
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার কলারোয়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এখনো অনেক খাবার বিক্রেতা খাবার মোড়াতে ব্যবহার করছেন খবরের কাগজ ও পুরাতন বইয়ের পৃষ্ঠা। ভাজাপোড়া, চানাচুর, ঝালমুড়ি কিংবা পিঠা সবই দেখা যায় পুরনো কাগজে মোড়ানো অবস্থায়। বিক্রেতারা বলছেন, এতে খরচ কম এবং সহজলভ্য; কিন্তু এই অভ্যাস নীরব বিষক্রিয়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।
সংবাদপত্রে ব্যবহৃত ছাপার কালি (printing ink) তৈরি হয় ভারী ধাতু, সালভেন্ট ও রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে। গরম বা তৈলাক্ত খাবার সেই কাগজের সংস্পর্শে এলে কালি থেকে রাসায়নিক পদার্থ খাবারে মিশে যেতে পারে। ফলে শরীরে লেড (lead) ও ক্যাডমিয়াম (cadmium) জমে গিয়ে লিভার, কিডনি ও স্নায়ুতন্ত্রে মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। দীর্ঘদিন এমন খাবার খেলে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বাড়ে।
কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডাঃ বাপ্পী কুমার দাস বলেন, “খবরের কাগজের কালি তেল বা গরম খাবারে মিশে গেলে তা ধীরে ধীরে শরীরে বিষক্রিয়া ঘটায়। এটি শিশুদের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর।”
পুরাতন বই বা কাগজে ধুলাবালি, ছত্রাক ও ব্যাকটেরিয়া জন্মে। সেই কাগজে খাবার মোড়ালে খাদ্যবাহিত রোগ (Foodborne Disease) হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়। চিকিৎসকদের মতে, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পাকস্থলীজনিত সমস্যা ও পেটের সংক্রমণ বেড়েছে, এর একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে অস্বাস্থ্যকর মোড়কজাত খাবার।
খাদ্য নিরাপত্তা আইন, ২০১৩ অনুযায়ী, খাবারের সঙ্গে এমন কোনো উপাদান ব্যবহার করা যাবে না যা মানুষের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে।সম্প্রতি বাংলাদেশ ফুড সেফটি অথরিটি (BFSA) একটি “Food Contact Material Regulation–2024” খসড়া করেছে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা আছে “সংবাদপত্র বা মুদ্রিত পৃষ্ঠা কোনোভাবেই খাবারের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শে আনা যাবে না।”
তবে এই আইন এখনো বাস্তবায়ন পর্যায়ে আসেনি। ফলে মাঠপর্যায়ে এর প্রভাব তেমন দেখা যাচ্ছে না।কলারোয়া বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ খাবার বিক্রেতা এই ঝুঁকি সম্পর্কে অবগত নন। তারা বলেন, “খবরের কাগজ সহজে পাওয়া যায়, অন্য মোড়কের খরচ বেশি। ক্রেতারাও কিছু বলে না।”এ বিষয়ে জানতে চাইলে, কলারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম বলেন, “এখনো এ বিষয়ে কোনো নির্দিষ্ট অভিযান চালানো হয়নি। নিরাপদ খাদ্য আইনের আলোকে বিষয়টি নজরে আনা হবে এবং বিক্রেতাদের সচেতন করা হবে।”
খাবারের নিরাপত্তা শুধু রান্না বা উপকরণের মানে নয়, বরং কীভাবে তা সংরক্ষণ ও পরিবেশন করা হচ্ছে সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ।খবরের কাগজে বা পুরাতন বইয়ের পৃষ্ঠায় খাবার বিক্রির এই প্রচলন বন্ধ করতে প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপ ও সাধারণ মানুষের সচেতনতা এখন সময়ের দাবি।