1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
শুক্রবার, ১০ অক্টোবর ২০২৫, ১২:২১ পূর্বাহ্ন

ভাঙনের ঝুঁকিতে নদ-নদী সংলগ্ন সুন্দরবন ও উপকূলীয় বাঁধ

  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৩০ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সুন্দরবনের ৬০ শতাংশ এলাকা উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে অবস্থিত। মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে এরই মধ্যে সুন্দরবন পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে।
সুন্দরবনের ৬০ শতাংশ এলাকা উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে অবস্থিত। মানবসৃষ্ট বিভিন্ন কারণে এরই মধ্যে সুন্দরবন পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে। বনের আশপাশের নদ-নদীতে বালি উত্তোলনে সরকারিভাবে কোনো অনুমোদন নেই। তবু পশ্চিম সুন্দরবনের কয়েকটি এলাকার নদ-নদীতে খননযন্ত্র দিয়ে বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। সুন্দরবন ও নদীর ভাঙনকবলিত এলাকা থেকে অব্যাহতভাবে বালি উত্তোলনের কারণে ভাঙনের ঝুঁকি যেমন বাড়ছে, তেমনি বিলীন হচ্ছে উপকূলীয় নদীপাড়ের বনের অংশ ও লোকালয়। এতে সুন্দরবন এলাকা ও উপকূলীয় বাঁধ আরো ঝুঁকিতে পড়ছে।
স্থানীয়রা বলছেন, অপরিকল্পিত বালি উত্তোলনের প্রভাবে সৃষ্ট ভাঙন রোধে প্রকল্পের নামে কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)। বিপুল অর্থ খরচ দেখিয়ে সংস্কার করা হচ্ছে নদীতীর রক্ষা বাঁধ, যা সংস্কারের অল্প দিনেই ফের ধসে পড়ছে। বছর না ঘুরতেই ওই স্থানে আবারো নেয়া হচ্ছে প্রকল্প। এরই মধ্যে পশ্চিম সুন্দরবন ঘেঁষা কয়রা উপজেলার কপোতাক্ষ নদ, শাকবাড়িয়া নদীসহ কয়েকটি এলাকার গাছপালা ভেঙে নদ-নদীতে পড়তে শুরু করেছে। কয়েকটি স্থানে ভাঙনের পরিধিও বেড়েছে।
এ ব্যাপারে পাউবো খুলনা-২-এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম এই প্রতিবেদককে ‌বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় অপরিকল্পিতভাবে বালি উত্তোলনের কারণে সেখানে বড় ধরনের গর্ত সৃষ্টি হচ্ছে। সেই গর্তে বেড়িবাঁধ ধসে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট উপজেলার এসিল্যান্ড ও জেলা প্রশাসনকে লিখিতভাবে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে।’
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১০ হাজার বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত সুন্দরবন, যার ৬৬ শতাংশ বাংলাদেশে; বাকিটা ভারতে। এ ম্যানগ্রোভ বনে জাতীয় পশু রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বেশকিছু বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীও বাস করে। জলবায়ু সংকট প্রকট হয়ে ওঠার সঙ্গে বনাঞ্চলের ঝুঁকিও ক্রমে বাড়ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অল্প কয়েক ফুট ওপরে এ বনভূমি। প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় এসে আঘাত হানছে সুন্দরবনে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাওয়া আর চরম আবহাওয়ার কারণে সর্বশেষ আবাসস্থলও হারাতে পারে রয়েল বেঙ্গল টাইগার। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব এতটাই সর্বব্যাপী যে প্রাণী ও উদ্ভিদজগতের ওপর সেই চাপ অসহনীয় মাত্রায় পরিলক্ষিত হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষক অধ্যাপক আবদুল্লাহ হারুন চৌধুরী এই প্রতিবেদককে ‌বলেন, ‘জীববৈচিত্র্যের অসামান্য সম্ভার সুন্দরবনের পরিবেশগত ও বাস্তুতান্ত্রিক গুরুত্ব বিবেচনায় নিয়ে ১৯৯৭ সালে একে “‍বিশ্ব ঐতিহ্য এলাকা” হিসেবে ঘোষণা করে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো। প্রাকৃতিক দুর্যোগের বিরুদ্ধে “‍প্রাকৃতিক দেয়াল” হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে সুন্দরবন। কিন্তু অপরিকল্পিত ও পরিবেশের তোয়াক্কা না করে যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে একে নানাভাবে সংকটে ফেলছি আমরা।’
খুলনা জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, রূপসা ব্রিজের দক্ষিণ থেকে দাকোপের চালনা এলাকার পূর্ব পাশ পর্যন্ত খুলনা জেলা প্রশাসনের আওতাধীন একমাত্র সরকারি বালুমহাল। এর বাইরে জেলার কোনো এলাকায় বালি উত্তোলনের অনুমতি নেই। বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, ড্যাম, ব্যারাজ, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, বন, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা আবাসিক এলাকা থেকে সর্বনিম্ন এক কিলোমিটারের মধ্যে বালি তোলা যাবে না। এছাড়া বালি বা মাটি উত্তোলন কিংবা বিক্রির জন্য খননের ফলে কোনো নদীর তীর ভাঙনের কবলে পড়লেও বালি তোলা যাবে না। আইন অমান্যকারীর দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
এ ব্যাপারে পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এজেডএম হাছানুর রহমান এই প্রতিবেদককে ‌বলেন, ‘সুন্দরবনের পাশের নদ-নদী থেকে বালি তোলা বনের জন্য হুমকি। এ বিষয়ে আগে কয়েকবার খননযন্ত্রের মালিকদের নিষেধ করা হয়েছে। তবে তারা প্রশাসন থেকে অনুমতি নিয়েছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।’
এ ব্যাপারে খুলনার জেলা প্রশাসক মো. তৌফিকুর রহমান বলেন, ‘কয়রা ও দাকোপ উপজেলার কোনো নদ-নদী থেকে বালি তোলার অনুমতি নেই। কারণ উপকূলীয় ওইসব এলাকা নদীভাঙন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
একই কথা বলেন কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল বাকী। তিনি বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চলে ঝুঁকিপূর্ণ বেঁড়িবাধের কারণে নদ-নদী থেকে বালি উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষেধ। তার পরও যদি কেউ নদী থেকে বালি উত্তোলন করে তাহালে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
স্থানীয়দের অভিযোগ, পশ্চিম সুন্দরবন এলাকার কপোতাক্ষ, শাকবাড়িয়া, খোলপেটুয়া, সুতারখালী, শিবসা, ঢাকী, কাজীবাছা, পশুর, চুনকুড়ি ও ভদ্রা নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে বালি উত্তোলন করে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতিদিন কয়েক লাখ ঘনফুট বালি উত্তোলন করা হচ্ছে। ঠিকাদার ও জনপ্রতিনিধিরা ওই বালি উপকূলের বেড়িবাঁধ নির্মাণ এবং বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণকাজে ব্যবহার করছেন।
কয়রা উপজেলার বাসিন্দা ইউনুছ আলী বলেন, ‘পশ্চিম সুন্দরবনের নদ-নদী থেকে বালি তোলার পেছনে কয়েকটি শক্তিশালী চক্র রয়েছে। দীর্ঘদিন স্থানীয় প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের ম্যানেজ করে বালি উত্তোলন করছে তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের বেড়িবাঁধ সংস্কারকাজের ঠিকাদাররাও এ চক্রের সঙ্গে চুক্তি করে বালি উত্তোলন করেন। রাতের বেলায় বেশি বালি তোলা হয়।’
কয়রা সদর ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে সুন্দরবন-সংলগ্ন এলাকার নদ-নদী থেকে বালি উত্তোলনের একটা সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। আমার ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি স্পটে বালি উত্তোলনের ফলে নদীভাঙন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। প্রশাসন মাঝেমধ্যে দুই-একজনকে জরিমানা করলেও বালি উত্তোলন বন্ধ হয়নি।
কয়রা উপজেলার বেড়িবাঁধের কাজ করা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমিন অ্যান্ড কোম্পানির প্রতিনিধি আমিনুর ইসলাম জানান, তাদের বস্তা ডাম্পিং, জিও ব্যাগ ভর্তি ও বেঁড়িবাধের কাজে বালির প্রয়োজন হয়। এজন্য তারা হারুন নামে একজনের কাছ থেকে ৬ টাকা ঘনফুট চুক্তিতে আট লাখ ঘনফুট বালি নিয়েছেন। তবে বালি কোথা থেকে আসছে তিনি এ বিষয়ে জানেন না।
স্থানীয়রা বলছেন, কপোতাক্ষ নদের পশ্চিম তীরে সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা, পাতাখালী, জেলেখালী ও ঝাপা গ্রাম। নদের পূর্ব তীরে কয়রা উপজেলার হরিণখোলা, গোবরা, ঘাটাখালী গ্রাম। অবাধে বালি তোলায় এসব গ্রামের বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে।
নাগরিক সংগঠন সুন্দরবন ও উপকূল সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের দাকোপ উপজেলা সমন্বয়ক গোলাম মোস্তফা খান বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় পরিকল্পিত ও স্থায়ী টেকসই বাঁধ নির্মিত না হওয়ায় প্রতি বছরই ভাঙন দেখা দেয়। অথচ এ এলাকার ভাঙনকবলিত এলাকার নদ-নদী থেকে খননযন্ত্র দিয়ে সারা বছরই বালি তুলছে কয়েকটি চক্র। এতে পরবর্তী সময়ে সেই স্থানে বাঁধ ধসে ভাঙন সৃষ্টি হচ্ছে।’
এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ এই প্রতিবেদককে বলেন কোনভাবেই অপরিকল্পিতভাবে নদী ও লোকালয় থেকে বালি উত্তোলন করতে দেওয়া হবে না। কারণ এই ওয়াপরিকল্পিত ভাবে বালি উত্তোলনের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলের ভেরিবাদের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়ছে সে কারণে প্রতিনিয়ত উপকূলীয় ভেরি বাদ ভাঙ্গনের সম্মুখীন হচ্ছেন। মোস্তাক আহমেদ আরো বলেন এছাড়া উপকূলীয় অঞ্চলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রেডি বাদে যে সমস্ত অপরিকল্পিত ভাবে পাইপ বসানো ও বক্স ‌কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে সেগুলো উচ্ছেদ করা হচ্ছে উচ্ছেদের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট