1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন

সাতক্ষীরা শহরে যানজট ,নিরেশনে উদোর বোঝা বুদোর ঘাড়ে

  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ৭ নভেম্বর, ২০২৫
  • ২৪ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা আমাদের প্রিয় শহর। জেলা সদরের কাজ, কেনাকাটা, আদালত, ব্যাংক, কলেজ, হাসপাতাল সবই এখানে। তাই আশপাশের উপজেলা ও গ্রাম থেকে প্রতিদিন হাজারো মানুষ শহরে প্রবেশ করে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত রাস্তায় চলাচল থেমে থাকে না। কিন্তু যে জিনিসটি এখন সবচেয়ে বেশি কষ্ট দেয় সেটি হলো দুর্বিষহ যানজট।
অফিস গামী মানুষ দেরিতে পৌঁছায়, শিক্ষার্থীরা রাস্তায় কষ্ট পায়, রোগীকে সময়মত হাসপাতালে নেওয়া যায় না, ব্যবসায়ী পণ্য সময়মত ডেলিভারি দেওয়া যায় না। ধুলো-ময়লা, শব্দ, ধোঁয়া সব মিলিয়ে শহরের জীবন মান এখন চরম পর্যায়ে। প্রশ্ন হলো এই যানজটের আসল কারণ কী? প্রশাসনিক কর্তারা বলে থাকেন যানজটের প্রধান কারণ অবৈধ ইজিবাইক, ইঞ্জিন ভ্যান, নসিমন সহ অন্যান্য যানবাহন। কিন্তু আসলে কি তাই? আসলে তা নয়। সাতক্ষীরা শহরে কোনও অবৈধ যানবাহন নাই। শহরের জনসংখ্যা ও চাহিদার প্রেক্ষিতে বর্তমানে শহরে এতো বিপুল সংখ্যক যানবাহন চলাচল করে থাকে। সাতক্ষীরা শহরের যানজটের প্রধান কারণ অপ্রশস্ত সড়ক ও সংকীর্ণ মোড়।
সাতক্ষীরা শহরের মধ্যে এখন আর নির্দিষ্ট কোনও জায়গা নেই, বরং সকল স্থানেই যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে বিশেষ করে পাকাপোলের মোড়, নিউ মার্কেট মোড়, খুলনা রোড মোড়, তুফান কোম্পানি মোড়, বাস টার্মিনাল, ইটাগাছা, দিঘির পাড়, নবারুণ স্কুলের মোড়, পুরাতন সাতক্ষীরা কলেজ মোড়সহ বিভিন্ন জায়গায় যানজট খুবই নিয়মিত। সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত স্কুল-কলেজ আর অফিসের চাপ থাকে এবং বিকেল ৪টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সবার বাড়ি ফেরার চাপ থাকে। এই সময় গুলোতে সাতক্ষীরা শহর রীতিমত অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
এই যানজট দীর্ঘদিন ধরে চলে আসতেছে এবং দিনের পর দিন এটি আরও প্রকট হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু শহরের সবচেয়ে বড় এই সমস্যা আসলে দেখার কেউ নেই। যানজট নিরসনের নামে জেলা প্রশাসক বা পৌরসভা যখনই কোনও মিটিংয়ে বসে তখন শহরের যানজটের কারণ হিসেবে অবৈধ যানবাহনকে দায়ী করেন। যেটি নিছক হাস্যকর ছাড়া কিছুই নয়। সাতক্ষীরা প্রশাসন ও পৌরসভা মিটিংয়ে যানজট নিরসনের নামে যত দোষ নন্দ ঘোষের মতো নিজেদের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা পাশ কাটিয়ে যাবার চেষ্টা করেন। আসলে প্রশাসন তাদের যে দায়িত্ব তারা সেটি বাস্তবায়ন করতে না পেরে অহেতুক যানজটের দোষ গরীব গাড়ি চালকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেন।
