সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বেড়েছে। তবুও স্থানীয় পাইকারি ও খুচরা বাজারে চালের দাম কমছে না। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বন্দর দিয়ে আসা আমদানি করা চালের বেশিরভাগই দেশের উত্তরাঞ্চল, রাজধানী ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে আমদানি বাড়লেও সরবরাহ কম থাকায় স্থানীয় বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না।
সাতক্ষীরা জেলা সদরের সুলতানপুর বড় বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দেশি মোটা জাতের চাল বিক্রি হচ্ছে ৪৮-৫০ টাকা কেজি। মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে কেজি প্রতি ৬৮-৭০ টাকায়। ২৮ জাতের চিকন চাল ৬৪ টাকা এবং ২৮ মোটা জাতের চাল ৬০-৬১ টাকা। আতপ মোটা ৪৬ ও আতপ চিকিন চাল বিক্রি হচ্ছে ৫২ টাকা কেজি। এছাড়া বাসমতী চালের দাম কেজি প্রতি ৮২-৮৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে ভারত থেকে অমদানি করা এলসি মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৫১ টাকা, মিনিকেট ৬৬ টাকা, রত্না ৫২ টাকা, নাজির শাইল ৭৫ টাকা, কাটারিভোগ ৭৬ টাকা কেজি।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত প্রায় দুই মাস ধরে বাজারে এই দামে চাল বিক্রি হচ্ছে। আমদানি বাড়লেও দেশি চালের দামে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি।
সুলতানপুর বড়বাজারের খুচরা চাল ব্যবসায়ি মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ভারত থেকে চাল আমদানি অব্যাহত থাকলেও বাজারে দেশি চালের দামের উপর তেমন কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। শুরু থেকেই কেজিতে ২/৩ টাকার মত দাম কমলেও এখনো বাজার আগের মতই রয়েছে। তবে দেশি চালের দাম তেমন একটা না কমায় সম্প্রতি ভারতীয় আমদানি করা বিভিন্ন ধরনের চালের বিক্রি বেড়েছে। খুচরা ক্রেতারা ভারতীয় এলসি মোটা ও রত্মা জাতের চাল বেশি কিনছেন। আমি নিজেও খাওয়ার জন্য রত্না জাতের চাল বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছি।
ভোমরা শুল্ক স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, দেশের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাল আমদানির মেয়াদ আরও এক মাস বাড়িয়েছে সরকার। সে অনুযায়ি আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত ভারত থেকে চাল আমদানি করতে পারবেন ব্যবসায়িরা। প্রথম পর্যায়ে আমদানির শুরু থেকে গত ২৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩ হাজার ৪৭৩ গাড়িতে এক লাখ ৩৩ হাজার ৫০৯ দশমিক ৭০৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি করা হয়েছে। কয়েকদিন বন্ধ থাকার পর দ্বিতীয় দফায় গত ১ অক্টোবর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ভোমরা স্থল বন্দর দিয়ে ৪৭১ গাড়িতে আরো ১৮ হাজার ৪৫৯ দশমিক ৭৬৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রাপ্ত দেশের শীর্ষ ৯৫টি চাল আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর ব্যবহার করে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের গত ১৯ আগষ্ট থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ভারত থেকে ৩ হাজার ৯৪৪ গাড়িতে এক লাখ ৫২ হাজার ৩৮২ দশমিক ৭৬৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি করছে। এর মধ্যে যশোরের মজুমদার এন্ড সন্স সর্বাধিক ১৪ হাজার ৬৪৬ দশমিক ০৯৯ মেট্রিক টন ও যশোর নওয়াপড়ার সুশান্ত কৃষ্ণ রায় আমদানি করেছে ৫ হাজার ৯৯৯ দশমিক ৯৯৬ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে। ভোমরা শুল্ক স্টেশনের দায়িত্বরত কাস্টমসের দায়িত্বশীল কর্তৃপক্ষ প্রাপ্ত তথ্যের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
চাল ব্যবসায়ী আবুল হোসেন বলেন, ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে যে চাল আমদানি হচ্ছে তার খুব কম চাল সাতক্ষীরায় বিক্রি হচ্ছে। বেশিরভাগ চাল চলে যাচ্ছে দেশের উত্তরবঙ্গ, ঢাকা, চট্রগ্রামসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলে। যে কারণে পর্যাপ্ত সরবরাহ না থাকায় সাতক্ষীরার স্থানীয় বাজারে দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
স্থানীয় ক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের মতে, পরিবহন ব্যয়, মজুদকারীদের প্রভাব এবং পাইকারি স্তরে সীমিত সরবরাহও চালের দাম না কমার অন্যতম কারণ হতে পারে। তারা আশা করছেন, বাজার মনিটরিং জোরদার হলে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরা জেলার কৃষি বিপণন কর্মকর্তা এসএম আব্দুল্লাহ বলেন, আমরা ভেবেছিলাম, ভোমরা দিয়ে চাল আমদানির পর স্থানীয় বাজারে দামের উপর ভালমত প্রভাব পড়বে। কিন্তু প্রায় দুই মাস ধরে চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে তদন্ত করা হবে।
ভোমরা স্থলবন্দর কাস্টমসের রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান জানান, আমদানির শুরু থেকে ১৫ অক্টোরবর পর্যন্ত ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৩ হাজার ৯৪৪ গাড়িতে এক লাখ ৫২ হাজার ৩৮২ দশমিক ৭৬৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি করছে। বর্ধিত মেয়াদ অনুযায়ি আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত সময় থাকলেও শুক্রবার সরকারি ছুটির কারণে এই মেয়াদ আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত গণ্য হবে। তৃতীয় দফায় আর না বাড়লে এই সময়ের মধ্যে ব্যবসায়িদেরকে তাদের সমুদয় চাল আমদানি করতে হবে।
চলতি বছরের ১৫ এপ্রিল এ বন্দর দিয়ে সর্বশেষ চাল আমদানি হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, দেশের বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন প্রাপ্তি সাপেক্ষে গত ১৯ আগষ্ট থেকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি শুরু হয়। দেশের শীর্ষ ৯৫টি চাল আমদানীকারক প্রতিষ্ঠান চাল আমদানিতে এই বন্দর ব্যবহার করেছে।