ডেস্ক রিপোর্ট : ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরের কাছে নওগাম থানায় রাখা বিস্ফোরক বিস্ফোরিত হয়ে ৯ জন নিহত এবং ২৯ জন আহত হয়েছেন। গতকাল শুক্রবার রাতে এই ঘটনা ঘটে। এনডিটিভির প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, হরিয়ানার ফরিদাবাদে চিকিৎসকের কাছ থেকে জব্দ বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক পরীক্ষা করার সময় এই বিস্ফোরণ ঘটে।
নিহত ব্যক্তিদের বেশির ভাগ পুলিশ সদস্য এবং ফরেনসিক দলের কর্মকর্তা। শ্রীনগর প্রশাসনের দুজন কর্মকর্তাও এই বিস্ফোরণে মারা গেছেন। আহত ব্যক্তিদের ভারতীয় সেনাবাহিনীর ৯২ বেস হাসপাতাল এবং শের-ই-কাশ্মীর ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সেসে (এসকেআইএমএস) ভর্তি করা হয়েছে।
ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন এবং পুরো এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে।
নওগাম থানা এলাকাজুড়ে বিভিন্ন স্থানে জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদের পোস্টার টাঙানোর ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটন করেছিল। ওই পোস্টারের সূত্র ধরে সামনে আসে যে ভারতের উচ্চশিক্ষিত পেশাজীবীরা চরমপন্থা অবলম্বন করছিলেন। পরে ওই সূত্র ধরে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার হয় এবং কয়েকজন চিকিৎসক গ্রেপ্তার হন।
গত অক্টোবরে গ্রেপ্তার হওয়া চিকিৎসক আদিল আহমদ রাথরকে ওই পোস্টারগুলো লাগাতে দেখা গিয়েছিল। পোস্টারগুলোতে কাশ্মীরে নিরাপত্তা বাহিনী এবং ‘বহিরাগতদের’ ওপর বড় ধরনের হামলার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।
গত ২৭ অক্টোবর তাঁর গ্রেপ্তারের মাধ্যমে একটি ভয়ংকর নেটওয়ার্কের সন্ধান মেলে, যা চলতি সপ্তাহের শুরুতে দিল্লি বিস্ফোরণের সঙ্গেও জড়িত বলে প্রমাণিত হয়। দিল্লির বিস্ফোরণে ১৩ জনের প্রাণহানি হয়।
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ জানিয়েছে, পোস্টারগুলো থেকে শুরু হওয়া তদন্তে একটি এক ‘হোয়াইট-কলার টেরর ইকোসিস্টেম’-এর সন্ধান পাওয়া গেছে, যা পাকিস্তান ও অন্যান্য দেশ থেকে পরিচালিত বিদেশি হ্যান্ডলারদের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ রাখা চরমপন্থায় উদ্বুদ্ধ পেশাজীবী ও শিক্ষার্থীদের নিয়ে গঠিত।
যেসব এলাকায় জইশের পোস্টার টাঙানো হয়েছিল, সেসব জায়গার সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে পুলিশ আদিল আহমদ রাথরকে শনাক্ত করে। গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত তিনি অনন্তনাগের সরকারি মেডিকেল কলেজে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি উত্তর প্রদেশের সাহারানপুরে চলে যান।
এর কিছুদিন পরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং সরকারি মেডিকেল কলেজের তাঁর লকার থেকে একটি অ্যাসল্ট রাইফেল উদ্ধার করা হয়।
তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় মুজাম্মিল শাকিল নামে আরেক চিকিৎসকের নাম উঠে আসে। শাকিল হরিয়ানার ফরিদাবাদের আল-ফালাহ মেডিকেল কলেজে কর্মরত ছিলেন। শাকিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাড়িতে যৌথ অভিযান চালিয়ে জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এবং হরিয়ানা পুলিশ প্রায় ৩ হাজার কেজি অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট উদ্ধার করে। শাকিলকে গ্রেপ্তারের পর আরও তথ্য সামনে আসে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত শাহীন সাঈদ নামে এক চিকিৎসককে সোমবার গ্রেপ্তার করা হয়।
এর কয়েক ঘণ্টা পরই রেড ফোর্টের কাছে জনাকীর্ণ একটি সড়কে ট্রাফিক সিগন্যালে দাঁড়ানো একটি গাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটে। এতে ১৩ জন নিহত হন, আহত হন ২০ জনেরও বেশি। আশপাশের কয়েকটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পরদিন উমর নবি নামে আরেক চিকিৎসকের নাম সামনে আসে। শীর্ষ সূত্রগুলো জানায়, রেড ফোর্টের সামনে যে গাড়িটি বিস্ফোরিত হয়, সেই হুন্দাই আই-২০ গাড়িটি তিনিই চালাচ্ছিলেন। বিস্ফোরণ তদন্তে নিয়োজিত ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (এনআইএ) সূত্র জানায়, বোমা তৈরিতে ব্যবহৃত রাসায়নিক জব্দ হওয়ায় আতঙ্কিত হয়ে স্থান পরিবর্তন করছিলেন তিনি।
সূত্রগুলো এনডিটিভিকে আরও জানায়, বিস্ফোরণের ধরন দেখে মনে হয়েছিল তড়িঘড়ি করে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) তৈরি করা হয়েছিল। যার ফলে ঠিকমতো জোড়া লাগাতে পারেননি। আতঙ্কিত অবস্থায় আইইডিকে পুরোপুরি সর্বোচ্চ ক্ষয়ক্ষতির জন্য প্রস্তুত করতে পারেননি বলে তদন্তকারীদের ধারণা।