একথা কাউকে শিখিয়ে দেয়া লাগে না, সবাই একটু নজর করলেই দেখতে পান সাতক্ষীরা শহরের যানজটের প্রধান কারণ সরু অপ্রশস্ত সড়ক। সাতক্ষীরা শহরের কলেবর বেড়েছে, অবকাঠামো বেড়েছে, জনসংখ্যা বেড়েছে, যানবাহন বেড়েছে কিন্তু সেই সাথে পাল্লা দিয়ে সড়কের প্রশস্ততা বাড়েনি। সাতক্ষীরা পৌরসভার আয়তন প্রায় ৩১ বর্গকিলোমিটার। ২০০ বছরের পুরাতন এই শহরে বর্তমানে স্থায়ীভাবে বসবাস করে প্রায় দেড় থেকে দুই লাখ মানুষ। এছাড়াও প্রতিদিন বিভিন্ন উপজেলা থেকে কয়েক হাজার মানুষ শহরে প্রবেশ করেন বিভিন্ন কাজে। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর যানবাহনের চাপ শহরের সরু সড়ক গুলো আর বইতে পারছে না।
আশির দশকে শহরের জনসংখ্যা ছিল পঞ্চাশ হাজারের মতো, নব্বইয়ের দশকে ছিল আশি হাজারের মতো, আর দুই হাজার সালের পর শহরের জনসংখ্যা খুব দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং বর্তমানে শহরের জনসংখ্যা প্রায় দুই লাখে উন্নীত হয়েছে। এই বিশাল জনগণের চলাচলের জন্য শহরের যানবাহন দিনের পর দিন বৃদ্ধি পেয়েছে। আশির দশক, নব্বইয়ের দশক থেকে ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়ে শহরে এখন হাজারো যানবাহন চলাচল করে। যানবাহনের এই চলাচল খুবই স্বাভাবিক এবং বাস্তব সম্মত। ২০২৫ সালে এসে অবশ্যই শহরের যানবাহন ২০০০ সাল বা ১৯৯০ সালের মতো হবে না। কিন্তু আমাদের প্রশাসন চায়, শহরের জনসংখ্যা ২ লাখ কিন্তু যানবাহন চলাচল করুন ১৯৮০ সালের মতো হাতে গোনা কয়েকটি।
এবার যদি আমরা সড়কের দিকে তাকায় তবে দেখা যায় সাতক্ষীরা শহরের সড়কের প্রশস্ততা বর্তমানে ১০ ফুট থেকে ৩০ ফুটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। আশির দশক, নব্বইয়ের দশক কিংবা আরও আগে পাকিস্তান আমলের সাতক্ষীরার সড়কের প্রশস্ততা যেমন ছিল ২০২৫ সালে এসে এখনও তেমনই আছে। ফলে জনসংখ্যা ও যানবাহনের চাপ সহ্য করার মতো ক্ষমতা এই সব সড়কের এখন আর কোনও ভাবেই নেই। যানবাহনের সংখ্যা বেড়েছে, যানবাহনের প্রশস্ততা ও আকার বেড়েছে কিন্তু শহরের প্রধান মোড় গুলোর প্রশস্ততা বাড়েনি। ফলে শহরের প্রতিটি মোড়ে ভারি যানবাহনকে চলতে ও ঘুরতে অনেক সময় নিতে হয়। সাতক্ষীরা পার্শ্ববর্তী শহর গুলো যখন ছয়-লেন, চার-লেন সড়কের ছড়াছড়ি তখনও সাতক্ষীরার সড়ক গুলো সংকীর্ণ ও অপ্রশস্ত।
সাতক্ষীরা প্রশাসন বা পৌরসভা যখন যানজটের কারণ খুঁজতে যান তখন তারা সব দোষ ইজিবাইক অন্যান্য যানবাহন আর জনগণকে দিয়ে নিজেদের দায় এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু শহরের যানজটের জন্য দায়ী অবশ্যই সাতক্ষীরা প্রশাসন ও পৌরসভা। কারণ তারা সাতক্ষীরা শহরের সড়ক গুলো যুগোপযোগী করতে পারেননি।
যানজট নিরসনে প্রশাসন মাঝে মাঝে অবৈধ যান চলাচলের উপর কঠোর হয়। তারা শহরে নিবন্ধিত যান ছাড়া চলতে দেয় না। যার ফলে মানুষ পড়ে যায় অন্য যন্ত্রণায়। প্রশাসন কঠোর হলে শহরে যান চলাচল কমে গেলে সাধারণ মানুষকে দেখা যায় শহরে পায়ে হেটে চলতে। মোড় মোড়ে মানুষকে দাড়িয়ে থাকতে দেখা যায় যানবাহনের অপেক্ষায়। বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত মানুষদের পক্ষে তখন শহরে পায়ে হেটে তাদের কাজ মেটানো কঠিন হয়ে পড়ে। অনেকে যানবাহন সংকটের কারণে কাঙ্খিত সময়ে তার নির্ধারিত জায়গায় পৌছাতে পারেন না।
সাতক্ষীরা পৌরসভা যানজটের ভয়ে শহরে মাত্র আট শতাধিক যানবাহনের নিবন্ধন দিয়ে রেখেছে, যা বর্তমান শহরের জন্য খুবই অপ্রতুল। বর্তমানে সাতক্ষীরা শহরের জনসংখ্যার উপর ভিত্তি করে অবশ্যই দুই থেকে তিন হাজারের বেশি যানবাহনের নিবন্ধন থাকা জরুরী। যানজট নিরসনের জন্য প্রশাসনের উচিত শহরের সড়ক গুলোকে অবশ্যই রোড ডিভাইডার দিয়ে ফোর লেনে প্রশস্ত করা, কিন্তু তারা সেটি না করে যত দোষ যানবাহন চালকদের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে নিজেদের দোষ ঢাকার চেষ্টা করেন।
সাতক্ষীরা শহরে একসময় অনেক বাই সাইকেল চলতো, এখন বাইসাইকেলের সংখ্যা খুবই কম, সেখানে মটর সাইকেলের সংখ্যা বেড়েছে। সামনের দিন গুলিতে মোটরসাইকেলে সাথে পাল্লা দিয়ে হয়তো প্রাইভেট কারের সংখ্যা বাড়বে, তখন সাতক্ষীরা শহরের যানজটের অবস্থা কী হবে? তখনও প্রশাসন হয়তো রাস্তার দোষ না দিয়ে জনগণকে বলবে রাস্তায় গাড়ি না বের করে পায়ে হেটে চলতে।
শহরের যানজটের আরও একটি অন্যতম কারণ সড়কের মোড় গুলো খুবই সংকীর্ণ। সংকীর্ণ মোড়ের কারণে এবং সড়কে কোনও আইল্যান্ড না থাকায় যে যার মতো চলার কারণে যানজট ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। নিউ মার্কেট মোড়, তুফান কোম্পানি মোড়, খুলনা রোড মোড়, আমতলা মোড়, পাকাপোল মোড়, পুরাতন সাতক্ষীরা কলেজ মোড়, দিঘির পাড়সহ শহরের প্রধান মোড় গুলো প্রশস্ত করা উচিত। প্রধান মোড় গুলো প্রশস্ত করে তার মাঝখানে দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড ও স্থাপনা তৈরি করা উচিত।
খুলনা রোড মোড়ের যেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্য ছিল ওই স্থানটি সড়কের ভিতরে নিয়ে সড়ক প্রশস্ত করে খুলনা রোড মোড়ের মাঝখানে দৃষ্টিনন্দন আইল্যান্ড ও স্থাপনা নির্মাণ করা উচিত। একই সাথে নিউ মার্কেট মোড়, তুফান কোম্পানি মোড়, আমতলা মোড় ও কলেজ মোড়েও অনুরূপ করা উচিত। বিশেষ করে পাকাপোল মোড়টি দ্রুত সম্প্রসারণ করা উচিত। এই মোড়টি আদিকাল থেকেই খুবই সংকীর্ণ এবং সরু। এখানের আশে-পাশের স্থাপনা ভেঙ্গে মোড়টি আইল্যান্ড সহ প্রশস্ত করা উচিত।
