সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : ধানদিয়া ইউনিয়নের এনায়েতপুর গ্রামের কৃষক নেয়ামত আলী জানান, তিনি বিঘা প্রতি ২০ মণ ধান পাওয়ার আশা করছেন এবং ভালোই দাম পেয়েছেন, তবে অন্যান্য কৃষকরা লাভ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে অনেকে পাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন এবং ফলনে সন্তুষ্টিও প্রকাশ করেছেন।
তবে কৃষকদের মূল অভিযোগ দাম নিয়ে, যা অসন্তোষের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্তমানে প্রতি মণ ধান ১২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কৃষকদের অভিযোগ, ধানের দাম না বাড়লেও সবকিছুর দাম বেড়েছে, এতে লাভবান হওয়া কঠিন। তাদের মতে, প্রতি বিঘায় খরচ ১২ হাজার থেকে ১৩ হাজার টাকা হলেও ধান ও বিচলি (খড়) বিক্রি করে সেই টাকা উঠছে না।
কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ, নার্সারি উদ্যোক্তা তৈরি হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত জেলার ৪ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। এদিকে, কৃষি বিভাগ বলছে, সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ মৌসুম শুরু হলে দাম কিছুটা বাড়তে পারে। কৃষি কর্মকর্তারা আরও জানান, এ বছর বৃষ্টিপাত ভালো হওয়ায় কৃষকদের সেচ খরচ কম হয়েছে, যদিও কৃষকরা উৎপাদন খরচ বাড়ার কথা বলছেন। জেলায় এ বছর মোট ৮৯ হাজার ১৪৫ হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে, যেখানে ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৬৪ হাজার ৭৬০ মেট্রিক টন। শেষ মুহূর্তে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে কৃষকরা ভালোভাবেই ধান ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করা যাচ্ছে।
কয়েকদিন পূর্বে ও সাতক্ষীরার মাঠ ছিল সবুজের সমারোহের বেড়াজালে। তারপর হলুদাভাব, স্নিগ্ধ হওয়ায় মন মাতানো উদাসী দোলায় মাঠময় ঝিকিরমিকির এক অন্য প্রকৃতি দেখতে দেখতে সবুজ, আর হলুদাভাবের সেই গোছায় গোছা ধান গাছ পাকা ধানে পরিপূর্ণতা পেয়ে বর্তমানে তা কৃষকের ঘরে যেতে চলেছে। পাকা ধান কাটার শুরু হয়েছে মহাউৎসব, এ দৃশ্য সাতক্ষীরার দিগন্ত বিস্তৃ মাঠে। শস্য ভান্ডার সাতক্ষীরার কৃষকরা তাদের স্বপ্ন সাধ পুরনে ব্যস্ত, অবিরাম, ক্লান্তহীন ভাবে কেটে চলেছে আমন ধান। সকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত পুরোদমে চলছে ধানকাটা, গোছানো। মহা ব্যস্ততায় কৃষকরা। কাকডাকা ভোরে আবার কেউ কেউ সকালে গাতার খেয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত ধান কেটেই চলেছে দৃশ্যতঃ সাতক্ষীরার গ্রামীন অর্থনীতিতে আমন ধান নির্ভর অর্থনীতির সুবাতাস বইছে। কৃষক এবং কৃষি কাজের সাথে সংশ্লিষ্টদের পাশাপাশি বিপুল সংখ্যক শ্রমিক ধান কাটা, বাছা, গোছানো এবং মাড়াই করার কাজে নিয়োজিত। উৎপাদনের ঘাটতি নেই, বলা চলে এবার সাতক্ষীরায় আমনের বাম্পার ফলন হয়েছে, কিন্তু ধানের দাম কিছুটা কম এমন হতাশা ময় কথা বললেন কৃষক মমতাজুর রহমান। তিনি জানান বীজ সার কিছুটা কৃষি দপ্তর হতে বিনামূল্যে পাওয়া গেলেও শ্রমিক মজুরী সহ অপরাপর খরচ পরবর্তি খুববেশী লাভবান হওয়ার সুযোগ নেই। বর্তমান সময়ে আমন ধান ওঠা শুরু হওয়ায় ধানের বাজার কিছুটা নিন্মমুখি, কোন কোন এলাকায় বস্তা প্রতি পনেরশত। কৃষকরা ধানের পাশাপাশি বিচুলী বিক্রয়ে অর্থ পাচ্ছে। সাতক্ষীরার বিভিন্ন ধানকাটা মাঠ পরিদর্শনে দেখা গেছে ক্ষেতে মধ্যেই কৃষক আধুনিক পদ্ধতিতে মেশিনের সাহায্যে ধান মাড়াই করে সেখান থেকেই চিক্রি করছে। তবে এমন দৃশ্য খুব কম, অধিকাংশ কৃষক ধান কেটে বাগের সাহায্যে ছাড়াও ভ্যান, ঠেলাগাড়ী সহ বিভিন্ন যানবাহনে বাড়ীতে নিচ্ছে। আমন ধানের সোদা গন্ধে গ্রামের মেঠো পথ হতে শুরু করে কৃষকের বাড়ী পর্যন্ত মৌ মৌ সুসভিত গন্ধে ভরপুর। কৃষকের পাশাপাশি কৃষাণীরাও মহাব্যস্ত সময় অতিক্রম করছে। ধান সিদ্ধ, শুকানো এবং মাড়াই করার জন্য প্রস্তুত করতে কৃষাণীরা গভীর রাতে উঠছে সূর্য উঠতে না উঠতে ধান সিদ্ধ শেষ করে দৌড়ে শুকাচ্ছে। ধান, সিদ্ধ, রৌদ্রে শুকানো, মাড়াই করা সব মিলে গ্রামীন জনপদ এক ধরনের কমংযজ্ঞে চিত্র চিত্রায়িত হচ্ছে। কৃষকদের সাথে কথা বলে জানাগেছে তাদের অনেকে মহাজন সহ বিভিন্ন এনজিও হতে ঋন গ্রহন করে ধান চাষে নেমেছে। আমন ধান ঘরে তুলেছে কিন্তু ঘরে থাকার সুযোগ কই? ধান বিক্রি করে ঋন পরিশোধ করছে এবং বাদ বাকি ধান সারা বছরের খোরাকির জন্য রাখতে হচ্ছে। আমন ধানের চালের আটার মেহমানদারী এবং আথিথেয়তা হবে। শীত পড়তে শুরু করেছে। গ্রামীন জনপদে শীতের সময় গুলোতে পিঠা পায়েস তৈরীর ধুম পড়ে এই ধানের উপস্থিতি পিঠা পায়েসের আগমনী বার্তা জানান দিচ্ছে। সবমিলে কৃষক খুশি, লাভ লোকসান বড় কথা নয়, নতুন ধান উঠেছে তাই সর্বত্র বইছে আনন্দ স্রোত। ধান চাষে লাভবানই হচ্ছে কৃষকরা, তবে আরও বেশী লাভবান হতেন যদি না প্রনোদনা এবং বিনা সুদে কৃষি ধানের ব্যবস্থা করা হতো।