
ডেস্ক রিপোর্ট : আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য করতে নির্বাচনী আচরণবিধি কঠোরভাবে পালন করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দীন। তার মতে, আচরণবিধি মানা হলে নির্বাচন প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হবে। আর রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতাই এতে ভূমিকা রাখবে।
রোববার (১৬ নভেম্বর) রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সংলাপের দ্বিতীয় দিনের প্রথম সেশনে সূচনা বক্তব্যে এসব কথা বলেন সিইসি।
সংলাপে অন্য চার নির্বাচন কমিশনার, ইসির সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ছয়টি দল গণফোরাম, গণফ্রন্ট, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ, ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (বিএসপি) এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির প্রতিনিধিরা সংলাপে অংশ নিয়েছেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘২০২৪ সালের ২৪ নভেম্বর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই কমিশনকে একাধিক বড় ও জটিল কাজে হাত দিতে হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল ভোটার তালিকা হালনাগাদ।
‘৭৭ হাজার মাঠকর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কয়েক মাস ধরে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় প্রায় ২১ লাখ মৃত ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে-যারা অতীতে তালিকায় থেকে যেতেন এবং তাদের নামে ভোট পড়ার ঝুঁকি ছিল। একই সঙ্গে ৪০ লাখের বেশি নতুন ভোটার শনাক্ত করা হয়েছে, যারা ভোটার বয়সে উপনীত হলেও তালিকায় নাম ছিল না।’
নাসির উদ্দীন বলেন, ‘এ বছর কমিশন বেশ কয়েকটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় পদক্ষেপ হলো প্রবাসী বাংলাদেশিদের পোস্টাল ব্যালটে ভোটদান। বিষয়টি অত্যন্ত জটিল ও বিশ্বজুড়ে বহু দেশে এখনো সফলভাবে বাস্তবায়ন করা যায়নি।
‘বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আমরা একটি কার্যকর অপশন বের করেছি। প্রথমবারের মতো প্রবাসী ডায়াসপোরার ভোট নিশ্চিত করতে পারছি।’
সিইসি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রিসাইডিং ও পোলিং কর্মকর্তাসহ প্রতি নির্বাচনে প্রায় ১০ লক্ষাধিক মানুষ ভোটগ্রহণ কাজে দায়িত্ব পালন করেন। তারা নিজেরা কখনো ভোট দিতে পারেন না। এবার তাদের জন্যও ভোটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়া নিজ দায়িত্বের বাইরে কর্মস্থলে থাকা সরকারি চাকরিজীবী ও কারাবন্দিদের জন্যও ভোটদানের নতুন ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নাসির উদ্দীন বলেন, ‘নির্বাচনী সংস্কার কমিশন রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে ৮০টির বেশি সংলাপ করেছে, যা ইসিকে নীতিনির্ধারণে সহায়তা করেছে। সরকারের পক্ষ থেকে ওই সংস্কারের কিছু সুপারিশ যৌথভাবে বাস্তবায়নের ঘোষণাও রয়েছে।
‘এতগুলো কাজের কারণে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনার সময় কিছুটা পিছিয়ে গেছে। তবে পূর্ববর্তী সংস্কার প্রক্রিয়ায় অনেক মতবিনিময় ইতোমধ্যে সম্পন্ন হওয়ায় সেটি বড় সমস্যা হয়নি।’
নির্বাচনের আচরণবিধির খসড়া দীর্ঘদিন ওয়েবসাইটে উন্মুক্ত রেখে রাজনৈতিক দলসহ সবার মতামত নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং বা মতামত শেষে আচরণবিধি এখন প্রস্তুত।
সিইসি বলেন, ‘আচরণবিধি সঠিকভাবে পালন করা হলে নির্বাচন সুন্দরভাবে হবে। এজন্য আপনাদের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি।’
নিজেদের কর্মীদের আচরণবিধি সম্পর্কে ব্রিফ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি অনুরোধ জানিয়ে নাসির উদ্দীন বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একা সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করতে পারে না। এর জন্য রাজনৈতিক নেতৃত্বের সহযোগিতা অপরিহার্য।