1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
সোমবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:৫৭ অপরাহ্ন

সাতক্ষীরার উপকূলেএক দল কাটে গাছ, অন্যরা খোঁড়ে গর্ত

  • প্রকাশিত: সোমবার, ৬ অক্টোবর, ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : বছরের পর বছর অল্প অল্প করে জমতে থাকে পলি। সেখানেই বাড়তে থাকে গাছপালা। ১৫-২০ বছর আগে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা সুশীলনের উদ্যোগে সামাজিক বনায়ন কর্মসূচির আওতায় রোপণ করা হয় গাছ। জোয়ারে ভেসে আসা পলি জমে আয়তন বাড়ে চৌদ্দরশি চরের। জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় এই বনাঞ্চল বুক পেতে রক্ষা করে পাশের জনপদ। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ৭০০ একরের বনাঞ্চল ধ্বংসের মুখে পড়েছে। ভাঙনের ঝুঁকি বাড়ছে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার খোলপেটুয়া নদীতীরে।
এই উপজেলার গাবুরা ও পদ্মপুকুর ইউনিয়নে পড়েছে চৌদ্দরশি চর। পাশের জনপদের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, কয়েক বছর ধরেই চর বনায়নের গাছ কাটা হচ্ছে। তবে চার-পাঁচ মাস ধরে রাতের বেলায় দুর্বৃত্তরা করাত ও কুড়াল দিয়ে প্রচুর গাছ কাটছে। দিনে অন্তত ৩০-৪০টি গাছ কাটা হচ্ছে। কাটা গাছের অংশে পরক্ষণেই গর্ত খুঁড়ে রাখছেন স্থানীয় লোকজন। ভাটার টানে পানি নেমে গেলে সেখানে জমা হওয়া মাছের রেণু শিকার করেন তারা। এসব বিক্রি হয় স্থানীয় বাজারে। ফলে খোলপেটুয়া তীরের মানুষের মনে ভাঙনের ভয় ভর করেছে।
বৃহস্পতিবার দেখা গেছে, চরে ছোট-বড় নানা প্রজাতির গাছ কাটা হয়েছে। কাটা গাছের ডালপালা ফেলে রাখা হয়েছে এখানে-ওখানে। ফাঁকা অংশে অসংখ্য গর্ত খুঁড়ে রাখা। এসব গর্তে জোয়ারের সময় পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। ভাটায় সেখানে আটকা পড়ে রেণু।
এদিন কথা হয় পদ্মপুকুর ইউনিয়নের পাতাখালী গ্রামের মাছচাষি খোকন সরদারের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, আগে এই চরে প্রচুর গাছ ছিল। এখন প্রায় ফাঁকা হয়ে গেছে। শব্দ যাতে লোকালয়ে না পৌঁছায় সেজন্য দুর্বৃত্তরা করাত দিয়ে গাছ কাটছে। তারা অনেক সময় গাছ কেটে রেখে যায়। দুই-এক দিন পর নিয়ে যায়। তারা লোকজনকে বোঝাতে চায় যে, মরা গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছেন।
একই গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মোস্তফা আল আমিন বলেন, খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ঘেঁষে প্রায় ৭০০ বিঘা জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছিল বনটি। দেদার গাছ কাটায় সেটি ধ্বংসের পথে। নদীপারের মানুষ জ্বালানি কাঠ, ঘর তৈরির কাঠ আর আসবাবের জন্য পুরোপুরি এই বনের ওপর নির্ভরশীল। এ ছাড়া মাছশিকারিদের দৌরাত্ম্যে নতুন গাছও জন্মাতে পারছে না।
এ অবস্থায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় প্লাবনসহ ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে এলাকার মানুষ। তারা জানায়, জলোচ্ছ্বাস বা ঘূর্ণিঝড়ের সময় এই বনাঞ্চল দীর্ঘদিন ধরে তাদের রক্ষা করে এসেছে। উপজেলার বিভিন্ন অংশে নদীভাঙন দেখা দিলেও চৌদ্দরশি এলাকার মানুষ ওই বনভূমির কারণে এতদিন ভাঙনের শিকার হননি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মাদকসেবী, চোরাকারবারি ও রেণু পোনাশিকারিরা চরের হাজার হাজার গাছ কেটে নিচ্ছে। দিনে ৩০-৪০টি গাছ কাটা পড়ছে। সে হিসাবে ইতোমধ্যে কয়েক মাসে অন্তত পাঁচ হাজার গাছ কাটা হয়েছে।
পাতাখালীর ঘের মালিক আবু মুছার অভিযোগ, দুর্বৃত্তরা দিনের বেলায় গাছ কেটে রেখে যায়, আর জোয়ারের সময় নৌকায় করে নিয়ে যায়। পাশের গাবুরা ইউনিয়ন থেকেও নৌকা নিয়ে অনেকে কেওড়া ফল সংগ্রহের নামে বড় বড় গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। নিষেধ করলেও শুনছে না। আগে বন রক্ষায় একটা কমিটি ছিল, এখন আর নেই। সেই সুযোগে নির্বিচারে গাছ কাটা চলছে।
৮৩ নম্বর পশ্চিম পাতাখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস. এম রুহুল কুদ্দুসের অভিযোগ, গাবুরার খোলপেটুয়া গ্রামের কিছু লোক, পদ্মপুকুরের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পূর্ব পাতাখালী গ্রামের দক্ষিণপাড়ার ২৫-৩০ জন বাসিন্দা ও বনসংলগ্ন বাঁধের ওপরে বসবাসরত লোকজন সরাসরি এ বন নিধনে জড়িত। এ ছাড়া মাদকসেবীরাও মাদকের টাকা সংগ্রহের জন্য বনের গাছ চুরি করে কাটছে।
স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে গাছ কাটায় জড়িত কয়েকজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন– পূর্ব পাতাখালী গ্রামের শাহজাহান, তাঁর ভাই শাহজামাল, একই এলাকার আশরাফ ও মহিবুল্লাহ। এ ছাড়া ওই এলাকার ১০-১২ জনের নেতৃত্বে এভাবে গাছ কাটা চলছে।
বিষয়টি স্বীকার করে শাহজাহান ও মহিবুল্লাহ দাবি করেন, সবাই গাছ কাটে বলে তারাও কাটেন। অন্যরা না কাটলে তারা কাটতেন না।
গাছ কাটায় প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারানো, প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিষয়ে জানেন কিনা, এমন প্রশ্নের উত্তরে মহিবুল্লাহ বলেন, ‘সবাই তো এসব বিষয় জানে। তার পরও যেহেতু তারা কাটে, কেউ কোনো বাধা দেয় না; তাই আমরাও কাটি।’
পরিবেশবাদী সংগঠন ইয়ুথনেট গ্লোবালের নির্বাহী পরিচালক সোহানুর রহমানের ভাষ্য, বনের ভেতরে গর্ত করে মাছের পোনা ধরা আর নির্বিচারে গাছ কাটা পরিবেশের জন্য হুমকি। এতে নতুন করে গাছ জন্মায় না। জীববৈচিত্র্য বিনষ্ট হয়। সামাজিক এসব বন উপকূল রক্ষার প্রাকৃতিক বেষ্টনী হিসেবে কাজ করে। বন ধ্বংস হলে পরিবেশের ভারসাম্য পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যাবে।
সামাজিক বন বিভাগের কর্মকর্তা আছাফুর রহমান বলেন, ১৫-২০ বছর আগে সুশীলন নামের একটি এনজিও খোলপেটুয়া নদীর চরে প্রথম গাছ লাগায়। পরে সুন্দরবনের ভেসে আসা ফুল ও ফল চরে জমে বনভূমির বিস্তার ঘটেছে। জায়গাটি এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত হওয়ায় রক্ষণাবেক্ষণের
দায় সামাজিক বন বিভাগের নয়। ইউএনওর নির্দেশে শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তাৎক্ষণিকভাবে সংখ্যা নির্ধারণ করতে না পারলেও তাঁর দাবি, ৬০০-৭০০ গাছ কাটা পড়েছে বলে
মনে হচ্ছে।
সুশীলনের নির্বাহী প্রধান মোস্তফা নুরুজ্জামান বলেন, দুর্যোগকবলিত এলাকার ভাঙন রোধে খোলপেটুয়া নদীর প্রায় ১০০ হেক্টর চরজুড়ে তারা দুই লক্ষাধিক চারা রোপণ করেছিলেন। তা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের ওপর দায়িত্ব দেওয়া হয়। সেখান থেকে গাছ কেটে নেওয়ার বিষয়ে কেউ জানায়নি। দায়িত্বশীল স্থানীয় ব্যক্তিদের পাঠিয়ে খোঁজ নেবেন।
পদ্মপুকুর ইউপি চেয়ারম্যান আমজাদুল ইসলামের ভাষ্য, কিছু দুর্বৃত্ত চুরি করে এসব গাছ কেটে পাচার করছে। যারা জড়িত, তাদের ধরার
চেষ্টা করছেন।
চর বনায়নের গাছ কাটাকে দুঃখজনক হিসেবে বর্ণনা করেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রনী খাতুন। তিনি বলেন, দুই ইউপির চেয়ারম্যান ও সামাজিক বন বিভাগকে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট