1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৭ অপরাহ্ন

উপকূলীয় অঞ্চলে কৃষকের স্বপ্ন ভঙ্গ ‌

  • প্রকাশিত: সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১৭ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি : বাংলাদেশের গ্রামীণ জীবনের মেরুদ- হলো কৃষি। ধান, আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য, আবার কৃষকের জীবনের আশা-ভরসা। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেই আশার ফসল ধীরে ধীরে দুঃস্বপ্নে পরিণত হচ্ছে। বিশেষ করে সাতক্ষীরার আশাশুনি, কালিগঞ্জ, শ্যামনগরসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জায়গায় দেখা দিচ্ছে এক ভয়াবহ সমস্যাÑনকল ও নিম্নমানের ধানবীজ।
কৃষকের এক মৌসুমের শ্রম, ঘামের বিনিময়ে পাওয়া সামান্য পুঁজি, সবই হারিয়ে যাচ্ছে এই প্রতারণার জালে। ধান চাষ শুরু হয় বীজের মাধ্যমে। ভালো বীজ মানেই ভালো ফলন। কিন্তু যখন সেই বীজই হয় ভেজাল বা নকল, তখন কৃষকের সব পরিশ্রম ব্যর্থ হয়ে যায়। আশাশুনি উপজেলার বুধহাটা, কাদাকাটি, শোভনালী ও কুল্যা ইউনিয়নের বহু কৃষক অভিযোগ করেছেনÑবাজারে পাওয়া কিছু নামীদামী কোম্পানির বীজ বপনের পরও জমিতে অঙ্কুরোদগম হয় না।
অনেক ক্ষেত্রেই ১০০ ভাগ বীজের মধ্যে মাত্র ৩০/৪০ ভাগ গজায়। ফলে জমি চাষ, সার, শ্রমÑসব খরচ দিয়েও কৃষকরা শূন্য হাতে ফিরেছেন। একজন কৃষক, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, বলেন, “আমরা নাম শুনে ভালো কোম্পানির বীজ কিনেছি। কিন্তু বীজের অঙ্কুরই বের হলো না। তিন বিঘার জমি একেবারে নষ্ট হয়ে গেল।”
স্থানীয়ভাবে অনুসন্ধান করে দেখা গেছে, অনেক বীজ ডিলার গোপনে মেয়াদোত্তীর্ণ বীজে নতুন মোড়ক লাগিয়ে বিক্রি করছেন। কেউ কেউ আবার ভারতীয় সীমান্ত থেকে চোরাপথে এনে নিম্নমানের বীজ বাজারজাত করছেন স্থানীয় লোগো ব্যবহার করে। এসব বীজের প্যাকেটে থাকে নামীদামী কোম্পানির নাম, কিন্তু ভেতরে ভরে দেওয়া হয় নিম্নমানের ধানবীজ। কিছু অসাধু ডিলার এমনকি কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের প্রভাব খাটিয়ে সরকারি বীজ সরবরাহের তালিকায়ও ঢুকে পড়েছে।
ফলে সাধারণ কৃষক বুঝতেই পারেন না কোন বীজ আসল আর কোনটি নকল। এখানে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছেÑএকটি বীজ ব্যবসায়িক চক্র গড়ে উঠেছে, যারা কৃষকের ঘামকে মুনাফার পণ্য বানিয়ে ফেলেছে। এই ভেজাল বীজের কারবার নতুন নয়। বছর বছর কৃষকের কান্না শোনা গেলেও প্রশাসনের ভূমিকা থাকে নিস্পৃহ। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে শুরু করে উপজেলা প্রশাসন পর্যন্ত কোনো কার্যকর তদারকি দেখা যায় না।
স্থানীয় বাজারে বীজ বিক্রির লাইসেন্সধারী ডিলারদের দোকান পরীক্ষা বা নমুনা সংগ্রহ খুবই বিরল ঘটনা। প্রশাসনের এই উদাসীনতার সুযোগেই নকল বীজের কারবার জমজমাট হয়ে উঠছে। অথচ একবার মাঠে বীজ নষ্ট হলে শুধু একজন কৃষক নয়, তার পরিবার, এমনকি পুরো এলাকার খাদ্যনিরাপত্তা ও হুমকির মুখে পড়ে। সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী এলাকা হওয়ায় ভারত থেকে অবৈধ পথে আসছে নানা প্রকার ধানবীজ। এই বীজগুলো অনেক সময় জলবায়ু ও মাটির উপযোগী নয়।
ফলে সেগুলো থেকে ফলন হয় কম বা একেবারেই হয় না। তবুও সস্তা দাম ও সহজলভ্যতার কারণে অনেক কৃষক তা কিনে ফেলেন, বুঝতে পারেন না আসলে ক্ষতির শিকারে পড়ছেন। সীমান্তে বীজ চোরাচালান বন্ধে প্রশাসনের কোনো বিশেষ অভিযান নেই বললেই চলে। কাস্টমস, বিজিবি, কৃষি অফিসÑসবাই দায়িত্বের জাল ফেলে বসে থাকে। এভাবে একটি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা অন্য দেশের নিম্নমানের পণ্য দ্বারা বিপন্ন হচ্ছে।
বাংলাদেশে ভেজাল বীজ বিক্রির বিরুদ্ধে বিদ্যমান আইন রয়েছেÑবীজ আইন, ২০১৮ এবং বীজ বিধিমালা, ২০১৯। কিন্তু এই আইনের প্রয়োগ প্রায় অনুপস্থিত। আইন অনুযায়ী, নকল বা নিম্নমানের বীজ বিক্রির অপরাধে জরিমানা ও কারাদ-ের বিধান আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আশাশুনি কিংবা সাতক্ষীরায় তেমন কোনো নজির স্থাপন হয়নি। অতএব সময় এসেছে প্রশাসনকে কঠোর অবস্থান নেওয়ার।
ডিলারদের লাইসেন্স নবায়নের আগে মাঠপর্যায়ে তদন্ত করা হোক। প্রতিটি বীজ কোম্পানির ব্যাচ নম্বর ও পরীক্ষার সনদ বাধ্যতামূলক করা হোক। কৃষি অফিস ও ভোক্তা অধিকার সংস্থা যৌথভাবে অভিযান চালাক। নকল বীজ বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে দ্রুত ট্রাইব্যুনাল গঠন করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। কৃষকের পরিশ্রম নিয়ে আর যেন কেউ বাণিজ্য করতে না পারেÑএটাই এখন সময়ের দাবি।
কৃষক শুধু একজন ব্যক্তি নন; তিনি জাতির খাদ্য সরবরাহের উৎস। যখন একজন কৃষকের জমি নষ্ট হয়, তখন সেটা পুরো দেশের অর্থনীতির ক্ষতি। ধান উৎপাদন কমলে আমদানি বাড়ে, বিদেশে যায় মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা। অন্যদিকে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ঋণের জালে জড়ায়, অনেক সময় পেশা বদল করে অন্যদিকে চলে যায়। ফলে দীর্ঘমেয়াদে কৃষি খাত দুর্বল হয়ে পড়ে। কৃষকদের এখন সময় এসেছে সচেতন হওয়ার।
ধান বপনের আগে বীজ পরীক্ষা করা, পরীক্ষিত ও সরকারি অনুমোদিত বিক্রেতার কাছ থেকে বীজ কেনাÑএসব অভ্যাসে আনতে হবে। স্থানীয় কৃষি অফিসগুলোও নিয়মিত “বীজ অঙ্কুরোদগম পরীক্ষা” কার্যক্রম চালু করতে পারে। এতে কৃষক নিজেরাই যাচাই করতে পারবেন বীজের মান। একটি ভালো বীজ একটি মৌসুমকে বদলে দিতে পারে; আবার একটি নকল বীজ ধ্বংস করে দিতে পারে কৃষকের সারা বছরের শ্রম।
তাই প্রশাসন, বীজ কোম্পানি ও সমাজÑসবাইকে এখনই এগিয়ে আসতে হবে। নকল বীজ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে তারা আর কখনো সাহস না পায় কৃষকের আশা নিয়ে খেলা করতে। কৃষি অফিসগুলোতে নজরদারি টিম, সীমান্তে চোরাচালান রোধে বিশেষ অভিযান, আর কৃষক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধিÑএই তিনটি পদক্ষেপ এখনই গ্রহণ করা জরুরি। নইলে আগামী দিনে আমরা হয়তো দেখবÑধানের দেশ বাংলাদেশে ধানের বীজের জন্য কৃষক কাঁদছে।
“কৃষক বাঁচলে দেশ বাঁচবে”Ñএই কথাটিই এখন আবার উচ্চারণের সময় এসেছে। ভালো বীজ, সঠিক তদারকি আর কঠোর আইন প্রয়োগই পারে কৃষকের স্বপ্নকে আবার বাঁচিয়ে তুলতে।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট