1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৬:১৪ অপরাহ্ন

পাকিস্তানে সেনা অভিযানে মাদারীপুরের ফয়সাল নিহত

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২৫
  • ২০ বার পড়া হয়েছে

মাদারীপুর প্রতিনিধি : পাকিস্তানে নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবানে (টিটিপি) যোগ দিয়ে সেনা অভিযানে নিহত বাংলাদেশি তরুণ ফয়সাল হোসেনের (২২) পরিবার জানত তিনি দুবাই প্রবাসী। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে তাঁর মৃত্যু কোনোভাবেই মানতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরা। ফয়সালের মৃত্যুতে তাঁর গ্রামের বাড়িতে চলছে মাতম।
ফয়সাল মাদারীপুর সদর উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নে ছোট দুধখালী এলাকার আবদুল আউয়াল মোড়লের ছেলে। তাঁর পরিবারের সদস্যরা রাজধানীর জগন্নাথপুর এলাকার আজিজ সড়কে বসবাস করেন। আবদুল আউয়াল পেশায় একজন ইলেকট্রিশিয়ান। তাঁর বড় ছেলে আরমান মোড়ল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন।
গত শুক্রবার রাতে পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশের কারাক জেলায় পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর এক অভিযানে ১৭ টিটিপি সদস্য নিহত হন। এ সময় বাংলাদেশি তরুণ ফয়সাল হোসেন নিহত হন। রোববার দুপুরে নিহত তরুণের বড় ভাই আরমান মোড়ল তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন।
ফয়সালের মা চায়না বেগম কান্নাজনিত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলের লগে দুই মাস আগে কথা হইছে। তখন ছেলে কইলো, “মা, টাকাপয়সা তো তেমন পাঠাতে পারতাছি না। তুমি কেমন আছো, আমি এখানে খুব ভালো আছি।” আমি কইলাম, বাবারে তুমি আইসা পড়ো। দেশেই কাম করো।’ বাবায় বলল, “মা, আমি চইলা আসব।” কিন্তু আর তো ফিরা আইলো না। হায় আল্লাহ, তুমি আমার বাবারে আমার বুকে ফিরাইয়া দাও।’
চায়না বেগম বলেন, ‘ফয়সাল খালি কইত, মা, দেশে কাম নাই। আমি দুবাই যামু। পরে কীভাবে যেন ও নিজের মতো করে চলে গেল। পরে এক মাস কোনো খবর পাই নাই। কয়েক দিন পরে ফোন করে জানাইলো মা আমি দুবাই আছি। পরে মাসে একবার থেকে দুইবার কথা হইতো। আমরা কেউই জানতাম না যে ও পাকিস্তান গেছে।’
ফয়সাল ঢাকার কালাচাঁদপুরে একটি স্কুলে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছিলেন। বাংলাদেশে থাকতে তিনি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ওয়াজ মাহফিলে ভ্রাম্যমাণ দোকান বসিয়ে তসবি, জায়নামাজ, আতর ও টুপি বিক্রি করতেন বলে জানায় পরিবার।
ফয়সালের চাচা আবদুল হালিম বলেন, ‘বাংলাদেশ থেকে দুই বছর আগে ফয়সাল নিজের মতো করে বিদেশ যাওয়ার কথা বলে কয়েক দিন নিখোঁজ ছিল। পরে ফয়সাল নিজেই ফোন করে জানায়, সে দুবাই গেছে। এরপরে আর কথা হয়নি। পরে গত কোরবানির ঈদের আগে আমার সঙ্গে ওর কথা হইছে। তারপরেই দুই মাস আগে মাদারীপুর শহর থেকে পুলিশ আমাদের বাড়িতে আসে। তারা জানায় ফয়সার দুবাই নয়, পাকিস্তান গেছে। তখন আমরাও চেষ্টা করছি পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরাইয়া আনতে। কিন্তু আমরা চেষ্টা করেও পারি নাই।’
নিহত ফয়সালের দাদা শুক্কুর মোড়ল বলেন, ‘আমার দুই মেয়ে ছয় ছেলে। নয়জন নাতি আমার। ফয়সাল সব নাতিপুতির মধ্যে সেরা ছিল। এক ওয়াক্ত নামাজও বাদ দিত না। নাতিটা খুব ভালো ছিল। এ পথে গিয়ে মারা গেছে, সেটা কল্পনাও করতে পারতাছি না। কারা আমার নাতিরে পাকিস্তান নিয়ে খারাপ পথে নিলো, তাদের যেন বিচার হয়।’
ফয়সালের নানা জয়নাল বেপারী কোনোভাবেই নাতির মৃত্যুর কথা মানতে পারছেন না। তাঁর মেয়ের সঙ্গে তিনিও কাঁদছিলেন। আর বলছেন, ‘এ ঘটনা শুনে আমরা সবাই অবাক। ফয়সাল পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ত। মসজিদে সামনে টুপি আতর বেচত। ধর্মীয় লাইনে ছিল। কীভাবে কী হয়ে গেল। হায় আল্লাহ, আর কারও যেন এমন দশা না হয়।’
ফয়সালের লাশ দেশে আনার দাবি জানিয়েছে তাঁর পরিবার ও স্থানীয় লোকজন। প্রতিবেশী আছিয়া বেগম বলেন, ‘সরকারের কাছে দাবি, লাশটা আমরা দেখতে চাই। আর যারা ফয়সালকে এই পথে নিছে, তাদের চিহ্নিত করে বিচার করা হোক। আর যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়।’
ফয়সালের মৃত্যুর সংবাদটি গুরুত্ব দিয়ে প্রথম প্রকাশ করে দ্য ডিসেন্ট নামে একটি অনলাইনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম। পরে বিষয়টি আলোচনায় আসে। গণমাধ্যমটির সম্পাদক কদরুদ্দিন শিশির গণমাধ্যমকে বলেন, ‘পাকিস্তানভিত্তিক সাংবাদিক জাওয়াদ ইউসুফ তাঁর টুইটার অ্যাকাউন্টে নিহত বাংলাদেশির ছবি প্রকাশ করেন। পরে আমরা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত হই। পরে আমরা বাংলাদেশে নিহত তরুণের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে শতভাগ নিশ্চিত হই। এর আগেও বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তানে টিটিপির হয়ে যুদ্ধ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন, সেই সংবাদও আমরা করেছি।’
জানতে চাইলে মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অনুসন্ধান) জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে জঙ্গি হামলায় মাদারীপুরের এক তরুণ মারা গেছে বলে আমরা জেনেছি। তাঁর পরিবার যদি আমাদের কাছে আইনগত সহায়তা চায়, তাহলে পুলিশের পক্ষ থেকে আমরা সেটা অবশ্যই করব। পাকিস্তান থেকে নিহত তরুণের লাশ ফেরত আনার যদি কোনো ব্যবস্থা থাকে, সেটাও করা হবে। আর ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে তরুণ প্রজন্মকে ধর্মযুদ্ধে বা জঙ্গিবাদে যারা উৎসাহিত করছে, তাদের বিষয়ে পুলিশ কাজ করছে।’

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট