ও আইনে দেখা যায়-ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) (সংশোধন) আইন, ২০১৯-এর ধারা ৪-এ উল্লেখ আছে, জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে লাইসেন্স গ্রহণ ছাড়া কোনো ব্যক্তি ইটভাটা স্থাপন ও ইট প্রস্তুত করতে পারবে না। ধারা ১৪-তে উল্লেখ করা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যদি ধারা ৪ বা ৪ক লঙ্ঘন করে ইট প্রস্তুত বা ভাটা স্থাপন, পরিচালনা বা চালু রাখেন, তাহলে তিনি অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ড বা অন্যূন ২০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।
এসব অভিযান দিয়ে সত্যিকার অর্থেই যদি সব অবৈধ ইটভাটা বন্ধ করা যেত, তাহলে পরিবেশের উপকার হতো। কিন্তু আসলে তো সেটা হচ্ছে না। বরং কী হয়েছে সে পরিসংখ্যান যদি বিভিন্ন দিক থেকে উপস্থাপন করা যায়, তাহলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। বিভিন্ন দিক মানে প্রশাসনের দিক, অবৈধ ইটভাটা পরিচালনাকারী ও ইট ক্রয়কারী বা ক্রেতার দিক।
প্রথমে প্রশাসনের দিকগুলো উল্লেখ করছি। ১. এসব অভিযান পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট, পরিবেশ অধিদপ্তর, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার বাহিনী, কোথাও কোথাও র‌্যাব এবং উচ্চপর্যায়ের সরকারি অফিসারদের অংশগ্রহণ থাকতে হয়। ২. সরকারি বড় বড় কর্মকর্তাকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ বন্ধ করে এসব অভিযানে অংশগ্রহণ করতে হয়। ৩. এসব অভিযান চলে মূলত ডুমুরিয়া উপজেলা থেকে অনেক দূর-দূরান্তের গ্রামগুলোতে এবং অভিযানগুলো চলে মূলত শীতকালে, যখন দিনটা মূলত ছোট থাকে। ৪. অভিযান শেষ করে ফিরে আসতে নিশ্চিত সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত হয়ে যায় এবং দুপুরের খাবারেরও ব্যাঘাত ঘটে। দিনভর দূর-দূরান্তের এসব অভিযানে অক্লান্ত পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতার কারণে পরদিন কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ অন্য সদস্যদের ছুটিও নেওয়া লাগতে পারে। ৫. এসব অভিযানে লোকবল, জ্বালানি তেলসহ যানবহন, লাখ লাখ টাকার যন্ত্রপাতি, বুলডোজার, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি ব্যবহার করতে হয় এবং অবশ্যই এসবের একটা আর্থিক মূল্য আছে। সরকারি এ অর্থ সাধারণ জনগণের ভ্যাট, ট্যাক্স বা খেটে খাওয়া মানুষের টাকা। ৬. কোনো কোনো বছর অবৈধ ইটভাটা মালিকদের লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়, যে অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা হয়ে সরকারের কিছু উপার্জন হয়। আবার কোনো কোনো বছর জরিমানা না করে শুধু বুলডোজারের ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়, যা দু-একদিন পরই মালিকরা আবার আগের অবস্থানে ফিরিয়ে এনে তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার যে লাখ লাখ টাকা ও জনবল ব্যয় করে, তা থেকে আসলে অর্জন কী বা কতটুকু? অবৈধ ইটভাটা দিয়ে পরিবেশের যে মারাত্মক ক্ষতি করা হচ্ছে, তা কি অভিযানের মাধ্যমে স্থায়ীভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে; নাকি জ্বালানি হিসাবে যে গাছ কাটা হতো, সে গাছ কাটা স্থায়ীভাবে বন্ধ হচ্ছে?
এবার অবৈধ ইটভাটা মালিকদের নিয়ে কিছু কথা। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র পাক বা না পাক, এসব বৈধ বা অবৈধ ইটভাটা গড়ে তুলতে তাদের একটা বড় অঙ্কের টাকা ব্যয় করতে হয়, যেটা সরকারি অভিযানে ভাঙা পড়ে। শত শত লোক পরিশ্রম করে জীবিকা অর্জন করে ইটভাটাগুলো থেকে। যেদিন সরকারি অভিযান চলে, সেদিন থেকে পরবর্তী বেশ কয়েকদিন কিছু শ্রমিকের কাজ বন্ধ থাকে। কাজ বন্ধ থাকা মানেই উপার্জন বন্ধ আর উপার্জন বন্ধ মানেই শ্রমিকদের বউ-বাচ্চা, ছেলেমেয়েদের নিয়ে না খেয়ে থাকা। বাস্তবে এমন কোনো উদাহরণ নেই যে, সরকারি অভিযান চালানোর পর কোনো ইটভাটা একেবারে বন্ধ হয়ে গেছে; বরং দেখা যায়, অভিযান চালানোর কয়েক দিনের মধ্যেই ইটভাটার মালিকরা আবার আগের অবস্থানে ফিরে গিয়ে তাদের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়। সরকারি অভিযানে ফায়ার সার্ভিস ও বুলডোজার দিয়ে যেখানে ইট পোড়ানো বন্ধ করা হয়, সেখানে ঠিক আগের অবস্থানে ফিরে যেতে ইটভাটা মালিকদের তিন-চারগুণ বেশি জ্বালানি কাঠ ব্যবহার করতে হয়।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট