1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:৩৮ পূর্বাহ্ন

সাতক্ষীরা ‌এক গ্রামেই রোজ উৎপাদন হয় ৫০ হাজার লিটার দুধ

  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৮ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৫৯ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার তালা সদরের জেয়ালা গ্রাম। সারাদেশে দুগ্ধপল্লী হিসেবে পরিচিত এ গ্রাম। জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছে কয়েকবার।
এই দুগ্ধপল্লীতে সবমিলিয়ে প্রায় ১২ হাজারের মতো গাভী রয়েছে। যেখান থেকে রোজ প্রায় ৫০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। যার বেশির ভাগ দুধ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করে থাকেন খামারিরা।
তবে সরকারি সুযোগ সুবিধা যথাযথভাবে না পাওয়ায় অনেক খামারি অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। যেটা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায়।
জানা যায়, করোনাকালীন সময়ে প্রতিদিন ২০ লাখ টাকার দুধ নষ্ট হয়েছে এই অঞ্চলে। যেটার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে কয়েক বছর সময় লাগবে খামারিদের। সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের যথাযথ নজরদারি না থাকার কারণে এমন সমস্যা হয়েছে বলে ধারণা খামারিদের।
উৎপাদিত দুধের মধ্যে মিল্ক-ভিটা দৈনিক ৮ হাজার লিটার এবং আকিজ কোম্পানি ৬০০ লিটার দুধ সংগ্রহ করে এই দুগ্ধপল্লী থেকে। বাকি দুধ সাতক্ষীরা, খুলনাসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোর মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ও অন্যান্য বেসরকারি ফার্মে সরবরাহ করা হয়। এ বিষয়ে দুগ্ধপল্লী সমিতির সভাপতি দিবস চন্দ্র ঘোষ জানান, জেয়ালা গ্রামটি সারাদেশে দুগ্ধপল্লী নামে সুপরিচিতি। এজন্য গত কয়েক বছর ধরে আমরা জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছি। দেশের সবচেয়ে বেশি পরিমাণ দুধ এই পল্লী থেকে উৎপাদন করা হয়। তবে সরকারি কোনো সুবিধা না পাওয়ায় দিনে দিনে অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে যাচ্ছে খামারিরা।
গরুর দুধ কে না খেতে পছন্দ করে! মানুষের খাদ্য তালিকায় দুধ হলো অন্যতম প্রধান খাবার। সর্বোচ্চ পুষ্টিমানের জন্যই দুধের শ্রেষ্ঠত্ব। আর সেই দুধ যদি হাতের নাগালে পাওয়া যায় তাহলে বিষয়টা কতোই না স্বস্তির। এমনকি দুধের কারণে সাতক্ষীরা জেলার তালার জেয়ালা গ্রাম কে এখন বলা হয় দুধের রাজধানী।
সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার জেয়ালা গ্রামে ঘোষ স¤প্রদায়ের বসতি। একসময়ের অবহেলিত ঘোষপাড়া জনপদটি এখন দুগ্ধপল্লি নামে পরিচিতি লাভ করেছে। দুধ উৎপাদনের জন্য জাতীয়ভাবে পরপর ৪ বার পেয়েছে শ্রেষ্ঠ সমবায়ী পুরস্কার। এ গ্রামে প্রতিদিন গড়ে পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এসব দুধ রপ্তানি হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। যা প্রভাব ফেলেছে এলাকার অর্থনীতিতেও। যার ফলে যুবকরাও এখন ঝুঁকছে গাভি পালনে, গড়ে তুলছেন বড় বড় খামার।
তালার আটারুই গ্রামের আবু হারেজ সরদারের ছেলে আল-আমিন সরদার দুটা গাভি নিয়ে খামার শুরু করেন ২০১০ সালে। এখন আল-আমিনের খামারে ত্রিশটি গাভি। দৈনিক খরচ বাদ দিয়েও দুধ বিক্রি করে আয় করছেন ১২শ থেকে ১৫ শ টাকা।
খামারি আল-আমিন সরদার জানান, একসময় সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল, হয়ে পড়েছিলাম দিশেহারা। একটি গাভি ৫৫ হাজার ও আরেকটি ৮৫ হাজার টাকা দিয়ে ক্রয় করে শুরু করি খামার। এখন আমার খামারে রয়েছে ৩০টি গাভি। এর মধ্যে ১০টি গাভি দৈনিক একশ লিটার দুধ দেয়। প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হয় ৩৫ টাকায়। আমার খামার থেকে দৈনিক ৩৫শ টাকার দুধ বিক্রি হচ্ছে। বাকি গাভিগুলোও পর্যায়ক্রমে দুধ দিবে। বর্তমানে ৩৫শ টাকা দুধ বিক্রি করে গাভির পেছনে খরচ বাদ দিয়ে হাজার, ১২শ টাকা লাভ হচ্ছে। অভাব কাটিয়ে আমি এখন স্বাবলম্বী।
এছাড়া জেয়ালা গ্রামের ঘোষপাড়া ঘুরে দেখা যায়, এই গ্রামে ২শ ২৬টি ঘোষ পরিবারের বসবাস। আর গরু পালন করেন ২ হাজার ৬ শত ২০টি। এমন কোনো বাড়ি নেই যে সেখানে ২-৬ গাভি গরু নেই। এরই জন্য উপজেলা সদরসহ জেয়ালা গ্রামের আশপাশে গড়ে উঠেছে দুগ্ধ পরিশোধনী কেন্দ্র। পাখি ডাকা ভোরেই জেগে ওঠে জেয়ালা গ্রাম। নারী-পুরুষ ছোটেন গোয়াল ঘরের দিকে। শুরু করেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজ। গোবর সরিয়ে রাখেন নির্দিষ্ট স্থানে। মোটরর পানি দিয়ে গা ধোয়ানো হয় গাভিগুলোর। খেতে দেওয়া হয় ঘাস-বিচালি কিংবা ভূসি, খইল অথবা অন্য কিছু। দুধ দুইয়ে রাখা হয় ছোট-বড় সিলভারের কলসি কিংবা প্লাস্টিকের পাত্রে। তার পর এসব দুধভর্তি পাত্র নিয়ে সাইকেলে পুরুষরা ছোটেন তা বিক্রি করতে। চলে আসে দুধ পরিশোধনাগারে। জেয়ালা গ্রামের দুধ ব্যবসায়ীরা বলেন, আমারদের বাবারা দুধের ব্যবসা করতেন। এটা আমাদের পৈতৃক ব্যবসা। তবে আগে স্বল্প পরিসরে থাকলেও বর্তমানে খামারগুলো বড় আকারে করেছে। প্রতি লিটার দুধ বিক্রি হয় সাড়ে ৩৭ টাকা। এছাড়া দৈনিক খরচ হয় ৬-৭ হাজার টাকা (গোয়ালের গাভি হিসেবে)। প্রতিদিন খরচ বাদ দিয়েও ৫ হাজার টাকার বেশি লাভ হয়।
জেয়ালা গ্রামের ৪ বার জাতীয় ও উপজেলা এবং জেলা পর্যায়ে অসংখ্যবার পুরস্কার প্রাপ্ত দিবস ঘোষ বলেন, ১৯৯৪ সালে দেশি গরু বিক্রি করে ১টি বিদেশি গরু ক্রয় করেছিলাম। বর্তমানে তার খামারে ৫৫-৬০টি বিদেশি গরু আছে। নিজেই দুগ্ধ দোহন করি। গাভি পালনের জন্য কাজের লোক থাকলেও, গাভির দুধ দোহনে আমি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি। নিজের কাজ নিজে করতে ভালোবাসি, এখনও আমি সকালে ও বিকালে ২৫ হতে ৩০টি গাভীর দুধ দোহন করি। প্রতিটি গাভি হতে ১০ হতে ২০ কেজি পর্যন্ত দুধ পাওয়া যায়। এসব কাজের স্বীকৃতির পুরস্কার হিসেবে ২০০৭ সালে জাতীয় পর্যায়ে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার পেয়েছি। ২০০৯ সালে জাতীয় পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ দুগ্ধ সমবায় সমিতির পুরস্কার, ২০১১ সালে জাতীয় পর্যায়ে ব্যক্তিগত সমবায়ী হিসেবে পুরস্কার এবং ২০২০ সালেও আমি জাতীয় পর্যায়ে সমবায় পুরস্কারে ভূষিত হয়েছি। এই নিয়ে টানা ৪র্থ বারের মতো জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। এছাড়া উপজেলা পর্যায়েও আমি টানা ১০ বছর শ্রেষ্ঠ সমবায় সমিতির পুরস্কারে পেয়েছি। ২০০৬ সাল হতে ২০১৬ সাল পর্যন্ত একটানা জেয়ালা ঘোষ পাড়ার সমবায়ী দুগ্ধ উৎপাদন ও তালা কেন্দ্রীয় দুগ্ধ সমিতির সভাপতি ছিলাম, আইনি জটিলতার কারণে ২ বছর ওই সমিতির কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ২০১৮ সাল হতে অদ্যাবধি আবারও সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। তিনি ২০১০ সাল হতে ২০১৪ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ মিল্কভিটার পরিচালক ছিলাম। আমি সমবায়ী হিসেবে ২০০৬ সালে সমিতির নিবন্ধন লাভ করি। আমি ৩ সন্তানের পিতা। এক মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় ছেলে বিদুর চন্দ্র ঘোষ ঢাকা মিল্ক ভিটার অডিটর হিসেবে কর্মরত আছেন। ছোট ছেলে বিক্রম কুমার ঘোষ হিসাববিজ্ঞানের ওপর অনার্স করেছেন। মেয়েটার বিয়ে দিয়েছি। বর্তমানে আমি অনেক সুখে জীবন যাপন করছি।সাতক্ষীরা জেলার অন্তর্গত তালা উপজেলার ছোট্ট একটি গ্রাম হলো ‘জেয়ালা গ্রাম’। এই গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিনির্ভর। তবে বিদেশি গাভী পালনের জন্য এ গ্রামের বাসিন্দাদের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। এই গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই বিদেশি গাভীর ছোট-বড় খামার গড়ে উঠেছে। এসব খামারে ফ্রিজিয়ান, জার্সি, অস্ট্রেলিয়ান গাভীসহ সাদা-কালো রঙের দেশ-বিদেশি ২ হাজার ৭০০ গাভী পালন করা হচ্ছে। দুধ উৎপাদনেও এই গ্রাম দেশের সেরা। দুধ উৎপাদনে এই গ্রামের খামারিরা ৪ বার জাতীয় পর্যায়ে সেরার পুরস্কার লাভ করার পাশাপাশি জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়েও অনেক পুরস্কার লাভ করেছে। এ গ্রামের খামারগুলো থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। এসব দুধ সাতক্ষীরা, খুলনাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হয়। প্রাণ, ডেইরি মিল্ক, আড়ং, মিল্ক ভিটাসহ নামিদামি কোম্পানিগুলোও এই গ্রাম থেকে দুধ সংগ্রহ করে। গাভী পালনের খামার গড়ে এ গ্রামের বেকারত্বের হার অনেকটাই হ্রাস পেয়েছে। তবে জেয়েলা গ্রামের খামারিরা তাদের উৎপাদিত দুধের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা দুধের ন্যায্য মূল্য পেলে তরুণরা খামার গড়ার ব্যাপারে আরো বেশি আগ্রহী হবে। ফলে তাদের অর্থনৈতিক সংকট যেমন কমবে, তেমনি বেকারত্বও দূর হবে। তাই জেয়েলা গ্রামের খামারিরা যাতে ন্যায্য মূল্যে তাদের উৎপাদিত দুধ বিক্রি করতে পারে সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।সাতক্ষীরায় উৎপাদিত তরল দুধে চাহিদা মিটছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের। প্রতিদিন প্রায় এক লাখ লিটার তরল দুধ উৎপাদন হচ্ছে উপকূলীয় এ জেলায়।
সাতক্ষীরায় উৎপাদিত তরল দুধে চাহিদা মিটছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের। প্রতিদিন প্রায় এক লাখ লিটার তরল দুধ উৎপাদন হচ্ছে উপকূলীয় এ জেলায়। এসব দুধ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। তবে দুধের দাম নিয়ে মোটেও সন্তুষ্ট নন খামারিরা। গো-খাদ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে সে অনুপাতে দুধের দাম না বাড়ায় টিকে থাকা দায় হয়ে পড়েছে এসব খামারির।
জেলায় অন্তত তিন হাজারের অধিক ছোট-বড় দুধের খামার গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে সরকারের নিবন্ধিত খামারের সংখ্যা রয়েছে ২ হাজার ৫০০। এ ডেইরি শিল্পের সঙ্গে জড়িয়ে অর্ধলক্ষাধিক মানুষের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী তরল দুধ উৎপাদনে দেশের দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সাতক্ষীরা জেলা। উৎপাদন বাড়াতে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে খামারিদের নানা ধরনের সহায়তা দেয়া হচ্ছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।
অন্যদিকে জেলার অধিকাংশ খামারিদের অভিযোগ, সরকারি কোনো সহযোগিতা তারা পান না। সরকারের বরাদ্দকৃত ভ্যাকসিন ও কৃমিনাশক নিয়েও রয়েছে তাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ। খামারিদের ঠিকমতো দেয়া হয় না এসব ভ্যাকসিন বা ওষুধপত্র।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যানুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জন্য জেলার সাতটি উপজেলায় গরুর দুধ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৮৬ হাজার টন, যা গত অর্থবছরের তুলনায় ১৩ হাজার টন বেশি। ২০২১-২২ অর্থবছরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লাখ ৭৩ হাজার টন। এ লক্ষ্যের বিপরীতে অর্জিত হয়েছিল ১ লাখ ৭৬ হাজার টন। ফলে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েও ৩ হাজার টন বেশি উৎপাদন হয় দুধ। প্রতিদিন গড়ে ৯০-৯৫ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয় এ জেলায়। যার স্থানীয় চাহিদা ১২-১৪ হাজার লিটার। বাকি দুধ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়।
তালা উপজেলার জেলায়া গ্রামের দুগ্ধ খামারি দিবস চন্দ্র ঘোষ জানান, তিন দশক ধরে দুধ উৎপাদন খামার পরিচালনা করে আসছেন। প্রথমে একটি গাভী দিয়ে শুরু করলেও বর্তমান তার খামারে দুধালো গাভীর সংখ্যা ৪৫টি। এসব গাভীর মধ্যে রয়েছে ফ্রিজিয়ান, জার্সি ও হাইয়াল জাতের। একেকটি গাভীর মূল্য ২-৩ লাখ টাকা পর্যন্ত। প্রতিদিন ৪৫০-৫০০ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে তার খামারে। ৩০-৩৫ জন শ্রমিক নিয়মিত তার খামারে কাজ করেন। তবে করোনা-পরবর্তী সময়ে গো-খাদ্যের যে পরিমাণ দাম বেড়েছে তাতে খামার পরিচালনা করতে গিয়ে লোকসান দিতে হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘এক কেজি সয়াবিন খৈল কিনতে হয় ৭৫-৮০ টাকা, ভুট্টাবা গমের ভুসি কেজিপ্রতি ৫৫-৬০ টাকা। সেখানে লিটারপ্রতি দুধ ৪৮-৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। অথচ আমাদের কাছ থেকে ৪৮-৫০ টাকা দরে দুধ কিনে মিল্কভিটা, প্রাণ, আড়ং ও ব্র্যাকসহ অন্যান্য কোম্পানি বাজারে বিক্রি করছে ৮০-৯০ টাকায়। এতে খামারিরা লোকসান গুনছেন আর বড় কোম্পানিগুলো ফুলেফেঁপে উঠছে। অন্যদিকে খামারে গাভী অসুস্থ হলে সরকারি ওষুধ বা ভ্যাকসিন ঠিকমতো পান না। মাঝেমধ্যে দু-একটি কৃষিনাশক দিলেও অন্যান্য জরুরি ওষুধ ভ্যাকসিন দেয়া হয় না।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঘোষপাড়া গ্রামের দুগ্ধ উৎপাদনকারী খামারি আব্দুস সাত্তার নিজেকে সফল ডেইরি খামারি দাবি করে জানান, মাত্র দুটি গাভী দিয়ে নব্বাইয়ের দশকে যাত্রা। বর্তমানে তার খামারে গাভীর সংখ্যা আটটি। দুধ বিক্রির অর্থ দিয়ে এ পর্যন্ত আড়াই-তিন কোটি টাকার সম্পদ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে জেলা শহরে সেলফোনের শো-রুম, সমন্বিত কৃষি প্রকল্প ও পাকা আবাসিক ভবন। আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘ডেইরি খামার খুবই সম্ভাবনাময়। বারো মাসই দেশে তরল দুধের সংকট থাকে। দেশব্যাপী যা উৎপাদন হয় তা দিয়ে চাহিদা মেটে না। ফলে এ শিল্পে বিনিয়োগ করে লাভবান হওয়া যায়। এখানে ঝুঁকি কম। তবে দেশে খামারিদের উৎপাদিত দুধের মূল্য নির্ধারণে সরকারের বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। মিল্কভিটা, প্রাণ বা আড়ং যে দামে দুধ বিক্রি করে তার সমপরিমাণ বা কাছাকাছি পেলেও খামারিরা লাভবান হবেন। কিন্তু বর্তমানে খামারিরা দুধের যে দাম পান তা দিয়ে টিকে থাকা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
এ ব্যাপারে মিল্ক ভিটা সাতক্ষীরা বিসিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক নভেল আক্তার জানান, সাতক্ষীরায় অবস্থিত মিল্ক ভিটার তিনটি দুধ সংগ্রহ কেন্দ্রে দৈনিক প্রায় ৯-১০ হাজার লিটার তরল দুধ ক্রয় করা হয়। প্রতি লিটার ৪৮-৫০ টাকা হারে দাম নির্ধারণ করা রয়েছে। তাছাড়া এটি সমবায় কোম্পানি হওয়ায় খামারিদের আপৎকালীন অনুদান দেয়াসহ বিভিন্ন সুবিধা-অসুবিধা দেখা হয়। তবে দুধের দাম নিয়ে খামারি পর্যায়ে অসন্তোষ প্রশ্নে তিনি বলেন, মিল্ক ভিটা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের ব্যক্তিদের আলোচনার মাধ্যমে দুধের মূল্য বেঁধে দেয়া হয়। এখানে আমাদের কিছুই করার নেই।
একই ধরনের বর্ণনা দিলেন প্রাণ গ্রুপের সাতক্ষীরা জেলার দায়িত্বরত ডেইরি ম্যানেজার ইখতিয়ার উদ্দিন। তিনি বলেন, ‘সাতক্ষীরার সাতটি সেন্টার থেকে দৈনিক আট-নয় হাজার লিটার পরিমাণ দুধ সংগ্রহ করা হয়। লিটার প্রতি যার দাম দেয়া হয় ৫১-৫২ টাকা।’সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেয়ালা গ্রামের দুগ্ধ শিল্পের সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। দিন দিন এ উপজেলায় নতুন নতুন দুগ্ধ খামার গড়ে উঠছে। কম খরচে অধিক মুনাফা আসায় লক্ষাধিক নারী-পুরুষ এ পেশা বেছে নিয়েছেন। অক্লান্ত পরিশ্রমে তাদের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করেছেন। ছোট বড় প্রায় ৪ হাজার দুগ্ধ সমবায়ী ও খামার গড়ে উঠেছে।
স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণে দুধ বিভিন্ন জেলায় এবং রাজধানীতে সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে খামারিরা বেশি অর্থ উপার্জন করছেন। অনেকে শুধু গো খামার করে স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন। বর্তমানে শিক্ষিত যুবকেরা গাভী পালনের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন। এতে দারিদ্র্য দূরীকরণসহ ব্যাপক পুষ্টির চাহিদাও মিটানো সম্ভব হচ্ছে।
স্থানীয় পশু সম্পদ অফিস জানায়, তালা উপজেলায় বর্তমানে দৈনিক প্রায় ৬০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। তবে বেসরকারি হিসাবে এর সংখ্যা আরও বেশি। এসব খামারে উন্নত জাতের গাভী রয়েছে প্রায় তিন থেকে চার হাজার। প্রতিদিন এলাকার চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত দুধ মিল্কভিটা, প্রাণ, ব্র্যাক, আড়ংসহ বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ছাড়াও সরাসরি সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোরের ব্যবসায়ীদের কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে।
তালা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দূরে জেয়ালা গ্রাম। ওই গ্রামের ঘোষপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, ১৫০টি পরিবারে প্রায় এক হাজার লোকের বসবাস। মানুষের প্রধান কাজ কৃষি ও গরু পালন। এখানে রয়েছে প্রায় ১৫০টি দুগ্ধ খামার। খামারগুলোতে জার্সি, ফ্রিজিয়ান, শাহিওয়াল, হলেস্টাইনসহ বিভিন্ন জাতের গরু রয়েছে। এরমধ্যে জার্সি, ফ্রিজিয়ান ও শাহিওয়াল গরুর সংখ্যা বেশি। এখানে যত গরিব পরিবারই থাকুক না কেন তাদের কম পক্ষে ৩ থেকে ৪টি গরু রয়েছে। আর ধনী পরিবারের রয়েছে ১০ থেকে ৫০টি গরু।
তালা উপজেলার জেয়ালা গ্রামের বন বালি ঘোষ, লিপটন ঘোষ, মনোরঞ্জন ঘোষ, তপন ঘোষ ও আয়ুব আলী বাবুর্চ্ছি জানান, অক্লান্ত পরিশ্রমে তাদের ভাগ্যের চাকা পরিবর্তন করেছেন। ছোট বড় প্রায় ৪ হাজার দুগ্ধ সমবায়ী ও খামার গড়ে উঠেছে।
তারা আরও জানান, জেয়ালায় প্রতিটি বাড়িতে গাভি রয়েছে। প্রতিদিন গাভী থেকে তারা দুধ সংগ্রহ করে বিভিন্ন কোম্পানির কাছে বিক্রি করে।
স্থানীয় কয়েকজন গোয়ালিনী বাড়ি থেকে দুধ সংগ্রহ করে নিয়ে যান। প্রতি কেজির মূল্য দেন ৩০ থেকে ৩২ টাকা করে। তারা বাইরে বিভিন্ন জায়গায় ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি করেন। অনেক খামারি আছেন, তারা দুধ সংগ্রহ করে মিল্ক ভিটায় দুধ পৌঁছে দেন।
তালা উপজেলার মাছিয়াড়া গ্রামের গোয়ালিনী সত্যরঞ্জন ঘোষ বলেন, রোদ, বৃষ্টি, ঝড় উপেক্ষা করে এলাকায় বিভিন্ন বাড়িতে ঘুরে প্রতিদিন ৯০ থেকে ১০০ লিটার দুধ সংগ্রহ করি। পরে সংগৃহীত দুধ আকিজ কোম্পানিকে সরবরাহ করে থাকি। এতে করে আমার সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হয়। এতেই আমার সংসার ভালোমতো চলছে।
তালা উপজেলায় মিল্ক ভিটার দায়িত্বে থাকা আনিসুর রহমান বলেন, তালা উপজেলা থেকে প্রতিদিন মিল্ক ভিটা সাড়ে ৭ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ করে। আমরা সরাসরি খামার থেকে দুধ নিয়ে আসি। করোনাকালীন খামারিদের কিছুটা ক্ষতি হলেও আমরা চেষ্টা করছি ন্যায্যমূল্য দিয়ে প্রান্তিক সব খামারির দুধ নিতে।
এদিকে কথা হয় জেয়ালা গ্রামের গাভী পালনে স্বাবলম্বী দিবস ঘোষের সাথে। তিনি গাভী পালন করে তিনবার জাতীয় পুরস্কারসহ একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন। এবার স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সমবায় উন্নয়ন তহবিল (সিডিএফ) পরিচালনা কমিটির আগামী দুই বছরের জন্য ৬ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে দিবস চন্দ্র ঘোষকে সদস্য করা হয়েছে।
তালা উপজেলা কেন্দ্রীয় দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি দিবস চন্দ্র ঘোষ জানান, তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রথম শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পযর্ন্ত প্রথম হয়েছেন। ছোটবেলা থেকেই গরুর প্রতি ভালোবাসা বেশি। ক্লাস শেষে স্কুলের পাশে গরু বাঁধা থাকলে সেই গরু খেয়েছে কিনা তার প্রতি খেয়াল রাখতেন। মনে প্রাণে ভাবতেন, একদিন বড় হয়ে অনেক গরু পালবেন, সেই থেকে শুরু। তিনি এখন বড় একটি খামারের মালিক।
তিনি আরও জানান, তার খামারে ছোটবড় ৫০টি গরু আছে। তার মধ্যে ২৬টি দুধের গাভী এখান থেকে প্রতিদিন প্রায় ২০০লিটার দুধ দেয়। জেয়ালা গ্রামে সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১৫ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। যা বিভিন্ন কারখানায় বিক্রি হয়। দুধ বিক্রি করে এখানকার মানুষের ভাগ্যের চাকা ঘুরছে।
এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই গ্রাম এখন জেয়ালা দুগ্ধপল্লী নামে পরিচিতি পেয়েছে। ২০০১ সালে সাবেক জেলা প্রশাসক পরিদর্শনে এসে দুগ্ধপল্লী নাম ঘোষণা করেন। তবে এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থার সমস্যা রয়েছে। যে কারণে এলাকার বাসিন্দারা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছেন।তালা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে।বলেন, উপজেলার জেয়ালা গ্রাম শুধু তালা, সাতক্ষীরায় না সারাদেশেই নাম করেছে এখানকার দুধের জন্য। এ উপজেলায় বছরে প্রায় ৬০ লাখ টন দুধ উৎপাদন হয় যা চাহিদার চেয়ে বেশি। সংগত কারণে এসব দুধ রপ্তানি হয় রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বাজারে। প্রাণ, ডেইরি মিল্ক, আড়ং, মিল্ক ভিটা এসব দুগ্ধ খামারিদের কাছ থেকে দুধ সংগ্রহ করে দুগ্ধ জাতীয় পণ্য প্রস্তুত করে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে ‌জানান, শুধু তালা উপজেলায় ছোটবড় প্রায় ৪ হাজার দুগ্ধ সমবায়ী ও খামার গড়ে উঠেছে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে বিপুল পরিমাণ দুধ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হচ্ছে। এতে খামারিরা অনেক টাকা উপার্জন করছেন। অনেকে শুধু গো খামার করে স্বনির্ভর হয়ে উঠেছেন। বর্তমানে এই এলাকার শিক্ষিত যুবকরা গাভি পালনের দিকে ঝুঁকে পড়ছেন।
তিনি আরও জানান, এতে দারিদ্র্য দূরীকরণসহ ব্যাপক পুষ্টির চাহিদাও মিটানো সম্ভব হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও খামারিদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে এ খাত জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
সাতক্ষীরা জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে ‌ আরো ‌জানান, তরল দুধ উৎপাদনে খুবই সম্ভানাময় জেলা সাতক্ষীরা। এখানে দৈনিক প্রায় এক লাখ লিটার দুধ উৎপাদন হচ্ছে। যা দেশের তরল দুধ উৎপাদনকারী জেলাগুলোর মধ্যে দ্বিতীয়। প্রথম অবস্থানে রয়েছে সিরাজগঞ্জ জেলা। সরকার এরই মধ্যে লাইভ স্টক ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এলডিডিপি) নামে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পের অধীনে খামারিরা ন্যায্যমূল্যে দুধ বিক্রি করতে পারবেন।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট