1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
শুক্রবার, ০৩ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৫ অপরাহ্ন

সাতক্ষীরা ‌উপকূলবাসীর জীবনের সঙ্গে জড়ানো একটি লঞ্চ

  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ৩ অক্টোবর, ২০২৫
  • ২ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : বেতনা, মরিচ্চাপ, ইছামতী ও কপোতাক্ষ- দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের এই নদীগুলো একসময়ে ছিল নৌযাত্রার প্রাণ। নদীঘাটগুলোতে অপেক্ষায় থাকতেন যাত্রীরা। পণ্যবাহী বড় জাহাজ থেকে শুরু করে ছোট লঞ্চ- সবই চলত নিয়মিত। কিন্তু আজ সেই নদীগুলো নিষ্প্রাণ। কোথাও জেগেছে চর, আবার কোথাও নদী ভরাট হয়ে গেছে। নদীঘাটগুলোতে আর আগের মতো ভিড় নেই। এমন পরিস্থিতিতে সাতক্ষীরার শ্যামনগর থেকে খুলনা পর্যন্ত প্রতিদিন একটি লঞ্চ চলাচল করে। মূলত পারমিট রক্ষার জন্য লঞ্চটি চলে থাকলেও এখন এটি হয়ে উঠেছে মানুষের জীবিকা, যাতায়াত এবং ব্যবসার শেষ ভরসা।
শ্যামনগর-খুলনা রুটে চলাচলকারী লঞ্চটির মালিকানা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক বাবুল চৌধুরী জানান, ভাটার সময় লঞ্চ প্রায়ই আটকে যায়। তেলের খরচও উঠছে না, যাত্রীও খুব কম। তবু পারমিট রক্ষার জন্য প্রতিদিন লঞ্চ ছাড়তে হচ্ছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী, রুট পারমিট বজায় রাখতে প্রতিদিন ন্যূনতম একটি ট্রিপ চালানো বাধ্যতামূলক।
মাছ ও কাঁকড়া নিয়ে লঞ্চে উঠছিলেন শ্যামনগর বাজারের ব্যবসায়ী হাসানুর গাজী। তিনি বলেন, ‘সড়কপথে খরচ দ্বিগুণ। লঞ্চ বন্ধ হয়ে গেলে কাঁকড়া, মাছ, চাল, ডাল, নিত্যপণ্য খুলনায় পাঠানো কষ্টকর হয়ে পড়বে। সাতক্ষীরার কাঁকড়ার বাজার খুলনা হয়ে ঢাকায় যায়। লঞ্চ না থাকলে খরচ এত বাড়বে যে ব্যবসায়ীরা লোকসানের কারণে ব্যবসা ছাড়তে বাধ্য হবেন।’
স্থানীয় একটি স্কুলের শিক্ষক ফিরোজা বেগম লঞ্চের টিকিট হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বললেন, ‘লঞ্চ ভাড়া ২০০ টাকা, গাড়িতে যেতে ৬০০-৭০০ টাকা খরচ হয়। দরিদ্র পরিবারে এমন খরচ বহন করা সম্ভব নয়। শিশু, শিক্ষার্থী কিংবা রোগী- সবাই লঞ্চের ওপর নির্ভরশীল। নদীপথ বন্ধ হলে চিকিৎসা বা শিক্ষার জন্য খুলনায় যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়বে।’
শ্যামনগরের গাবুরা ও পদ্মপুকুরের সংযোগস্থল চৌদ্দরশী ব্রিজসংলগ্ন ঘাটের দায়িত্বপ্রাপ্ত রবিউল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিদিন ৩০ থেকে ৭০ জন যাত্রী আসা-যাওয়া করেন। মাছ, কাঁকড়া এবং সুন্দরবনের মধুও এই লঞ্চে পাঠানো হয়। লঞ্চ চলাচল না থাকলে ঘাটও অচল হয়ে যাবে। অন্তত ৫০ জন শ্রমিকের জীবন সরাসরি ঝুঁকিতে পড়বে।’
সাতক্ষীরায় পরিবেশ নিয়ে কাজ করেন মাধব দত্ত। তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরার ২৭টি নদীর মধ্যে অন্তত ১৩টি এখন মৃতপ্রায়। ৪২৯টি খালও ভরাট হয়ে যাচ্ছে। ড্রেজিং হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু খণ্ড খণ্ড। নিয়মিত ও সমন্বিত রক্ষণাবেক্ষণ ছাড়া নদীগুলো টেকসই রাখা সম্ভব নয়। নদী মরে গেলে নৌপথও হারিয়ে যাবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় নদী খনন, স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করা এবং টেকসই বাজেট বরাদ্দ ছাড়া সমাধান আসবে না।’
সাতক্ষীরা জলবায়ু পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ আশেক-ই-এলাহী বলেন, ‘নদীপথ টেকসই না হলে ব্যবসা, কৃষি, শিক্ষা- সর্বক্ষেত্রেই বিপর্যয় নামবে। লঞ্চ কেবল যান নয়, এটি উপকূলবাসীর জীবন রক্ষার মাধ্যম। সরকারের পরিকল্পিত উদ্যোগ ছাড়া নদীগুলো টিকবে না।’
পরিস্থিতি আরও জটিল করছে জলবায়ু পরিবর্তন। অতিবৃষ্টি ও দীর্ঘ খরার ফলে নদীগুলো অস্বাভাবিকভাবে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। সাগরের জোয়ারের পানিতে আসা অতিরিক্ত পলি জমে নদী ও খাল নাব্য হারাচ্ছে। ফলে জলাবদ্ধতা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি এবং গ্রামীণ জীবিকা বিপর্যস্ত হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিএ খুলনা নদীবন্দরের উপপরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, ‘নির্দিষ্ট কিছু রুটে ড্রেজিং চলছে। তবে বরাদ্দ ও স্থানীয় সমন্বয়ের ঘাটতির কারণে সব রুট সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে না। আমরা বিষয়টি জানি এবং প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার চেষ্টা করছি।’

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট