বিশেষ প্রতিনিধি : খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক এখন মরণফাঁদ। অধিকাংশ জায়গায় নেই কার্পেটিং, খোয়া বা বালি। খানাখন্দ আর নালায় পরিণত হয়েছে মহাসড়কটি। মাত্রাতিরিক্ত যানবাহনের চাপে এটি এখন চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য। মোংলা ও ভোমরা স্থলবন্দরের পণ্য বহনকারী যানবাহনের পাশাপাশি নিত্য চলাচলকারী হাজার হাজার গাড়ির দীর্ঘ জটে নাকাল জনজীবন। দুর্ঘটনায় মৃত্যুর মিছিলও লম্বা হচ্ছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ মহাসড়ক নির্মাণে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় খুলনাবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। এদিকে খুলনা সড়ক বিভাগের দাবি ১০০ কোটি টাকার প্রকল্পের প্রস্তাব পাঠানো হয় অধিদফতরে। খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে কংক্রিট দিয়ে নির্মাণে সম্মত হয়েছে সড়ক অধিদফতর। প্রস্তাবিত ১০০ কোটি টাকার মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে।
খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের জিরোপয়েন্ট থেকে আঠারোমাইল পর্যন্ত দৈর্ঘ্য ৩৩ কিলোমিটার। ২০২০ সালে মোজাহার এন্টারপ্রাইজ ১৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে মহাসড়কে কার্পেটিংয়ের কাজ করে। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার, জোবা মাটি (সহজে গলে যায়) এবং পানির স্তর রাস্তার সমান হওয়ায় অল্পদিনেই মহাসড়কটি নষ্ট হয়ে যায়। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে অতিরিক্ত পণ্যবাহী যানবাহন।
চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়া খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে এখন পিচের বদলে আরসিসি ঢালাই হচ্ছে। খানাখন্দের কারণে এ সড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এ অবস্থায় বিদায়ী অর্থবছরে ২৭ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। যা দিয়ে হচ্ছে আরসিসি ঢালাই। খুলনার জিরো পয়েন্ট থেকে আঠারো মাইল পর্যন্ত ৩৩ কিলোমিটারের মধ্যে মাত্র ২৩৫০ মিটার নির্মাণ হবে এ বরাদ্দে। জিরোপয়েন্ট থেকে রেললাইন পর্যন্ত ১১৫০ মিটার আর চুকনগরে ১২০০ মিটার কাজ হবে।
খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগ জানিয়েছে, এখন ১৭ কিলোমিটার রাস্তা একেবারে খারাপ। এর মধ্যে বেশি খারাপ ৮ কিলোমিটার। ওই ৮ কিলোমিটার রাস্তায় আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য ১০০ কোটি টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর পিএমপি মিটিংয়ে এ নিয়ে আলোচনা হয়। ১৮ অক্টোবর সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের রোড ডিজাইন এবং সেফটি সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী তানভীর সিদ্দিক খুলনা-সাতক্ষীরা সড়কের বর্তমান অবস্থা পর্যবেক্ষণ করেন। তার দেওয়া সার্ভে রিপোর্টের আলোকে ৬ কিলোমিটার রাস্তায় আরসিসি নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক ও জনপথ অধিদফতর। বাংলাদেশ ও ভারতের সংযোগ সড়ক হিসেবে এ মহাসড়কটি ব্যবহৃত হচ্ছে।
এর আগে খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়ক দু’দফা সংস্কার হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালে মোজাহার এন্টারপ্রাইজ কাজ নিয়ে রাস্তাটি নির্মাণ করে। জবাবদিহিতার অভাবে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করায় অল্পদিনেই রাস্তাটি চলাচল অযোগ্য হয়ে পড়ে। বর্তমানে ২-৩ ঘণ্টা লম্বা যানজটের কারণে একদিকে কাঁচামাল নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে অফিস আদালত ও স্কুল কলেজে কেউ সময়মতো পৌঁছাতে পারছেন না। নাগরিক নেতারা রাস্তাটি সংস্কারে বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি, প্রতিবাদ সভা এমনকি ওই সড়কে মাছ ছেড়ে এবং ধান রোপণ করে প্রতিবাদ করেছেন। এতকিছুর পরেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ রাস্তা নির্মাণে অনেকটা উদাসীন। যে কারণে খুলনাবাসী দিন দিন বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন।
খুলনা নাগরিক সমাজের মহাসচিব অ্যাডভোকেট বাবুল হাওলাদার বলেন, ‘খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের সঙ্গে মোংলা বন্দর, ভোমরা স্থলবন্দর, বরিশাল, ভোলা এমনকি ঢাকার সরাসরি যোগসূত্র রয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ মহাসড়কের ভালো-মন্দ জড়িত। আমাদের দাবি, অতিদ্রুত পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দের মাধ্যমে টেকসই রাস্তা নির্মাণ যাতে হয় সেই ব্যবস্থা করা।’
খুলনা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটি (কেডিএস)-এর সভাপতি আব্দুস সালাম শিমুল বলেন, ‘কংক্রিটের রাস্তা জিরোপয়েন্ট থেকে শুরু হলেও মাঝে মাঝে গ্যাপ রাখা হচ্ছে। এতে রাস্তা টেকসই হবে না। তা ছাড়া ফুটপাতসহ পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকলে রাস্তা আবারও নষ্ট হবে। তাই আমরা আশা করি, সড়ক বিভাগ দ্রুত এসব বিষয় মাথায় রেখে কাজ শুরু করবে। না হলে খুলনার নাগরিক নেতাদের নিয়ে অচিরেই আন্দোলন শুরু করা হবে।’
খুলনা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী তানিমুল হক বলেন, ‘খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কের ৮ কিলোমিটার রাস্তায় আরসিসি ঢালাইয়ের জন্য চারটি প্যাকেজে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়ে প্রকল্প পাঠানো হয়। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে আরসিসি হলে অনেক টেকসই হবে– এমন বিষয় মাথায় নিয়েই প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছিল। অধিদফতর গুটুদিয়া অংশের ২ কিলোমিটার বাদ দিয়ে ৬ কিলোমিটার রাস্তা প্রাথমিকভাবে অনুমোদন করেছে।’