
মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধিঃ বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে সুপেয় খাবার পানির অভাবে উপজেলার পশ্চিম খাউলিয়া গ্রামের ৬০টি পরিবারের খাবার পানির একমাত্র ভরসা দুষিত লবণাক্ত খালের পানি। গোটা গ্রামের প্রায় ৫শতাধিক মানুষের বছরের পর বছর জীবন যাত্রার মান ব্যাহত হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার সাড়ে তিন কিলোমিটার মাটির রাস্তা বর্ষা মৌসুমে চলাচলে জীবন আরো দুর্বিষহ করে তোলে। সুপেয় পানির নিরাপদ ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের প্রতি স্থানীয় জনসাধারণ।
সরজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার খাউলিয়া ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড পশ্চিম খাউলিয়া গ্রামের অন্তত ৬০টি পরিবারের প্রায় ৫শত মানুষ কয়েক যুগ ধরে এ গ্রামে বসবাস করে আসছে। এ গ্রামের বাসিন্দারা বছরের পর বছর খাবার পানি হিসাবে ব্যবহার করছেন লবণাক্ত নদীর দুষিত পানি। গ্রামটির চার কিলোমিটার দূরত্ব হেঁটে ইউপি মেম্বর ডবলু হাওলাদারের বাড়ি থেকে পানি এনে তাদের পান করতে হয়। গ্রামের অপর প্রান্তে ৪ কিলোমিটার দূরত্বে পঞ্চায়েত বাড়ি মিষ্টি পুকুরের পানি এনে তাদের ব্যবহার করতে হয়। এ থেকে বৃদ্ধ নারী-পুরুষরা অনেক পথ হেঁটে নিয়মিত খাবার পানি আনতে না পেরে সরাসরি খালের পানি ফুটিয়ে ব্যবহার করছেন দৈনন্দিন খাবার ও রান্নার কাজে।
লবণাক্ত এ পানি ব্যবহার করার ফলে ডায়রিয়াসহ পানিজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ছে গ্রামবাসী। স্থানীয়দের দাবি জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচন এলে ভোট নেওয়ার জন্য গ্রামের মানুষকে খাবার পানির সমস্যা ও যোগাযোগ ব্যবস্থার পাকা রাস্তা নির্মাণের একাধিক প্রতিশ্রুতি দিলেও নির্বাচনের পরে আর কোনো খোঁজ খবর রাখেন না তারা। ৬০টি পরিবারের বৃষ্টির পানি ধরে রাখার শুধুমাত্র ৩টি পানির ছোট ট্যাঙ্কি দিয়েছে এনজিও সংস্থা। তা থেকে ৩টি পরিবারের পানির সংকট কিছুদিনের জন্য মেটাতে পারে। বাকিদের খালের পানিই একমাত্র ভরসা।
যদিও বেসরকারি সংস্থা ডরপ ২০১৭ সাল থেকে উপকূলীয় এ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে সুপেয় পানীর সংকট দূরীকরণের জন্য মাঠ পর্যায়ে খাবার পানির পুকুর খনন ও ফিল্টার স্থাপন পানির ট্যাঙ্কি সরবরাহ করছেন। এলাকা ভিত্তিক তা অপ্রতুল।
এ বিষয়ে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের উপ-সহকারী প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম বলেন, এ উপজেলায় খাবার পানির সরবরাহে সাড়ে ৪ হাজার টিউবঅয়েল এর ব্যবহার ছিল। আর্সেনিক ও অতিরিক্ত লবণাক্ততার কারণে টিউবঅয়েলগুলো ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বিকল্প ব্যবস্থায় বৃষ্টির পানি ধরে রেখে খাবার পানি ব্যবহারে জনস্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে ইতোমধ্য উপকূলীয় অঞ্চলে পানি সরবরাহ প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলার ১৬টি ইউনিয়নে ৩ হাজার লিটারের ১১ হাজার পানির ট্যাঙ্কি বিতরণ করা হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী অপ্রতুল বরাদ্দ ১ লাখ পরিবারের শুধু মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ সরকারি বরাদ্দের এ সুবিধার আওতায় এসছে। পরবর্তীতে আরো বরাদ্দ হলে পর্যাক্রমে তা সরবরাহ করা হবে।