
তালা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার সদর ইউনিয়নের কিসমতঘোনা গ্রামের রাবেয়া খাতুন (৩২) এখন এলাকার সফল মৎস্যখাদ্য উৎপাদক হিসেবে পরিচিত। বাজারে কেনা মাছের খাদ্যের বিকল্প হিসেবে কালো সৈনিক পোকার (ব্ল্যাক সোলজার ফ্লাই) পিউপা ও লার্ভা উৎপাদন করে তিনি এলাকায় সাড়া ফেলেছেন। তাঁর খামার এখন অনেকের শেখার জায়গা, অনেকে নিয়মিত এসে দেখছেন এবং অনুপ্রাণিত হচ্ছেন।
রাবেয়া খাতুনের পরিবারে সদস্য সংখ্যা ছয়জন। মাছ ও চিংড়ি চাষ করে তাঁদের সংসার চলে। তাঁদের দুটি ঘের রয়েছে। একসময় বাজারে মাছের খাবারের দাম কম থাকায় মাছ চাষ লাভজনক ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়।
এ সময় তিনি যুক্ত হন সাতক্ষীরা উন্নয়ন সংস্থা (সাস) বাস্তবায়িত ও পিকেএসএফ, ইফাদ, ডানিডা সহযোগিতায় আরএমটিপি প্রকল্পের ‘নিরাপদ মৎস্য ও মৎস্য পণ্য উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ’ ভ্যালু চেইন উপপ্রকল্পের সঙ্গে। এর আওতায় কালো সৈনিক পোকা উৎপাদন বিষয়ে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণে অংশ নেন রাবেয়া। প্রশিক্ষণ শেষে আগ্রহ ও সামর্থ্যের ভিত্তিতে তাঁকে ৪০ হাজার টাকার প্রদর্শনী সেটআপ দেওয়া হয়। স্বামী মনিরুজ্জামান সোহাগের সহযোগিতা ও নিয়মিত যত্নে মাত্র দুই মাসের মধ্যে রাবেয়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পিউপা ও লার্ভা উৎপাদন করতে সক্ষম হন। বর্তমানে তিনি প্রতিদিন গড়ে ৮-১০ কেজি লার্ভা নিজের ঘেরে ব্যবহার করছেন। এর ফলে মাছ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মাছের খাবারের ব্যয় প্রায় ৩০ শতাংশ কমে গেছে। ফলে তিনি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি লাভবান। শুরুর দিকে কাজ করতে গিয়ে নানা কথা শুনতে হলেও এখন সেই দৃশ্য পাল্টে গেছে। এলাকার অনেক ঘেরচাষি রাবেয়া খাতুনকে অনুসরণ করে নিজেরাও কালো সৈনিক পোকা উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন।
সাসের নির্বাহী পরিচালক শেখ ইমান আলী বলেন, ‘রাবেয়া খাতুন আমাদের প্রকল্পের এক অনন্য উদাহরণ। কালো সৈনিক পোকা উৎপাদন একটি পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রযুক্তি, যা চাষিদের উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আয়ের সুযোগ তৈরি করে। রাবেয়া খুব দ্রুত বিষয়টি আয়ত্ত করেছেন এবং তাঁর সাফল্য দেখে এখন অনেকেই উৎসাহিত হচ্ছেন। আমরা চাই, এই প্রযুক্তি আরও ছড়িয়ে যাক এবং আরও বেশি চাষি উপকৃত হোক। সাস সব সময় মাঠের মানুষের পাশে থেকে প্রয়োজনীয় কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা দিয়ে যাবে।’
তালা উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. তারিক ইমাম বলেন, ‘মাছ চাষে বিকল্প প্রোটিন উৎস হিসেবে কালো সৈনিক পোকা এখন বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় হচ্ছে। আমাদের অঞ্চলে রাবেয়া খাতুন এই প্রযুক্তি সফলভাবে প্রয়োগ করে যে ফলাফল দেখিয়েছেন, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তাঁর ঘেরে মাছের বৃদ্ধি যেমন বেড়েছে, তেমনি খাদ্য ব্যয়ও কমেছে। অন্য চাষিদের জন্য এটি একটি দৃষ্টান্ত। উপজেলা মৎস্য দপ্তর থেকে এই ধরনের উদ্যোগকে আমরা সব সময় উৎসাহ দিয়ে থাকি এবং প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।’