
সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : পশ্চিম সুন্দরবনের সাতক্ষীরা রেঞ্জ থেকে রাশিদুল ইসলাম (৩৫) ও আতাউর রহমান (৩২)সহ ছয় বাংলাদেশী জেলেকে অপহরণ করেছে ভারতীয় জলদস্যুরা।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সুন্দরবনের সীমান্তবর্তী মামুন্দো নদীর মারডাঙ্গা খাল এবং মামুন্দো এবং বৈকেরি নদীর সংযোগস্থল সংলগ্ন হরিণটানা খাল থেকে তাদের অপহরণ করা হয়।
রাশিদুল ও আতাউরসহ অপহরণের শিকার জেলেরা সকলে শ্যামনগর উপজেলার কালিঞ্চি এবং টেংরাখালী গ্রামের বাসিন্দা।
তাৎক্ষণিক নাম জানা রাশিদুল ও আতাউর যথাক্রমে মান্নান বরকন্দাজ ও সামছুর রহমানের ছেলে। অপর চার জেলের নাম জানা না গেলেও বিষয়টি নিশ্চিত করেছে নৌকা মালিক কালিঞ্চি গ্রামের মমতাজ ভাঙি মোশারফ হোসেন।
এদিকে লোকালয়ের একেবারে সন্নিকটে এসে বাংলাদেশী জেলেদের অপহরণের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে পুলিশের সাথে মিলে শতাধিক গ্রামবাসী সীমান্তবর্তী নদীতে অবস্থানরত দস্যুদের উদ্দেশ্যে রওনা হলেও বিজিবি সদস্যরা মাঝপথে তাদের আটকে দেয় বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
অপহৃত জেলেদের ফিরে আসা সহযোগীদের দাবি মুক্তিপণের দাবিতে তাদের সঙ্গীদের উঠিয়ে নেয়া জলদস্যুরা ভারতীয়। নয় সদস্যের দলটি চারটি আগ্নেয়াস্ত্র ও একটি ভারতীয় নৌযান নিয়ে তাদের উপর হামলা করে। সকালের দিকে দু’জনকে মাছের নৌকা থেকে তুলে নেয়ার পর দুপুরের সময় চারটি পৃথক নৌকা থেকে আরও চারজনকে দস্যুরা মুক্তিপণের জন্য জিম্মি করে বলেও তাদের দাবি।
টেংরাখালী গ্রামের নুরুল হক জানান দু’দিন আগে বনবিভাগের পাশ (অনুমতিপত্র) নিয়ে তারা তিনজন বনে যায়। বুধবার বেলা ১১টার দিকে ভারতীয় বড় একটি বোট নিয়ে এসে জলদস্যুরা তাদের অপহরণের চেষ্টা চালায়। এসময় তারা তিনজন নৌকা ছেড়ে বনের মধ্যে উঠে গেলে দস্যুরা শুধু নৌকা নিয়ে চলে যায়।
এর আগে বুধবার সকালে রাশিদুল ও আতাউরকে অপহরণের কথা জানান টেংরাখালী গ্রামের ওয়েজকুরুনি। তিনি জানান আরও জেলেদের সাথে পাশাপাশি জাল ফেলে তারা মারঢাঙ্গা খালে মাছ ধরছিল। এসময় নয় সদস্যের জলদস্যু দলটি সেখানে পৌছে দুই নৌকা থেকে তাদেরকে উঠিয়ে নিলেও অপর তিনটি নৌকায় অবস্থানরত জেলেরা বনের মধ্যে উঠে যায়। দস্যুরা জিম্মি দুই জেলের জন্য এখনো পর্যন্ত কোন নির্দিষ্ট অংক মুক্তিপণ দাবি করেনি বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
একইভাবে দুপুরের দিকে বৈকেরির হরিণটানা খাল থেকে তার এক জেলেসহ আরও তিনজনকে একই জলদস্যুরা অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে জানান কালিঞ্চি গ্রামের মমতাজ ভাঙি মোশারফ হোসেন। তার দাবি নৌকা থেকে জেলে উঠয়ে নেয়ার পর তিনি লোকালয়ের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। তার দাবি জলদস্যু দলটি নিজেদের কাজল-মুন্না বাহিনী বলে পরিচয় দিচ্ছে। ইতিমধ্যে জিম্মিদশা থেকে মুক্তি পাওয়া জেলেদের মাধ্যমে তারা নিশ্চিত হয়েছে এসব জলদস্যু ভারতীয়। সম্প্রতি গ্রেপ্তার হওয়া তাদের তিন সহযোগী মুক্তিপণের টাকা ভারতে পাঠানোর কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করে বলেও তিনি নিশ্চিত করেন।
এদিকে স্থানীয় রমজাননগর ইউপি’র প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল হামিদ লাল্টু জানান মুক্তিপণের জন্য ছয় জেলেকে অপহরণের খবর পেয়ে তারা শতাধিক গ্রামবাসী ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল। কিন্তু বিজিবি’র উর্ধ্বতন কতৃপক্ষের অনুমতি না মেলায় তাদেরকে পথিমধ্যে আটকে দেয়া হয়।
এবিষয়ে কৈখালী কোস্টগার্ডের সিসি নাম প্রকাশ না করেই জানান জেলে অপহরণসহ ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে গ্রামবাসীদের যাওয়ার বিষয়ে তারা অবগত। তবে জলদস্যুদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়া পুলিশ বা গ্রামবাসীর সাথে তারা নেই। বিষয়টি তারা নিজেদের মত করে দেখবেন বলেও জানান তিনি।
শ্যামনগর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওস) মোঃ হুমায়ুন কবির জানান দুই সপ্তাহ আগে যশোরের বিভিন্ন এলাকা থেকে একই জলদস্যু বাহিনীর তিন সহযোগীকে গ্রেপ্তার করা হয়। বুধবার একইভাবে আরও কয়েকজন জেলের অপহরণের খবর পেয়ে অপহৃত জেলের পরিবারসহ গ্রামবাসীদের ডাকে সাড়া দিয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েও ফিরে এসেছে।
Like this:
Like Loading...
Related