তালা প্রতিনিধি : দৈনিক জন্মভূমি, পত্রদূতসহ কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশিত “অর্থের অভাবে কি থেমে যাবে অনূর্ধ্ব-১৭ নারী ফুটবলার প্রতিমা মুন্ডার দৌড়?” শিরোনামের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পর অবশেষে জেগে উঠেছে সমাজের বিবেকবান মানুষদের হৃদয়। বসতভিটাহীন, অর্থকষ্টে থাকা প্রতিভাবান এই ফুটবলারের পাশে দাঁড়াতে শুরু করেছেন সমাজের নানা স্তরের মানুষ।
সাতক্ষীরা জেলার তালা উপজেলার খলিশখালী ইউনিয়নের গাছা গ্রামের প্রতিমা মুন্ডা ছোটবেলা থেকেই ফুটবলে অসাধারণ প্রতিভার পরিচয় দিয়েছেন। গাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার সরকারের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় তার ফুটবলযাত্রা। পরে সাতক্ষীরা ক্রীড়া কমিটির তত্ত্বাবধায়ক আরিফুল হাসান প্রিন্সের নির্দেশনায় বিকেএসপিতে ভর্তি হন প্রতিমা।
অসহায় দিনমজুর মা সুনিতা মুন্ডা ও বসতভিটাহীন পিতা শ্রীকান্ত মুন্ডা বহু কষ্টে মেয়ের খেলার খরচ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (বিকেএসপি) পক্ষ থেকে প্রতিমা মুন্ডাাকে (ফু-৯৩৩) তিন বছরের বকেয়া খরচ বাবদ ৪৬ হাজার ৮৪০ টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। বিকেএসপি’র অধ্যক্ষ লেঃ কর্ণেল মোঃ ইমরান হাসান, পিএসসি স্বাক্ষরিত একটি নোটিশে উক্ত বেতন পরিশোধ করার জন্য বলা হয়। এতে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন প্রতিমা মন্ডল। এক পর্যায়ে বিকেএসপি’র খরচ পরিশোধের জন্য টাকা যোগাড়ে ব্যর্থ হয়ে তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট সাহায্যের আবেদন করেন।
এই খবর পেয়ে দৈনিক জন্মভূমি ও পত্রদূত পত্রিকায় পেয়ে বিষয়টি তুলে ধরলে মানবিক সমাজ এগিয়ে আসে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপা রানী সরকার প্রতিমার পরিবারের হাতে নগদ ৫ হাজার টাকা ও একটি ফুটবল উপহার দেন। সাতক্ষীরার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী কেশব সাধু ব্যক্তিগতভাবে ১০ হাজার টাকা অনুদান দেন। সবচেয়ে বড় সহায়তা আসে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক ও লেখক আনিসুল হক-এর কাছ থেকে। তিনি প্রতিমার পরিবারের হাতে ৪০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করেন এবং ভবিষ্যতেও সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
গাছা মন্দির কমিটির সভাপতি ডা. হরিশচন্দ্র মন্ডল বলেন, “ পত্রিকার সংবাদের পরই প্রতিমার ভাগ্য বদলে যেতে শুরু করেছে। সাংবাদিকরাই দেখিয়েছেন, কলম সমাজ পরিবর্তনের হাতিয়ার।”
প্রতিমার মা সুনিতা মুন্ডা বলেন, “মেয়ের খরচ জোগাতে অন্যের ঘেরে কাজ করি। ভগবান যেন মেয়েকে আশীর্বাদ দেন, দেশ যেন তার গর্ব হয়—এই প্রার্থনাই করি।”
তিনি আরও জানান, একটি স্থানীয় সংস্থা সহানুভূতির বশে তাদের জন্য একটি ছোট্ট ঘর তৈরি করে দিয়েছে, কিন্তু ঘরে যাওয়ার রাস্তা পর্যন্ত ঠিকমতো নেই। সরকারি সাহায্য মেলেনি বহুদিন।
তালা উপজেলা ক্রীড়া সংস্থার সাবেক সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ এনামুল ইসলাম জানান, প্রতিমা মন্ডল ২০২২ সালে অনূর্ধ্ব-১৫ বাংলাদেশ জাতীয় দলে, ২০২৩ সালে ভিয়েতনামে অনূর্ধ্ব-১৭ দলে, ২০২৪ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সুব্রত কাপে বিকেএসপি’র হয়ে মাঠ মাতিয়েছেন। এছাড়া পাকিস্তানে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে দেশের জন্য গৌরব অর্জন করেছেন। জাতীয় দলে তিনি খেলেন ডিফেন্ডার হিসেবে।
এদিকে দুর্গাপূজার ছুটি শেষে প্রতিমা বিকেএসপিতে ফিরে গেছেন। যাওয়ার আগে তিনি বলেন, “আমি সাংবাদিকদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আপনাদের কারণেই সমাজ আমার পাশে দাঁড়াচ্ছে। আমি একদিন দেশের গৌরব হবো-এই স্বপ্ন নিয়েই আবার মাঠে ফিরেছি।”
তালা উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপা রানী সরকার জানিয়েছেন, সরকারি সহযোগিতা এলে প্রতিমার বসতঘর নির্মাণে সহায়তা করবেন। ক্রীড়া সংগঠক আরিফুল হাসান প্রিন্স প্রতিমাকে জাতীয় দলে জায়গা করে দিতে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।