সাতক্ষীরা শহরের সড়ক গুলো প্রশস্ত না হওয়ার পিছনে এখানের সাংবাদিক সমাজের রয়েছে অকাট্য মূর্খতা ও দোষ। শহরের যানজটের প্রধান কারণ চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে প্রশাসনের কথার সাথে সুর মিলিয়ে সাংবাদিকরাও যানজটের প্রধান কারণ হিসেবে তারা অবৈধ যানবাহনকে দায়ী করেন। কিন্তু সত্যি বলতে সাতক্ষীরা শহরে কোনও অবৈধ যানবাহন নেই। শহরের জনসংখ্যার চাহিদা ও প্রয়োজনের ভিত্তিতে শহরে এতো যানবাহন চলাচল করে থাকে। শহরে এমন কোনও একটি যানবাহন দেখা যায় না যে, যাত্রী ছাড়াই কোনও যানবাহন খালি একা ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সাংবাদিক সমাজ যদি ভুল তথ্য প্রকাশ না করে সাতক্ষীরা শহরের যানজটের জন্য প্রধান কারণ সড়কের অপ্রশস্ততা ও মোড়ের সংকীর্ণতাকে দায়ী করেন তখন আর প্রশাসন বা পৌরসভা সত্যকে ধামা চাপা দিতে পারে না। সাতক্ষীরার সাংবাদিক সমাজ যদি যানজটের জন্য তাদের রিপোটিংয়ে শহরের সড়ক সম্প্রসারণের কথা বারবার জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে তুলে ধরেন তবে তখনই কেবল শহরের যানজটের কারণ জনসম্মুখে আসবে। নতুবা এই শহর আগামী দিনে বাস করার উপযুক্ত থাকবে না।
পুরো আলোচনা সহজ ভাষায় একটি বাক্যে বললে-সাতক্ষীরা শহরের যানজটের প্রধান কারণ সংকীর্ণ রাস্তা ও সংকীর্ণ মোড়। ইজিবাইক বা ছোট যানবাহন মাঝে মাঝে জ্যাম বাড়াতে পারে, তবে মূল দায় তাদের নয়। রাস্তা যদি যথেষ্ট প্রশস্ত হয়, মোড়ে যদি যথেষ্ট জায়গা থাকে, তাহলে একই সংখ্যক গাড়ি অনেক স্বাভাবিকভাবে চলতে পারে। তাই সমাধান হলো রাস্তা ও মোড় প্রশস্ত করা।
আমরা সবাই চাই আমাদের শহর চলুক স্বস্তিতে। বাচ্চারা সময়মত স্কুলে পৌঁছাক, রোগী সহজে হাসপাতালে যাক, ব্যবসা ঠিক সময়ে চলুক, বাতাস একটু পরিষ্কার থাকুক। এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হবে না যদি আমরা সমস্যার মুল জায়গায় হাত না দেয়। যত দোষ নন্দ ঘোষের ঘাড়ে চাপিয়ে আসলে কোনও লাভ নেই।
সাতক্ষীরার যে সেকল জনপ্রতিনিধি শহরের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও সৌন্দর্য বৃদ্ধির ব্যাপারে আন্তরিক নন, বরং যত দোষ নন্দ ঘোষের ঘাড়ে চাপিয়ে নিজের স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত থাকেন সেই সব জনপ্রতিনিধিকে বিশেষ করে আগামী জাতীয় সংসদ ও পৌরসভা নির্বাচনে সাতক্ষীরা বাসীর উচিত প্রকাশ্যে বর্জন করা। কারণ অযোগ্য ব্যক্তিস্বার্থবাদী এমপি ও মেয়রের কারণে খুলনা বিভাগের প্রথম পৌরসভা সাতক্ষীরা আজও অবহেলিত ও বসবাসের অযোগ্য।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট