1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন

দুবলার চরে শুঁটকি উৎপাদনে ৮ কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৩৮ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি : এবার সুন্দরবনের দুবলার চরে শুটকিতে রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৮ কোটি টাকা। বন বিভাগ সূত্র জানা গেছে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করতে পারে ‌।‌প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঝড়-জলোচ্ছ্বাস, জলদস্যুদের আতঙ্ক এবং ভিনদেশি জেলেদের অনুপ্রবেশের আশঙ্কা মাথায় নিয়েই সুন্দরবনের দুবলার চরাঞ্চলে শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে সাগরযাত্রা শুরু করেছেন উপকূলীয় জেলেরা।
সুন্দরবনের দুবলার চরাঞ্চলে শুঁটকি মৌসুমকে ঘিরে সাগরযাত্রা শুরু করেছেন উপকূলীয় জেলেরা। ছবি:
(২৫ অক্টোবর) ভোর থেকে হাজারও জেলে ও মহাজন বাগেরহাটের মোংলার পশুর নদীর চিলা মোহনায় জড়ো হন। তারা জাল, নৌকা এবং শুঁটকি তৈরির সরঞ্জামসহ রাত ১২টার দিকে সাগরপাড়ের দুর্গম চরাঞ্চলের উদ্দেশে রওনা দেন।

এ মৌসুমে সুন্দরবনের দুবলা চরাঞ্চলে অন্তত ৩০ হাজার জেলে, ব্যবসায়ী ও শ্রমিকের সমাগম ঘটবে বলে আশা করছে বন বিভাগ। একইসঙ্গে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ খাতে বন বিভাগের রাজস্ব আয়ও বাড়বে। বন বিভাগের লক্ষ্য, এ মৌসুমে শুঁটকি উৎপাদন থেকে ৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়।

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, মৌসুমের শুরুতেই রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। মোংলা থেকে নদীপথে দুবলা জেলেপল্লীর দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। সুন্দরবন সংলগ্ন এই পল্লীর সব কার্যক্রম জেলে ও মৎস্যজীবীদের ঘিরে আবর্তিত হয়। বন বিভাগের আওতায় থাকা সাতটি মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্রকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে দুবলা জেলেপল্লী।

তিনি আরও জানান, মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির জন্য বঙ্গোপসাগরের দুবলা, আলোরকোল, মেহেরআলী, শ্যালার চর, অফিস কেল্লা প্রভৃতি চর ইতোমধ্যে পরিদর্শন ও স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে।

অন্যদিকে, জেলেরা অভিযোগ করেছেন যে, আগের বছরগুলোতে দুবলার চরে যাওয়ার পথে এবং গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে দস্যুদের হাতে পড়ে তারা সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসতেন। গত সাত বছর অপেক্ষাকৃত নিরাপদে মাছ আহরণ করতে পারলেও নতুন করে আবারও দস্যু আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। ভিনদেশি জেলেদের অনুপ্রবেশও তাদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। জেলেদের দাবি, দস্যুরা আবারও মুক্তিপণ আদায়, জেলেদের মারধর ও লুটপাট শুরু করেছে।
ইলিশ মৌসুম শেষ হওয়ার পর আশায় বুক বেঁধে দেশীয় জেলেরা সমুদ্রযাত্রা করছেন। তবে জেলেদের অভিযোগ, ইলিশ প্রজনন মৌসুমে যখন দেশীয় জেলেরা ২২ দিন (৪ অক্টোবর থেকে ২৫ অক্টোবর) মাছ ধরা বন্ধ রেখেছেন, তখন ভারতীয় জেলেরা সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের জলসীমায় প্রবেশ করে শত শত ফিশিং ট্রলারে ইলিশ ধরে নিয়ে গেছে। এরপরও জেলেরা শুঁটকি আহরণের আশায় সাগরে যাত্রা করছেন ২৬ অক্টোবর শনিবার রাতে।

জেলেরা জানিয়েছেন, চলতি মৌসুমে যাতে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার ও শুঁটকি তৈরি করা যায়, সেজন্য প্রশাসনের নজরদারি আরও বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন তারা।

মৎস্যজীবীদের সংগঠন ‘দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপ’-এর সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলের মৌসুমি জেলেরা জাল, নৌকা ও মাছ আহরণের উপকরণ নিয়ে সমুদ্রযাত্রা শুরু করেছেন। জেলেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা প্রয়োজন।’

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দফতর) অপারেশন কর্মকর্তা বলেন, ‘সুন্দরবন ও সাগর এলাকায় সবসময় জলদস্যু দমন, মৎস্য ও বনজ সম্পদ রক্ষা এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণের অভিযান অব্যাহত থাকে। তবে শীতকালীন মাছ আহরণের মৌসুমে জেলেদের নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে এবং শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের সময় বাড়তি নিরাপত্তা দিতে মোংলা থেকে দুবলার চর পর্যন্ত বিভিন্ন পয়েন্টে টহল জোরদার করা হয়েছে।’

এদিকে, মৎস্য আহরণ মৌসুমকে ঘিরে উপকূলের জেলে পরিবারগুলোর মধ্যে উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। পরিবারের সদস্যরা স্বজনদের বিদায় জানাতে নানা ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা পালন করছেন।

প্রতি বছর শীত মৌসুমে সুন্দরবনের গহিনে সাগরপাড়ের দুবলা, মেহেরআলীর চর, আলোরকোল, অফিস কেল্লা, মাঝের কেল্লা, শ্যালার চর, নারকেল বাড়িয়া, ছোট আম বাড়িয়া, বড় আম বাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, চাপড়া খালীর চর, কোকিলমনি ও হলদাখালীর চরে হাজার হাজার জেলে ও মৎস্যজীবী সমবেত হন। এসব চরে অস্থায়ী ঘর তুলে তারা মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির কাজ করেন। আহরিত মাছ শুকিয়ে শুঁটকি আকারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ও বিদেশেও বাজারজাত করা হয়।
সুন্দরবনের দুবলার চরে (২৫ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাত থেকে শুরু হয়েছে ‌দেশের বৃহত্তম শুঁটকি আহরণ মৌসুম। আগামী পাঁচ মাস সেখানে অবস্থান করবেন হাজারও জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ী। সমুদ্রপাড়ের এই শুঁটকি পল্লীতে ফের জমে উঠবে কর্মচাঞ্চল্য।
জীবনের ঝুঁকি আর ঋণের বোঝা মাথায় নিয়েই উপকূলের জেলেরা নেমেছেন ‌সাগরে। কেউ নতুন ট্রলার তৈরি করেছেন, কেউ পুরোনো নৌকা মেরামত শেষ করেছেন। মহাজনের চড়া সুদে ঋণ নিয়ে কিংবা গয়নাগাটি বন্ধক রেখে জেলেরা এখন সাগরযাত্রার প্রস্তুতিতে ব্যস্ত।
ডুমুরিয়ার জেলে রবিন বিশ্বাস বলেন, প্রতি বছরই ঋণ করে সাগরে এসেছি। এবারও পাঁচ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। জলদস্যুদের উৎপাত ফের বেড়েছে শুনে ভয় লাগছে।
কড়াইদিয়ার দ্বীপক মল্লিক জানান, অনেকে এবার সুদের টাকা দিতে না পেরে স্বর্ণ বন্ধক রেখেছেন। দস্যু, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস— সব ভয় নিয়েই দুবলারে যাত্রা এসেছি ।
পশ্চিম ‌‌সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাসানুর রহমান এই প্রতিবেদককে জানান এবারের মৌসুম শুরু হয়েছে২৬ অক্টোবর থেকে, চলবে আগামী বছরের ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। আলোরকোল, অফিস কেল্লা, নারকেলবাড়িয়া ও শ্যালারচরে অবস্থান করবেন জেলেরা।
চরগুলোতে জেলেদের জন্য ৯০০ অস্থায়ী ঘর ও ৮০টি দোকান তৈরির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে মুদি, ওষুধ, তেল, সেলুন ও হোটেলের দোকান রয়েছে। এছাড়া মাছ বেচাকেনার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে ১০০টি ডিপোর।
বন কর্মকর্তা বলেন, গত মৌসুমে রাজস্ব আদায় হয়েছিল সাড়ে ৬ কোটি টাকা। এবারও ৭-৮ কোটি টাকার রাজস্ব আদায়ের আশা করছি।
তিনি আরও জানান, ঘর বা স্থাপনা নির্মাণে জেলেরা বনের কোনো গাছপালা কাটতে পারবে না। কেউ নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দুবলার চরে দেশের মোট শুঁটকি উৎপাদনের প্রায় ৮০ শতাংশ তৈরি হয়। বর্ষা মৌসুমে ইলিশ ধরা শেষ হলে বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম থেকে জেলেরা এখানে অস্থায়ী বসতি গড়ে তোলেন।
মেহের আলীর খাল, আলোরকোল, মাঝেরচর, অফিসকেল্লা, নারিকেলবাড়িয়া, মানিকখালী ও শ্যালারচর এলাকাগুলোতে স্থাপিত হয় শুঁটকি পল্লী। এখান থেকে দেশব্যাপী পাইকারি বাজারে সরবরাহ করা হয় শুঁটকি মাছ।
জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির মোংলা শাখার সভাপতি বিদ্যুৎ মণ্ডল বলেন, পাস পারমিট হাতে পেয়েই আজ সন্ধ্যার পর জেলেরা রওনা হবেন দুবলারের উদ্দেশে। চার-পাঁচ মাসের জন্যই শুরু হচ্ছে তাদের নতুন জীবনযুদ্ধ।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট