সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সুন্দরবনের বনজীবীরা ঋণের দায়ে দিশেহারা , কিস্তির টাকার জন্য বাড়ি বাড়ি ছুটছে এনজিওরা । দিশেহারা হয়ে পড়াচ্ছে বনজীবীরা।সাতক্ষীরা উপকূলীয় পশ্চিম সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকার জেলেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন ঋণের দায়ে। জীবিকা নির্বাহের জন্য সুন্দরবনের মাছ ও কাঁকড়া আহরণের ওপর নির্ভরশীল এই মানুষগুলো একদিকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অন্যদিকে বিভিন্ন কোম্পানির শোষণের কারণে ক্রমেই নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনে প্রবেশ করে মাছ, কাঁকড়া আহরণের জন্য জেলেদের আগে থেকেই বিভিন্ন কোম্পানির কাছে মোটা অংকের টাকা ধার নিতে হয়। কোম্পানিগুলো জেলেদের হাতে নৌকা, জালসহ প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম দিলেও শর্ত থাকে— আহরিত মাছ ও কাঁকড়া কেবল তাদের মাধ্যমে বিক্রি করতে হবে। বাজার মূল্যের তুলনায় অনেক কম দামে পণ্য বিক্রি করতে বাধ্য হওয়ায় জেলেরা লাভ তো দূরের কথা, বরং প্রতিনিয়ত ঋণের দায়ে ডুবে যাচ্ছেন।
জেলেদের অভিযোগ, কোম্পানিরা অগ্রিম টাকা দিয়ে মূলত তাদের শিকলবন্দি করে রাখে। বছরে যতই পরিশ্রম করি না কেন, ঋণের বোঝা মাথা থেকে নামছে না। অনেকে ঋণ শোধ করতে গিয়ে নতুন করে আরেক ঋণে জড়াচ্ছেন। ফলে চক্রবৃত্তের মতো ঋণের ফাঁদে আটকা পড়েছেন হাজারো পরিবার।
শুধু তাই নয়, নদীতে পর্যাপ্ত মাছ ও কাঁকড়া না থাকায় জেলেরা বনের ভেতরে গভীর পর্যন্ত যেতে বাধ্য হচ্ছেন। এতে একদিকে বাড়ছে তাদের ঝুঁকি, অন্যদিকে বনবিভাগের কঠোর নজরদারির কারণে প্রায়ই জরিমানা কিংবা কারাদ-ের শিকার হতে হচ্ছে।
স্থানীয় জেলে আব্দুল হামিদসহ বেশ কয়েকজন জানান, কোম্পানির কাছে ঋণ না নিলে জাল-নৌকা নিয়ে নদীতে নামা যায় না। আবার মাছ বা কাঁকড়া পেলেও বাজারদরের অর্ধেক দামে বিক্রি করতে হয়। এক ঋণ শোধ করতে গিয়ে আরেক ঋণ নিতে হয়। এখন মনে হয় এই পেশা ছেড়ে দেওয়া ছাড়া আর উপায় নেই।
এ বিষয়ে কোম্পানিদের সাথে কথা বললে কোম্পানি এরা বলেন জেলেরা আমাদের নিকট থেকে টাকা নিয়ে সুন্দরবনের মাছ কাঁকড়া আহরণ করতে যায় ঠিক আছে তবে, জেলেরা যেখানে মাছ বিক্রি করতে চাই আমরা তাদেরকে সেখানে মাছ বিক্রি করতে বলি, আমরা কোন সময় তাদেরকে বাধা প্রদান করি না আমরা শুধুমাত্র তাদের টাকা দেওয়ার জন্য একটা ভাগ নেই।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জেলেদের এই দুঃসহ পরিস্থিতি থেকে মুক্ত করতে হলে সরকারি তদারকি বাড়াতে হবে। জেলেদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ ব্যবস্থা চালু করা এবং বাজারে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা জরুরি। অন্যথায় সুন্দরবনঘেঁষা উপকূলের হাজার হাজার জেলে পরিবার ঋণ শোধ করতে না পেরে একসময় সম্পূর্ণরূপে দেউলিয়া হয়ে পড়বে।