1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:১৭ অপরাহ্ন

শৈশব হারাচ্ছে উপকূলীয় শিশুরা

  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর, ২০২৫
  • ২৭ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ‌: বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের মোট দৈর্ঘ্য ৭১০ কিলোমিটার। সর্ব দক্ষিণের টেকনাফ থেকে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্তবর্তী রায়মঙ্গল-কালিন্দী নদী পর্যন্ত এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের ১৪টি জেলা নিয়ে এ অঞ্চল গঠিত। দেশের মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী বসবাস করে এসব উপকূলীয় অঞ্চলে। মত্স্য, কৃষি, পর্যটন কিংবা রপ্তানিমুখী নানা শিল্পে অগ্রসরতার মাধ্যমে জাতীয় অর্থনীতিতে প্রতিনিয়ত অবদান রেখে চললেও এসব এলাকার মানুষকে যাপন করতে হয় মানবেতর জীবন। ঝড়, বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, জলাবদ্ধতার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়িয়ে তুলেছে এসব এলাকার ফসলহানি, মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি ও বাস্তুচ্যুতিসহ বিভিন্ন সমস্যা। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোর শিশুদের ওপর। জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের ১ কোটি ২০ লাখ শিশু ঝুঁকিতে রয়েছে। যাদের ভেতর ৪৫ লাখ উপকূল শিশু।
হাসি-আনন্দ, খেলাধুলা, শিক্ষার আলোয় শিশুরা বেড়ে উঠবে—এমনটাই হওয়ার কথা থাকলেও উপকূলীয় শিশুদের ক্ষেত্রে চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। জন্মলগ্ন থেকেই ক্ষুধা, দারিদ্র্য, বৈষম্য কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে লড়াই করার প্রস্তুতি নিতে নিতে বেড়ে উঠতে হয় তাদের। জ্ঞান হওয়া মাত্রই কাঁধে চাপে সংসারের বোঝা। শুরু হয় অনিশ্চিত এক গন্তব্যের পথচলা। বর্তমানের তাড়নায় ভবিষ্যতের চিন্তা কখনোই আর ভর করতে পারে না তাদের মাথায়। অল্প বয়সে সংসারের বোঝা কাঁধে চাপায় শৈশব থেকেই শুরু হয় বিবর্ণ কর্মজীবনের সূচনা। কখনো জেলে, কখনো কৃষক, কখনো-বা কঠোর পরিশ্রমী দিনমজুরের কাজ করে এসব শিশু। সারা দিনের হাড়ভাঙা খাটুনি তাই শিক্ষাকে অমাবস্যার চাঁদে পরিণত করেছে এসব শিশুর কাছে। শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপকূলের হাজার হাজার শিশু। যা তাদের আর্থ সামাজিক অবস্থানকে নিম্নদিকে ধাবিত করছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যনুসারে, ৫-১৭ বছর বয়সি শিশুদের মধ্যে ৬.৮ শতাংশ শিশু শ্রমের সঙ্গে জড়িত। স্কুলে যাওয়া শিশুদের (৪.৪ শতাংশ) তুলনায় স্কুলে না যাওয়া শিশুদের (১৮.৯ শতাংশ) মধ্যে এই হার বেশি।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা। যার ফলে স্বাভাবিক জোয়ারের পানিতেও প্লাবিত হয়ে যায় উপকূলীয় অঞ্চলগুলো। দীর্ঘ সময় জলাবদ্ধ পরিবেশে বসবাস এবং লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে সুপেয় পানীয় জলের অভাবে শিশুরা আক্রান্ত হয় নানা ধরনের পানিবাহিত রোগ যেমন: কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিস, আমাশয়, ডায়রিয়া এবং বিভিন্ন ধরনের চর্মরোগে। প্রতিদিন সুপেয় নিরাপদ পানির প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয় এসব শিশুকে। এছাড়া প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা না থাকায় চরম স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছে এসব শিশু। ভরণপোষণের সামর্থ্য না থাকায় উপকূলীয় অঞ্চলের বেশির ভাগ মেয়ে শিশুই বাল্যবিবাহের শিকার হয়; যা তাদের স্বাস্থ্য এবং নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে। ইউনিসেফের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশে ১৫-১৭ বছর বয়সি ১৫.৪ শতাংশ নারী বিবাহিত। এ ছাড়াও ২০-২৪ বছর বয়সি ১৫.৫ শতাংশ নারীর ১৫ বছর বয়সের আগেই বিয়ে হয়। পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের অভাবে এসব এলাকার অধিকাংশ শিশুই পুষ্টিহীনতায় ভোগে। মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে (এমআইসিএস) ২০১৯-এর তথ্য মতে, বাংলাদেশে  শিশুদের শৈশবকালীন খর্বাকৃতির  হার  ২৮ শতাংশ এবং মাঝারি ধরনের ও মারাত্মক পর্যায়ের কম ওজনের হার ২২.৬ শতাংশ। ঝড়, জলোচ্ছ্বাস, নদীভাঙন ছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রতি বছর উল্লেখযোগ্যহারে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে বহু উপকূল শিশু। এসব শিশুরা উদ্বাস্তু হয়ে চলে আসে শহরে। ভিড়ে যায় ছিন্নমূল শিশুদের দলে। সামাজিক বৈষম্য, নিম্ন জীবনযাত্রা কিংবা ক্ষুধার জ্বালা নিবারণে বাধ্য হয়ে এসব শিশু প্রতিনিয়ত মাদক গ্রহণ, মাদক ব্যবসা, ভিক্ষাবৃত্তিসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে। মেয়ে শিশুরা জোরপূর্বক শিকার হচ্ছে যৌন নির্যাতনের। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্যমতে, প্রতি মাসে গড়ে ৮৪ জন শিশু যৌন নির্যাতনের শিকার হয়; যা  এ শিশুদেরকে মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত করে তুলছে। ফলে শৈশবের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে বৈষম্য, নির্যাতনের শিকার এবং অধিকার বঞ্চিত হয়ে শিশুরা হারিয়ে ফেলছে তাদের বিকশিত হয়ে ওঠার শৈশব।
বাংলাদেশে শিশু অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন আইন এবং নীতিমালা থাকলেও উপকূলীয় শিশুদের ক্ষেত্রে নেই তার সঠিক প্রয়োগ। প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধার অভাবে হাজারো সম্ভাবনা আলোর মুখ দেখার আগেই নিমজ্জিত হচ্ছে অন্ধকারের অতল গহিনে। এসব অঞ্চলের শিশুদের অধিকার নিশ্চিতে রাষ্ট্রের তত্পরতা জরুরি। উপকূলের সবুজ বেষ্টনী বাড়ানো, স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন যেমন একদিকে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোকে রক্ষা করবে অপরদিকে উপকূলীয় জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নেও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। অধিকার বঞ্চিত শিশুরা ফিরে পাবে শৈশব।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট