ডেস্ক রিপোর্ট : চব্বিশের জুলাই আন্দোলন চলাকালে বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের দায় বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর ওপর চাপানো এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আন্দোলন দমাতে ইন্টারনেটের মতো বিদ্যুৎ বন্ধের চিন্তাও ছিল তার। এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে এসেছে সাবেক জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের বিপুর সঙ্গে আলোচিত একটি ফোনালাপের রেকর্ডে। ওই রেকর্ড গত বছরের ২৪ জুলাইয়ের এবং সম্প্রতি সেটি গণমাধ্যমের হাতে আসে।
ফোনালাপে প্রতিমন্ত্রী বিপু উল্লেখ করেন, জ্বালানি বিল নিয়ে আর কোনো সমস্যা নাই। একদিনে কাভার করে ফেলছি ২৪ লাখ। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ২৪ লাখ! তাহলে এটা নিউজ করো। বিপু বলেন, সকাল থেকে তিনি সাংবাদিকদের নিয়ে ঢাকার নানা এলাকা ঘুরেছেন, কিন্তু প্রচারের জন্য পর্যাপ্ত ভিজ্যুয়াল উপস্থাপন করা যায়নি। তার উত্তরে হাসিনা নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমি যা বলি শুনো, ‘থোরাসা হাদিয়া দে দো’।
রেকর্ডে আরও শোনা যায়, বিএনপি-জামায়াতকে অগ্নিসংযোগের জন্য দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করার এবং ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টতা আড়াল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়। হাসিনা ফোনালাপে বলেন, শিবির আর ছাত্রদল মিলিয়েই অগ্নিসংযোগ করছে—এটা বারবার উল্লেখযোগ্যভাবে প্রচার করতে হবে এবং এ সম্পর্কিত সংবাদ বিদেশে পাঠানোর ব্যবস্থাও করতে হবে।
হাসিনা বলেন, কারণ বিদেশে খবর যাচ্ছে ছাত্রলীগ এসব করছে। ছাত্রলীগ তো মাইর খেয়ে বের হয়ে চলে আসছে। তাদের তো কিচ্ছু নাই, কাপড়-চোপড় নাই।
ফোনালাপে বিদ্যুৎ বন্ধের হুমকির কথাও উঠে আসে। বিপু বলেন, আমি বিএনপি-জামায়াত সন্ত্রাসী কথা যেটা বলছি ওইটা কাইটা দিয়ে বাকি কথা রাখতেছে। উত্তরে হাসিনা বলেন, কাটলে বলবা তোদের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেব।
এদিকে, গত সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর জোহা জানান, জুলাইয়ের আন্দোলন দমনসংক্রান্ত নির্দেশনা গোপন রাখতে গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার চারটি নম্বরের প্রায় এক হাজার কলরেকর্ড মুছে ফেলা হয়। তিনি জানান, ওইদিন সন্ধ্যায় ন্যাশনাল টেলিকম মনিটরিং সেন্টার (এনটিএমসি)-এর সার্ভার থেকে কল রেকর্ড ও মালিকানার তথ্য মুছে ফেলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল এবং সরাসরি লোক পাঠিয়ে সার্ভার থেকে এসব তথ্য সরানো হয়েছিল। বর্তমানে তদন্তকারীরা ডিজিটাল প্রমাণ উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছেন।
তানভীর জোহা আরও জানান, একই সময়ে তৎকালীন আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন এবং সাবেক এক পরিকল্পনা মন্ত্রীর কল রেকর্ডও মুছে ফেলা হয়েছিল। ঘটনার নিরিখে তদন্ত দল যে প্রমাণ সংগ্রহ করতে সক্ষম হচ্ছে তা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে ওই কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন।