1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
সোমবার, ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৩৯ অপরাহ্ন

যশোর-২ বিএনপি নেতাকর্মীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ, উচ্ছ্বসিত জামায়াত

  • প্রকাশিত: সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫
  • ২২ বার পড়া হয়েছে

যশোর প্রতিনিধি : যশোর-২ (চৌগাছা-ঝিকরগাছা) আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেয়েছেন সাবিরা সুলতানা মুন্নি। তবে এ ঘোষণায় হতাশায় নিমজ্জিত হয়ে পড়েছেন দুই উপজেলার তৃণমূলের কর্মী, সমর্থকরা। তাদের দাবি ঘোষিত প্রার্থীকে নিয়ে জামায়াতের ঘাঁটিখ্যাত এ আসনে লড়াই করা দুষ্কর হয়ে পড়বে। কারণ জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মোসলেহ উদ্দিন ফরিদ দলীয় প্রভাবের বাইরে নানা সমীকরণে এগিয়ে রয়েছেন।
যশোরের ভারত সীমান্তবর্তী দুই উপজেলা ঝিকরগাছা ও চৌগাছা নিয়ে যশোর-২ আসন গঠিত। গত চারটি একতরফা সংসদ নির্বাচনের তিনটিতেই আওয়ামী লীগ এ আসনটিতে ইচ্ছাখুশিমতো প্রার্থী দিয়ে সংসদ সদস্য বানায়। এসব প্রার্থীদের বাড়ি ঝিকরগাছাতে হলেও তারা সবাই ছিলেন ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত। এলাকার সাথে তাদের সম্পর্ক ছিল খুবই কম। যা নিয়ে এলাকার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মাঝেও ছিল ক্ষোভ। তবে এবার মাঠে আওয়ামী লীগ নেই। আগামী সংসদ নির্বাচনে মূলত বিএনপি প্রার্থীর সাথে জামায়াত প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবে, তা মোটামুটি স্পষ্ট। জেলার অন্য আসনগুলোর মতো জামায়াত অনেক আগেই এ আসনেও তাদের প্রার্থী চুড়ান্ত করেছে। কিন্তু বিএনপি তাদের প্রার্থীর নাম প্রকাশ করেছে গত ৩ নভেম্বর। এ আসনে প্রাথমিক মনোনয়ন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সাবেক অর্থ সম্পাদক প্রয়াত নাজমুল ইসলামের স্ত্রী ও ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবিরা সুলতানা মুন্নী। তার স্বামী নাজমুল ইসলাম ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় গুম ও হত্যার শিকার হন।
অপরদিকে এ আসনে জামায়াতের প্রার্থী ডাঃ মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ। তিনি ছাত্র জীবনে ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঢাকা মেডিকেল কলেজ শাখার সাবেক সভাপতি ছিলেন। তিনি যশোরের বিখ্যাত খড়কী পীর বাড়ির সন্তান সর্বজনশ্রদ্ধেয় অধ্যাপক শরিফ হোসেনের সন্তান। পাশাপাশি দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান আদ্ব-দ্বীন ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডাঃ শেখ মহিউদ্দিনের শ্যালক। ঝিকরগাছা-চৌগাছা জুড়ে এ প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রভাব বলয় রয়েছে। এ ধরনের নানা সমীকরণে জামায়াতে ইসলামীর ঘাঁটিখ্যাত এ আসনে হেবিওয়েট প্রার্থী বনে গেছেন ডাঃ মোসলেহ উদ্দীন ফরিদ। তার বিপরীতে লড়াইয়ে নারী প্রার্থীর মনোনয়নে বিএনপি নেতাকর্মীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দিয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পেতে জোর চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন দলটির পাঁচ নেতা। তাদের মধ্যে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ও জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খান দেড় যুগ ধরে এ দুই উপজেলার তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সুখে-দু:খে পাশে থেকেছেন।
মনোনয়ন দৌড়ে ছিলেন চৌগাছা বিএনপির সাবেক সভাপতি জহুরুল ইসলাম, যশোর পৌরসভার সাবেক চেয়ারম্যান জেলা বিএনপির সিনিয়র নেতা মোহাম্মদ ইসহাক,ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইমরান হাসান সামাদ নিপুন ও ঝিকরগাছা বিএনপির সভাপতি সাবিরা সুলতানা মুন্নী।
দলীয় নেতাকর্মীদের মতে, পাঁচ নেতার মধ্যে অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে থাকা সাবিরা সুলতানাকে সহানুভূতি দেখিয়ে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। ফলে তাকে নিয়ে নির্বাচনী বৈতরণী পার করা কঠিন হবে। কারণ হিসেবে তারা বলেন, তার স্বামী গুম ও হত্যার শিকার হওয়ায় সহানুভূতির জায়গা থেকেই তাকে রাজনীতিতে আনা হয়েছিল। সহানুভূতিকে পুঁজি করে ২০১৪ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের সময় স্থানীয় এমপি অ্যাডভোকেট মনিরুল ইসলাম ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের সাথে সমঝোতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়া ফ্যাসিস্ট বিরোধী দলীয় মুভমেন্টে তার অংশগ্রহণ তেমন ছিলো না। সর্বোপরি যশোর-২ আসন ঝিকরগাছা ও চৌগাছা দুই উপজেলা নিয়ে গঠিত। ঝিকরগাছায় কিছুটা জনপ্রিয়তা থালেও চৌগাছা ঠিক তার উল্টো চিত্র। চৌগাছার নিজদলীয় লোকজনের কাছে, এমনকি সাধারণ ভোটারদের কাছে তিনি নতুন মুখ।
ঝিকরগাছার পারবাজার এলকার আব্দুল আজিজ নামে এক ভোটার বলেন, আমাদের আসনে দীর্ঘদিন আগেই জামায়াতে ইসলামীর একক মনোনীত প্রার্থী মোসলেহ উদ্দিন ফরিদ। তিনি মাঠ পর্যায়ে কাজ করে চলেছেন। মেডিকেল ক্যাম্পসহ নানারকম সমাজসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। মাঠে তার শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে। অপরদিকে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী মিজানুর রহমান খাঁন, জহুরুল ইসলাম ও সাবিরা সুলতানা মুন্নি নির্বাচনী এলাকায় প্রচারনা চালিয়ে আসছিলেন। তাদের মধ্যে সাবিরা সুলতানাকে বিএনপি প্রার্থী করেছে। কিন্তু তিনি অপর মনোনয়ন প্রত্যাশী মিজানুর রহমান, জহুরুল ইসলাম ও ইমরান হাসান সামাদ নিপুনের থেকে কিছুটা পিছিয়ে ছিলেন। জনগণ ও নেতাকর্মীদের সাথে তার সম্পৃক্ততা কম থাকায় ভোট যুদ্ধে তার বিজয়ের সম্ভাবনা কম।
লিটন সরদার নামে এক বিএনপি কর্মী বলেন, আমরা আশায় বুক বেঁধেছিলাম এবার যশোর-২ আসনটি বিএনপির হবে। তারেক রহমানের হাতকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে মনোনীত প্রার্থীকে নিয়ে আমরা ধানের শীষের পক্ষে উচ্ছ্বসিত ভাবে কাজ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রার্থীতা প্রকাশের পর আমার মত অধিকাংশ নেতাকর্মীর মুখে হতাশার ছাপ দেখা দিয়েছে।
ঝিকরগাছা বাজার এলাকার ভ্যান চালক মহিনূর আলী বলেন, জামায়াতের নেতাকর্মীরা নারী নেতৃত্ব হারাম বলে প্রচার প্রচারণা শুরু করেছে। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করছে। তাছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান থাকাকালে তারা নানা দুর্বলতার বিষয়কে টেনে আনছে। এ অবস্থায় তাকে নিয়ে ভোটের দৌড়ে টিকে থাকা কঠিন।
দুই উপজেলার অসংখ্য সাধারণ ভোটারের সাথে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন পর নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তারা। ফলে একজন জনবান্ধব, সৎ, ভালো প্রার্থীকে বেছে নিতে চান তারা। তাদের ভাষ্যমতে বিএনপি ও জামায়াতের দুই প্রার্থীর মধ্যে জামায়াতের প্রার্থীর পাল্লা ভারি। তারা উচ্ছ্বসিত।
উজ্জ্বল হোসেন নামে এক কর্মী বলেন, বিএনপি এমন একজনকে প্রার্থী দিয়েছে যাকে আমরা চিনি না। দুঃসময়ে তাকে কখনো দেখিনি। তার সাথে নেতাকর্মীদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা চাই এ আসনে প্রার্থী বদল করা হোক।
চৌগাছার ব্যবসায়ী সাজু হোসেন বলেন, জামায়াত দলগতভাবে এগিয়ে রয়েছে তা তাদের প্রার্থীর ফেসবুক স্ট্যাটাসে বোঝা যায়। তিনি বলেন, বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাবিরা সুলতানার নাম ঘোষণার পর জামায়াতের প্রার্থী ‘ইনশাআল্লাহ’ স্ট্যাটাস দেন। যা সকলের নজর কেড়েছে এবং আলোচনায় রয়েছে। বিএনপি শক্তিশালী প্রার্থী দিতে পারলে হয়তো তিনি এমন স্ট্যাটাস দিতেন না।
ঝিকরগাছা ও চৌগাছা উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আমাদের প্রার্থী মনোনয়ন যুতসই হয়নি। দলের মধ্যে ক্ষোভ বিক্ষোভ বাড়ছে। প্রকাশ্যে কেউ কিছু না বললেও ভোটে এর প্রভাব পড়বে।
তারা আরো বলেন, দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গত ৬ নভেম্বর যশোরে সাবেক মন্ত্রী তরিকুল ইসলামের স্মরণসভায় এসেছিলেন। বক্তব্যে তিনি বলেছেন ঘোষিত প্রার্থী তালিকা প্রাথমিক। এটা চুড়ান্ত নয়। ফলে সুযোগ আছে যোগ্য প্রার্থী নির্ধারণের। সেটা যদি না করা হয় হাতছাড়া হতে পারে এ আসন।
অবশ্য পদধারী নেতাদের দাবি প্রার্থী যেমন হোক ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করবেন তারা। এবং বিজয় ছিনিয়ে আনবেন।
ঝিকরগাছা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক সাজ্জাদুল কবির রিটন বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন তার সাথেই থাকবে দলীয় নেতাকর্মীরা। যে ক্ষোভ বিরাজ করছে তা থাকবে না। কারণ নেতার চেয়ে দল বড়। দলের সিদ্ধান্ত সকলেই মেনে চলবেন।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট