1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
শনিবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৫, ০৫:১৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
পাইকগাছায় চিংড়ী চাষ ও চিংড়ীর রোগ নির্ণয় বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারীর সাথে সাংবাদিক ইউনিয়নের সৌজন্য সাক্ষাৎ পাইকগাছায় নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে তালায় সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকদের কর্মবিরতি জামায়াত যাদের নিয়ে আন্দোলন করছে, ২৪-এর নির্বাচনে তাদের ভূমিকা কী ছিল ইসলামী ব্যাংকের চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাদের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ গোপালগঞ্জে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ২ ইরানে ৬ ইসরায়েলপন্থি সন্ত্রাসীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর রোহিতকে সরিয়ে যাকে ওয়ানডে অধিনায়ক করল ভারত মুসলিম ন্যাটো জোট গঠন করতে চায় পাকিস্তান!

কপোতাক্ষ বাঁচাবে কে?

  • প্রকাশিত: শনিবার, ৪ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৩১ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ‌: কপোতাক্ষ নদ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের খুলনা বিভাগের অন্যতম বড় নদ। নদটি চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, যশোর, সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত। কপোতাক্ষ নদের উৎপত্তি চুয়াডাঙ্গা জেলার দর্শনার মাথাভাঙ্গা নদী থেকে। এটি পরে যশোর জেলার চৌগাছা উপজেলায় ভৈরব ও কপোতাক্ষ দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার কাছে শিবসা নদীতে গিয়ে পতিত হয়েছে। এ নদটি একসময় ৫০০ মিটার চওড়া ছিল। এর দৈর্ঘ্য ২৩৮ কিলোমিটার। গভীরতা ৪৯০ ফুট।
কপোতাক্ষ নদ মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতিবিজড়িত। যশোর জেলার কেশবপুর উপজেলার সাগরদাঁড়ী নদের তীরে মধুকবির জন্মস্থান। এই কপোতাক্ষ তীরে বসে তিনি কবিতা লিখতেন। এর স্রোতের সঙ্গে তাঁর গভীর সম্পর্ক ছিল।
২০০০ সালে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি মধুপল্লিকে সরকার পার্ক ও জাদুঘরে রূপান্তর করে। যৌবনকালে এই নদের বুকে বড় বড় পাল তোলা নৌকা ও মালবাহী জাহাজ চলাচল করত। এলাকার ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি মানুষের আয়ের পথ সুগম করেছিল।
পলি জমা, অপরিকল্পিত সেতু, পলিথিন, বর্জ্যসহ নানাভাবে দূষণ ও দখলের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত। পার্শ্ববর্তী খালগুলো থেকে এখন আর এ নদে পানি প্রবেশ করতে পারে না। এক সময়ের খরস্রোতা কপোতাক্ষ এখন শীর্ণকায়, মৃতপ্রায়। খালের পানি প্রবেশ করতে না পারায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বৃহত্তর যশোর-খুলনার একটি বড় অংশ প্লাবিত হয়ে জলাবদ্ধতায় রূপ নিচ্ছে।
সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ২০৫০ সালের মধ্যে খুলনা বিভাগের কিছু অংশসহ বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ব্যাপক আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে এ সময় দুই কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হতে পারে।
ইতোমধ্যে এ আশঙ্কার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাচ্ছি। ফসলি জমি, মৎস্য খামার, রাস্তাঘাট, হাটবাজার, মানুষের বাড়িঘর পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। গবাদি পশু, নারী, প্রতিবন্ধী, বৃদ্ধ ও শিশুরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কপোতাক্ষ-তীরবর্তী লোকজন দিন দিন কর্মসংস্থান হারিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে বাস্তুচ্যুত হচ্ছে। কপোতাক্ষের নাব্য ফিরিয়ে পাশের খালগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারলে স্থানীয় মানুষের জানমালের ক্ষতি অনেকটাই কমানো সম্ভব।
২০১১ সালে কপোতাক্ষ নদ খনন কাজে সরকার ২৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু সেই খনন কাজ আজও শেষ হয়নি। সরকার কপোতাক্ষ নদের নাব্য ফিরিয়ে আনার জন্য বেশ কয়েকটি খনন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য– ‘কপোতাক্ষ নদ খনন (প্রথম পর্যায়)’ এবং ‘কপোতাক্ষ নদ খনন (দ্বিতীয় পর্যায়)’।
এই প্রকল্পগুলোর আওতায় নদের পানি ধারণক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি পানি প্রবাহ সচল রাখতে নদের বিভিন্ন অংশ থেকে পলি অপসারণ করে এর গভীরতা ও প্রশস্ততা বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।
কপোতাক্ষ নদের মতো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলোর জন্য টিআরএম অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত। টিআরএম পদ্ধতিতে জোয়ারের সময় নদের পানিকে নির্দিষ্ট বিলে প্রবেশ করানো হয়। এই পানি পলি বহন করে বিলে জমা হয়। ফলে নদের তলদেশ থেকে পলি সরে যায় এবং বিলের উচ্চতা বাড়ে। ভাটার সময় এই পানি আবার নদ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে ফিরে যায়, যা নদকে সচল রাখতে সাহায্য করে। যদিও টিআরএম প্রকল্প বাস্তবায়নে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে কিছু সমস্যা দেখা যায়; তবে এটি নাব্য রক্ষায় একটি সফল উপায় হিসেবে প্রমাণিত।
নদের পাড় দখলমুক্ত করার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের অভিযান চোখে পড়ছে। নদের পাড়ের ভাঙন রোধ এবং পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য নদের দুই ধারে বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। শুধু লোক দেখানোর মধ্যে যেন অভিযান কিংবা কর্মসূচি আটকে না থাকে। সরকারের নেওয়া উদ্যোগগুলো যথার্থ বাস্তবায়িত হওয়া খুবই জরুরি।
অস্তিত্ব সঙ্কটে রয়েছে সাতক্ষীরার নদ-নদী ও খালগুলো। এছাড়াও শতাধিক স্লুইস গেট নষ্ট হয়ে রয়েছে। বর্ষা মৌসুম আসার আগেই নদী খনন ও নষ্ট স্লুইস গেটগুলো সংস্কার করা না হলে সাতক্ষীরার বহু অংশ পানিবদ্ধতায় নিমজ্জিত হতে পারে। একসময়ে সাতক্ষীরায় ২০টির অধিক নদ-নদী থাকলেও বর্তমানে দৃশ্যমান রয়েছে ১৩টি। বাকি নদীগুলো ভরাট হয়ে সরু খালে পরিণত হয়েছে
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর অধীনে ১২টি নদ-নদী রয়েছে। এগুলো হচ্ছে ইছামতি, কালিন্দী, কাকশিয়ালী, গোলঘেষিয়া, হাবড়া, মরিচ্চাপ, সোনাই, মাদার, মিরগাংও মালঞ্চ, খোলপেটুয়া ও কপোতাক্ষ নদ। এর মধ্যে সোনাই নদী প্রায় মৃত। গোলঘেষিয়া ও মাদার নদী বাদে অন্য নদীগুলো প্রবাহমান। হাবড়া নদী ইতোমধ্যেই খনন করা হয়েছে। মরিচ্চাপ নদীর খনন কাজ চলমান রয়েছে।
আর পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর অধীনে বেতনা নদী। এছাড়া, খোলপেটুয়া মরিচ্চাপ, গোলঘেষিয়া ও কপোতাক্ষ নদের কিছু অংশ রয়েছে এই পাউবো-২ এর অধীনে। নদীগুলো ছাড়াও সাতক্ষীরায় খাল রয়েছে ২৩০টি। এর মধ্যে পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর অধীনে রয়েছে ১১০টি খাল। আর পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর অধীনে রয়েছে ১২০টির মতো।
এসব নদী ও খালের ওপর নির্মিত ২৫১টি সøুইস গেটের অধিকাংশই নষ্ট ও নাজুক অবস্থায় রয়েছে। তবে, পাউবোর কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ১১০টি সøুইস গেট সংস্কার ও নির্মাণ করেছেন।
শত শত কোটি টাকা খরচ করে কয়েকটি নদী ও খাল খননের কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। একটির খনন কাজ চলমান রয়েছে। তবে, এসব খনন কাজ যথাযথভাবে করা হয়নি বা হচ্ছে না বলে নানান ধরনের অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।
এদিকে, ভরাট হয়ে যাওয়া অধিকাংশ নদ-নদী ও খাল প্রভাবশালীদের দখলে চলে গেছে। এসব নদী ও খালে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করা হচ্ছে। একাধিক ইটভাটা, দোকান-পাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শুঁটকি মাছের কারখানা, গোডাউন, ঘর-বাড়ি গড়ে তোলা হয়েছে।
অবৈধ দখল, অপরিকল্পিত সøুইচ গেট, অবকাঠামো নির্মাণ ও পরিবেশ বিপর্যয়ের প্রভাবে বেশির ভাগ খাল এখন অস্তিত্ব হারিয়েছে।
সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জানান, ভরাট হয়ে যাওয়ায় এখন আর আগের অবস্থানে নেই নদী-খালগুলো। তারপরও এগুলোকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালছে। বিভিন্ন প্রকল্পে ইতোমধ্যে সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তিনি বলেন, ৪৬৫ কোটি ৮৪ লাখ টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলমান। এই খনন কাজ শেষ হবে ২০২৫ সালের জুন মাসের মধ্যে। এছাড়া, মরিচ্চাপ নদীর সাড়ে ৩৫ কিলোমিটার ও বেতনা নদীর অধিকাংশই খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ৩ কোটি ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে যমুনা নদীর ১৫ কিলোমিটার খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। টিকেট খালের ১২ কিলোমিটার, আরকুনি খালের ৫ কিলোমিটারসহ লাবন্যবতী নদীর (এখন খাল) খনন কাজ সম্পন্ন হয়েছে। খনন করা হয়েছে ৭০ টির অধিক খাল।
নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন আরো বলেন, সাতক্ষীরা শহরের বুকে চিরে বয়ে যাওয়া প্রাণসায়ের খাল (এক সময়ের বিশাল আকারের নদী) ২০১৯-২০২১ খনন করা হয়। তৎকালীন জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল ৯ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে এই প্রকল্পের কাজ শুরু করেন। কিন্তু নানাবিধ কারণে তিনি শেষ করতে পারেননি। এই প্রাণসায়ের খাল খনন করতে যেয়ে ডিসি মোস্তফা কামাল দুর্ণীতির মামলায় জড়িয়েছেন বলে জানান পাউবো কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন।
পাউবো-২ এর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মেহেদী হাসান মিশুক বলেন, তার অধীনে থাকা ১৩৬টি সøুইস গেটের প্রায় ৭০ ভাগ সংস্কার করা হয়েছে। মরিচ্চাপ নদী খনন করা হয়েছে। তিনি বলেন, ভুমি দস্যুদের কবল থেকে ভরাট হয়ে যাওয়া সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করে খননের ব্যবস্থা করতে হবে। নদী-খাল রক্ষায় সকলকে আন্তরিক হতে হবে।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট