
বিশেষ প্রতিনিধি : কালের সাক্ষী যমুনা নদী। সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার কাকশিয়ালী ও শ্যামনগর উপজেলার মাদার নদীকে মিলিত করেছে আদি যমুনা। ভারতের ইছামতি’র প্রবাহ হতে উৎপন্ন যমুনা সুন্দরবন হয়ে ভিন্ন নামে সরাসরি বঙ্গপোসাগরে মিশেছে। উৎপত্তি ও মিলনস্থল দুই উপজেলাসহ পার্শ্ববর্তী অপরাপর অংশের জলাবদ্ধতা দুরীকরণে এ নদীর ভূমিকা শুরু থেকে। তার উপর যমুনা তীরবর্তী দুই উপজেলার প্রায় চার লাখ জনগোষ্ঠীর জীবন-জীবিকার সাথে আদি এ যমুনা’র সম্পর্ক বহু প্রাচীন।
নানা কারণে প্রাগ ঐতিহাসিক কালের স্বাক্ষী আদি সে যমুনা আজ মৃত প্রায়। নিশ্চিহ্ন হতে চলেছে বার ভূইয়াদের অন্যতম রাজা প্রতাপাদিত্য’র সুখ দু:খের স্মৃতি বিজড়িত যমুনা। সময়ের ধারাবহিকতায় মধ্যবর্তী সময়ের মরা খাল বর্তমানে নাম মাত্র জলাধারে রূপ নিয়েছে।
স্থানীয় অর্থনীতি ও সমাজ জীবনে বিশেষ প্রভাব রাখা যমুনাকে গত কয়েক দশকে রীতিমত ছিন্ন ভিন্ন করা হয়েছে। প্রাণহীন যমুনা’র চলার পথ জায়গায় জায়গায় রুদ্ধ করা হয়েছে। দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় মাদার নদীতে মেশার আগে দু’টি স্থানে যমুনার বুকের উপর দিয়ে মহাসড়ক অতিক্রম করেছে। এছাড়া নকিপুর বাজারের প্রবেশমুখে যমুনাকে নিশ্চিহ্ন করে সেখানে অসংখ্যা স্থাপনা গড়ে যমুনা’র কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেয়া হয়েছে।
তবে প্রভাবশালীরা কেবল এরূপ অপতৎপরতার মধ্যেই থেমে থাকেনি। স্থানীয় প্রকৃতি, জীব বৈচিত্র রক্ষা এবং জলাবদ্ধতা দুরীকরণের স্বার্থে গড়ে ওঠা ‘যমুনা বাঁচাও আন্দোলন’ নামীয় সংগঠনের সাথে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধেও নানা কুট-কৌশলের আশ্রয়ও নেয় তারা।
শুধুমাত্র আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টায় আদি এ যমুনাকে পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করতে উঠেপড়ে লেগেছে অসাধু এ চক্রটি।
যমুনা বাঁচাও আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়ার অপরাধে প্রয়াত চেয়ারম্যান গোলাম আলমগীর এবং উন্নয়ন কর্মী অধ্যক্ষ আশেক-ই এলাহীসহ ঐ আন্দোলনের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে চল্লিশটিরও বেশি মামলা করে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা। যাদের অনেকেই ইতোমধ্যে প্রয়াত হয়েছে আবার কেউ কেউ নিয়মিতভাবে আদালত পাড়ায় দৌড়ে বেড়াচ্ছে শুধু যমুনাকে রক্ষার আন্দোলনে শরীক হওয়ার অপরাধে।
যমুনা বাঁচাও আন্দোলনের কর্মী, এডভোকেট জাফরউল্লাহ, হারুন-অর রশিদ, প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাদেকুর রহমানসহ অন্যরা জানায়, বিপন্ন যমুনার শেষ চিহ্নটুকু ধরে রাখতে ‘যমুনা বাঁচাও আন্দোলন’ কমিটি বছরের পর বছর ধরে শত শত সভা, সমাবেশ, সংবাদ সম্মেলন, স্মারক লিপি প্রদানসহ নানা উপায়ে জনমত গড়ে যমুনায় পুনরায় প্রবাহ সৃষ্টির লক্ষ্যে নীতি নির্ধারকদের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে।
তবে জনপ্রতিনিধিদের আন্তরিকতার অভাব এবং প্রশাসনে লাল ফিতার দৌরাত্মসহ নানামুখী আইনি জটিলতায় সুড়ঙ্গের নিচের আলো ক্রমেই মিলিয়ে যেতে থাকে।
অভিযেগের সুরে তারা আরও বলেন শত্রু পক্ষের প্রবল বিরোধীতায় সময়ের দীর্ঘসুত্রিতায় ‘যমুনা বাঁচাও আন্দোলন’ এর সর্বাত্মক চেষ্টা ক্রমাগত ব্যর্থ হতে চলেছে।
উল্লেখ্য সাবেক দুই জেলা প্রশাসক (বর্তমান বিভাগীয় কমিশনার) ও সাবেক জেলা প্রশাসক পরবর্তীতে যমুনাকে মাছ চাষের জন্য ইজারা দেয়া হবে না-মর্মে ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও সম্প্রতি যুমনার ৪র্থ ও ৫ম খন্ড ইজারা পাওয়ার নিমিত্তে প্রভাবশালী ভূমি দস্যুরা সংশ্লিষ্ট বিভাগে টাকা জমা দিয়েছে বলে তথ্য মিলেছে।
যমুনা পাড়ে বসবারত মিজানুর রহমান, আব্দুল জব্বারসহ উন্নয়ন কর্মী অধ্যক্ষ আশেক-ই এলাহী অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা স্বীয় স্বার্থে যমুনাকে পাঁচটি খন্ডে বিভক্ত ‘জলাধার’ দেখিয়ে প্রশাসনকে ভুল তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করছে।
এদিকে অপর ১টি খন্ড নিয়ে কোন ঝামেলা না থাকা সত্ত্বেও নকিপুর বাজার সংলগ্ন ২য় খন্ড এবং মাছ চাষের নিমিত্তে ৪র্থ ও ৫ম খন্ড ইজারা নেয়ার জন্য ভূমিদস্যুরা প্রাণান্তকর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মুলত তাদের কারণেই কাকশিয়ালী থেকে মাদার নদী পর্যন্ত যমুনা আগের সেই সংযোগ ও প্রবাহ ফিরে পাচ্ছে না যমুনা।
আব্দুল ওহাব, আজিজ মোড়লসহ স্থানীয়দের অভিযোগ যমুনাকে গ্রাস করতে আগ্রহী ভূমিদস্যুরা এক সময়ের প্রমত্তা যমুনাকে বন্দোবস্তমুলে এবং অবৈধভাবে যুগের পর যুগ ধরে শাসন করে চলেছে। চন্ডিপুর থেকে শুরু করে নকিপুর বাজারের একাধিক জায়গা, শ্মশানঘাট, ফুলতলা ও সোনারমোড়সহ মাদার নদীর সংযোগ স্থলের পুর্বের অসংখ্য স্থানে যমুনার উপর বাঁধ দিয়ে পৈত্রিক সম্পত্তির মতই ব্যবহার করছে তারা।
আর এসব ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর পরিণাম যে কতটা ভয়াবহ তা ইতোমধ্যে যমুনা বাঁচাও কমিটির সদস্যরা হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে নানাভাবে হয়রানীর শিকার হয়ে।
তবে আশার আলো এটাই যে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে ইতোমধ্যে একবার আদি এ যমুনার প্রবাহ ফেরানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু সঙ্গত কারণে তা বেশি দুর এগুতে পারেনি।
যমুনার প্রবাহ সৃষ্টির আশু প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি উপলব্ধি করে বর্তমান বিভাগীয় কমিশনার ও তৎকালীন সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সামাদ কালিগঞ্জ অংশে প্রায় দশ কি. মি. যমুনার খনন কাজ সম্পন্ন করেন ১০০ ফুট প্রশস্ত করে।
কিন্তু তিনি চাকরি সূত্রে অন্যত্র বদলী হয়ে যাওয়ার পর থমকে যায় ‘যমুনা পুন:উদ্ধারে’র বিষয়ে এতদাঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি।
বর্তমান বিভাগীয় কমিশনার ও তৎকালীন জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সামাদ সাতক্ষীরা ছেড়ে যাওয়ার পর প্রায় ছয়/সাত বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু তারপর থেকেই থমকে আছে আদি যমুনার অবশিষ্ট অংশ পুন:উদ্ধারসহ যমুনা পুন:খনন কাজ।
বরং এসময়ে মধ্যে ভূমিদস্যু প্রভাবশালীরা মাছ চাষের জন্য আবারও তৎপর হয়েছে যমুনাকে ইজারা নিয়ে খন্ড বিখন্ড করার অভিপ্রায়ে। সে লক্ষ্যে তারা ইতোমধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ইজারা পেতে টাকাও জমা দিয়েছে বলে তথ্য রয়েছে।
ফলে জনপ্রতিনিধি, সরকারের নীতিনির্ধারক থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্তা ব্যক্তিদের আন্তরিকতার অভাবে যমুনা বাঁচাও কমিটির পক্ষ থেকে বহু দেনদরবার করা সত্ত্বেও নানা কারণে অবশিষ্ট যমুনা পুন:উদ্ধারের চেষ্টা মাঠে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়েছে বলে দাবি যমুনা বাঁচাও কমিটি সংশ্লিষ্টদের।
তাদের অভিযোগ এ অঞ্চলের মাটি ও মানুষের জন্য অতীব গুরুত্বপুর্ণ এ নদীর ন্যুনতম প্রয়োজনীয়তা বিবেচনায় না নিয়ে নীতিনির্ধারকদের দায়সারা মনোভাব একদিকে স্বার্থান্বেষীদের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। অপরদিকে আদি এ যমুনা অসংখ্য শত্র“র আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত হয়ে কালের গহ্বরে হারিয়ে যেতে বসেছে।
তবে উন্নয়ন কর্মী অধ্যক্ষ আশেক-ই এলাহী, এডভোকেট জাফরউল্লাহ শারাফাতসহ আরও অনেকেই নিশ্চিত করেছেন হঠাৎ-ই যেন যমুনাকে ঘিরে আশার আলোর দেখা মিলেছে। সম্ভাবনা জেগেছে বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে বসা ‘স্মৃতিময়’ যমুনায় পুনরায় প্রবাহ সৃষ্টির অসাধ্য (!) সাধনের কাজ। যমুনার উপরিভাগ দিয়ে মহাসড়ক অতিক্রমের বিয়টি ইতোমধ্যে উপজেলা সমন্বয় কমিটির সভায় উপস্থাপনের পর সেখানে দু’টি ব্রিজ নির্মাণের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার জানান।
যমুনা বাঁচাও কমিটির সদস্যরা জানান, দীর্ঘ দিনের তিন প্রধান বাঁধার অন্যতম নকিপুর বাজারের প্রবেশমুখের অস্থিত্ত্বহীন যমুনা ইতিমধ্যে কিছুটা হলেও স্বরূপে ফিরেছে। সম্প্রতি উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিফাত হোসেন, স্থানীয় এমপি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহায়তা নিয়ে অসাধ্য (!) সাধনের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছেন।
অধ্যক্ষ আশেক-ই এলাহী বলেন, মাটি ভরাট করে হাট বাজার, দোকান পাঠ ও বহুতল ভবন গড়ে মানচিত্র হতে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া যমুনাকে অনেক চেষ্টার পর পুরানো মানচিত্র অনুযায়ী খনন করেছেন তিনি। অসংখ্য মামলা ও হয়রানীসহ নানা ধরণের ভয়ভীতি ও প্রলোভনকে উপেক্ষা করে তিনি যমুনার উপর দিয়ে গড়ে ওঠা যাবতীয় স্থাপনা অপসারণ করে খননকৃত অংশে ব্রিজ নির্মাণ করে দুই প্রান্তের যমুনাকে সংযুক্ত করে দিয়েছেন।
অপর দু’টি বাঁধা (যমুনার উপর মহাসড়ক) অপসারণ (ব্রীজ নির্মাণ করে) করা গেলেই যমুনা আবারও কাকশিয়ালী ও মাদার নদীর মিলন ঘটবে বলেও এলাকাবাসির তিনি মত ব্যক্ত করেন।
যমুনা বাঁচাও কমিটির পুরোধা অধ্যক্ষ আশেক-ই এলাহী আরো বলেছেন, সাবেক জেলা প্রশাসক মো. আবদুস সামাদের দেখিয়ে দেয়া পথে হেঁটে আহসান উল্লাহ শরিফী যে অসাধ্য (!) সাধন করেছেন তা যদি অব্যাহত থাকে তবে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে আদি যমুনা আগের প্রবাহ ফিরে পাবে এমন প্রত্যাশা সবার।
যমুনা বাঁচাও কমিটির সদস্য এডভোকেট জাফলউল্লাহ শারাফাত ও হারুন-অর রশিদ বলেন, কালিগঞ্জ অংশের ১০ কি. মি. যমুনা ১০০ ফুট প্রশস্থ করে খনন হয়েছে। ইতোমধ্যে নকিপুর বাজারের প্রবেশমুখের সবচেয়ে বড় বাঁধা অপসারণ করে এসি ল্যান্ড শরিফী সাহেব প্রমান করেছেন একাগ্রতা আর ইচ্ছা শক্তি থাকলে কোন কাজই অসম্ভব নয়। তারা আরও বলেন যমুনার ৪র্থ ও ৫ম খন্ড ইজারা নেয়ার পায়তারা চালাচ্ছে ভূমিদস্যুরা। এছাড়া চন্ডিপুর ও সোনারমোড়সহ আরও কয়েকটি জায়গায় ছোট কয়েকটি বাঁধা রয়েছে। এলাকার জীব বৈচিত্র রক্ষার বিষয়াবলীর গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে অবিলম্বে সমুদয় যমুনা সম্পূর্ণ উন্মুক্ত করা জরুরী।
আশেক-ই এলাহী বলেন, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও দখলবাঁজদের দৌরাত্ম এবং নানামুখী ষড়যন্ত্রে আদি যুমনার প্রবাহ ফেরানো নিয়ে সংশয় ছিল। তবে সম্প্রতি স্থানীয় এমপি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সহায়তা নিয়ে উপজেলা তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) আহসান উল্লাহ শরিফী সে অসাধ্যকে সাধন করেছেন। তা অটুট মনোবল, দৃঢ় মানসিক শক্তি এবং আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে যমুনায় পুনরায় প্রবাহ সৃষ্টির সম্ভাবনা জেগেছে। এখন প্রয়োজন এই ধারাকে এগিয়ে নেয়া।
এডভোকেট জাফরউল্লাহ শারাফাত বলেন, নকিপুর বাজারের প্রবেশমুখের যাবতীয় স্থাপনা অপসারিত করে ব্রীজ নির্মাণ করে দু’প্রান্তের যমুনাকে সংযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু সম্পুর্ণ যমুনার মধ্যভাগে গড়ে তোলা স্থানীয় ইউপি সদস্য প্রভাবশালী ও ধর্ণাঢ্য ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত মলয় কুমার গায়েনের বহুতল অবৈধ স্থাপনা আইনি জটিলতার কারণে অপসারণ করতে না পারায় যমুনাকে স্বরূপে ফেরানোর পুর্ণতার দেখা মিলল না।
এবিষয়ে অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বলেন, বিশালায়তনের নদী যমুনা আজ মৃত প্রায়। আলমগীর হায়দার, আশেক-ই এলাহী কিংবা জাফর উল্লাহ’র মত কিছু নিবেদিত প্রাণ মানুষ চেষ্টা না করলে এতদিন নুতন প্রজম্ম যমুনাকে ‘গুগলে’ খুঁজতো। তিনি আরও বলেন যমুনার দুপাশে যারা বসতি গড়ে তুলেছে তারা জমির অগ্রভাগ দাবি করে ইতোমধ্যে যমুনার সিংহভাগ গ্রাস করেছে। ভূমি মন্ত্রনণালয়ের সাথে সমন্বয় করে অবিলম্বে প্রভাবশালীদের কবল থেকে যমুনার নায্য হিস্যা বুঝে নেয়া উচিত যমুনা বাঁচাও কমিটির। তৎকালীন
যমুনা বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য হারুন-অর রশিদ বলেন, ভূমিদস্যুদের কবল থেকে যমুনাকে উদ্ধারের পাশাপাশি অবিলম্বে যমুনার ৪র্থ ও ৫ম খন্ডের জন্য প্রক্রিয়াধীন ইজারা বাতিলের চেষ্টা করে মৃত প্রায় যমুনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে এ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা দুরীকরণসহ মানুষের প্রয়োজনে। প্রয়োজনে সরাসরি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী দারস্থ হওয়ার আহবান জানান তিনি।
এবিষয়ে উপজেলা তৎকালীন সহকারী কমিশনার (ভূমি) নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আহসান উল্লাহ শরিফী বলেন, একার চেষ্টায় এটা করা সম্ভব হয়নি। বিভাগীয় কমিশনার মহোদয়ের দেখিয়ে দেয়া পথে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আমি সবে মাত্র একটি বড় বাঁধা অতিক্রম করেছি। কিন্তু যমুনার প্রকৃত প্রবাহ সৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে এবং কাকশিয়ালী ও মাদার নদীর পুন:সংযোগ সৃষ্টি করতে হলে সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ প্রভাবশালী জনপ্রতিনিধি এবং প্রশাসনের গুরুত্বপুর্ণ শাখাসমুহের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে এলাকাবাসি ও সুধী মহলের আন্তরিকতাপুর্ণ সহযোগিতার বিকল্প নেই বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
তিনি আরও বলেন মহাসড়ক অতিক্রম করা দু’টি স্থানে ব্রিজ নির্মাণ করার পাশাপাশি ছোট বড় যাবতীয় বাঁধ বা রাস্তা অপসারণ করলেই কেবল যমুনা তার আদি প্রবাহ ফিরে পাবে। অর সেটা করতে ব্যর্থ হলে অদুর ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের মানুষের জন্য চরম ভোগান্তি অপেক্ষা করছেন বলেও তিনি সতর্ক করেন।
সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আদি যমুনা নদী খনন কাজ নির্বিঘেœ সম্পন্ন করতে অবশেষে নদী দখল করে গড়ে উঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান শুরু করেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। নদী দখল করে অবৈধ ভাবে গড়ে তোলা একটি সুউচ্চ তিন তলা ভবন শনিবার দুপুরের পর প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে বুলডোজার ও এস্কেভেটর মেশিন ব্যবহার করে ভাঙার কাজ শুরু করে পাউবো কর্তৃপক্ষ। রবিবার সকালে ফের ওই ভবন ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে।
বিকেলে নকিপুর বাজারের প্রবেশদ্বারে শ্যামনগর বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন অংশে গড়ে তোলা নীলকমল নামীয় তিন তলা একটি ভবন ভাঙার কাজ শুরু হলে সর্বত্র হৈ চৈ পড়ে যায়। স্থানীয় ইউপি সদস্য মলয় কুমার গায়েন ঝন্টুর মালিকাধীন ওই ভবনসহ ডাঃ আকবর হোসেন ও সিরাজুল ইসলামসহ প্রভাবশালীদের অবৈধ স্থাপনা অপসারণ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে গোটা এলাকায় চাপা উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ইতিমধ্যে উচ্ছেদ অভিযানের শুরুতে গত বৃহস্পতিবার দখলদারদের একটি পক্ষ সংবাদকর্মীসহ যমুনা বাঁচাও কমিটির সদস্যদের উপর হামলা করে। ওই ঘটনায় সাতজনের বিরুদ্ধে শ্যামনগর থানায় একটি মামলা দায়েরের পর থেকে মলয় কুমারসহ অন্যরা পলাতক থাকার মধ্যে শনিবার যমুনার উপর নির্মিত অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড বিভাগ-১-এর কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ২০২২ সালে ৬৪টি জেলার অভ্যন্তরীণ ছোট নদী, খাল ও জলাশয় পুনঃখনন প্রকল্প (প্রথম পর্যায় দ্বিতীয় সংশোধনীর অধীনে) ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে সাতক্ষীরার ছোট যমুনা নদীর ১৯ কিলোমিটার পুনঃখননের কাজ পায় বরিশালের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স। কার্যাদেশ অনুযায়ী ওই বছরের ২৭ অক্টোবর থেকে খনন কাজ শুরু করে ৩০ মের মধ্যে সম্পন্ন করার কথা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রায় ১৭ কিলোমিটার নির্বিঘেœ অবৈধ দখলমুক্তসহ পুনঃখনন সম্পন্ন হলেও শ্যামনগর সদরে প্রভাবশালীদের কারণে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকার খনন কাজ আটকে যায়। যমুনা নদী পুনঃখনন কাজ তদারকির দায়িত্বে থাকা পাউবো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী তম্ময় হালদারের বিরুদ্ধে প্রভাবশালীদের পক্ষাবলম্বনের অভিযোগ উঠলে তাকে বদলী করা হয়।
যমুনা বাঁচাও কমিটির সদস্যসহ শ্যামনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান এড. জহুরুল হায়দার বলেন, শ্যামনগরবাসীকে স্থায়ী জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচাতে সমগ্র যমুনা দখলমুক্ত করার কোন বিকল্প নেই। নদী দখল করে গড়ে উঠা সব অবৈধ স্থাপনা সরিয়ে দেয়া হবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডে বিভাগ-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ সালাউদ্দীন জানান, যমুনার উপর ছোট বড় কোন অবৈধ স্থাপনা রাখা হবে না। যাবতীয় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর অবশিষ্ট অংশ পুনঃখনন শুরু হবে। এদিকে দেরিতে হলেও এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি পূরণের কাজ শুরু হওয়ায় স্থানীয় সংসদ সদস্য, সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও শ্যামনগর সদর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
প্রসঙ্গতঃ যমুনা নদীর উপর নির্মিত যাবতীয় অবৈধ স্থাপনা অপসারণের জন্য প্রায় দুই দশক ধরে দাবি জানিয়ে আসছিল শ্যামনগরবাসী। কিন্তু স্থানীয় কিছু অবৈধ দখলদার তাদের স্থাপনা সরিয়ে না নেওয়ার কারণে নদী খনন কাজ ব্যাহত হচ্ছিল। অনেকে নদীর পাড় দখল পূর্বক অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করে সেখানে বসবাস করে আসছিল। যমনা নদী খনন কাজ নির্বিঘেœ করতে অবৈধ দখলদারদেরকে তাদের স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য বার বার বলা সত্তে¡ও কোন কাজ হচ্ছিল না। অবশেষে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ঘোষণা দিয়ে গত ৬ জুন মঙ্গলবার বিকেল ৪টায় শ্যামনগর মহাশ্মশান সংলগ্ন যমুনা নদী খনন কাজের উদ্বোধন করেন শ্যামনগর সদর ইউপি চেয়ারম্যান এড. এস এম জহুরুল হায়দার (বাবু)। এতে করে শ্যামনগরের মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রতিক্ষীত যমুনা নদী পুনঃখনের কাজ পুনরায় শুরু করা হয়।