দশমিনা(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার প্রধান নদী তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে জেলেদের জালে ইলিশ মাছ মিলছে না। দিন ও রাতে নদীতে জাল ফেলে প্রায় খালি হাতেই অনেক জেলে নদী তীরে ফিরে আসছে। এতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ শূন্য হয়ে পড়েছে উপজেলার হাট-বাজার। অপরদিকে জেলে পরিবারগুলো ঋনের কিস্তি ও দাদনের দিশেহারা হয়ে পড়েছে। জেলে পল্লীর জেলেরা মাছ না পেয়ে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় ঋন ও দাদনের ফাঁদে পড়েছে। প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট বাঁধার কারনে মাছের উৎপাদন কমে গেছে। নদীতে পানির চাপ,তাপমাত্রা, ডুবোচর বেড়ে যাওয়ায় ইলিশের প্রজনন বাঁধাগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া নদীতে পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় ইলিশের বিচরন ক্ষেত্র সীমিত হয়ে পড়েছে। উপজেলার তেঁতুলিয়া ও বুড়াগৌরাঙ্গ নদীর মোহনায় ডুবোচর ও জাটকাসহ মা ইলিশ অবাধে শিকার করায় ইলিশ মাছের সংকট এবং বিপর্যয় দেখা দিয়েছে।
উপজেলার প্রতিটি হাট-বাজারসহ আড়তে গত বছর এই দিনে দিন-রাত ইলিশ বেচাকেনায় ব্যস্ত থাকতো। সেখানে এখন ক্রেতা ও বিক্রেতা শূন্যতা বিরাজ করছে। ইলিশের উৎপাদনের লক্ষ্যে নদীতে সকল ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পরও জেলেদের জালে মিলছে না কোন ইলিশ। মাছ শিকার না হওয়ার ফলে জেলেরা মাছের আকাল বলে দাবি করছে। মাছ না পাওয়ায় হাজার হাজার জেলে পরিবারের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। ইলিশের আমদানি না হওয়ায় অলস সময় কাটাচ্ছেন জেলে ও আড়ৎদাররা। মাছ বিক্রির ঘাটসহ বিভিন্ন হাটে ঘুরে দেখা যায়,ঘাটে তেমন মাছ নেই বললেই চলে। জেলে ও আড়ৎদাররা হতাশার মধ্যে রয়েছে। জেলেরা অভিযোগ করে বলেন, নদীতে মাছ নেই। সারাদিন নদীতে জাল ফেলে এবং মাছ শিকার করলে দুই থেকে চারটা মাছ পাওয়া যায়। তা দিয়ে ইঞ্জিন চালিত নৌকার তেলের খরচও জোগাড় করা যায় না। উপজেলার প্রায় ১০ হাজার ১শ’ ৭০ জেলে রয়েছে। এদিকে জেলেদেরকে দাদন দিয়ে এখন বেকাদায় পড়ছে দাদন ব্যবসায়ীরা। মাছ ধরা না পড়ায় তারা মহাজনের দাদনের টাকা পরিশোধ করতে পারছে না। স্থানীয় জেলেরা জানান, আমরা খুব কষ্টের মধ্যে আছি। আমাদের সংসার চালাতে খুব হিমশিম খেতে হচ্ছে। সামনের দিনগুলোতে পরিবার পরিজন, ছেলে-মেয়েদের নিয়ে কিভাবে চলবো সে চিন্তায় আছি।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র থেকে জানা যায়, জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে জীববৈচিত্রের উপর ভারসাম্যহীন আঘাত এবং তেঁতুলিয়া-বুড়াগৌরাঙ্গ নদীতে গভীরতা ক্রমান্বয়ে কমে যাওয়ায় ইলিশের প্রজনন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হয়। এর ফলে নদীতে ইলিশ মাছের অকাল দেখা দিয়েছে। উপজেলার নদী সীমার ৮/১০টি স্পট আছে সেগুলো দিন দিন ভরাট হয়ে গেছে। এই স্পটগুলো ড্রেজিং করলে আবার নদীতে ইলিশের দেখা মিলতে পারে বলে জেলেরা এমনটাই মনে করছে।