1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২৭ পূর্বাহ্ন

ভরাট হচ্ছে সুন্দরবনের নদী ও খাল

  • প্রকাশিত: বুধবার, ২৯ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৯১ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ‌: সুন্দরবনের অভ্যন্তরীণ নদী-খালগুলো ভরাট হয়ে যেতে শুরু করেছে। পলি পড়ে ভরাট হয়ে যাওয়া এ সকল নদী ও খালে জোয়ারের পানি ঢুকছে না, ভাটার সময় পানি নামছে না। ফলে বনের ভেতরে লবনাক্ততা বেড়েই চলেছে। যা সুন্দরবনের প্রাণী ও জীববৈচিত্রের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দেখা দিচ্ছে। মাঝে মধ্যেই সুন্দরবনের হরিণ, বাঘসহ বিভিন্ন প্রাণী খাদ্য ও পানির জন্য লোকালয়ে প্রবেশ করছে। ইদানিং এ সংখ্যা বেড়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত দুই দশকে সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ভূমির উচ্চতা (ফরেস্ট ফ্লোর) দেড় থেকে দুই ফুট উঁচু হয়ে গেছে। এর ফলে ম্যানগ্রোভ বৃক্ষসমূহের শ্বাসমূলের স্বাভাবিক শ্বাস প্রশ্বাস ব্যহত হচ্ছে। যা সুন্দরী, গড়ান গেওয়া, কেওড়া, বাইনসহ অন্যান্য গাছের বিস্তারে বাঁধার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে অর্ধ শত নদী ও খাল পলিমাটি ভরাট হয়ে পড়ছে। ফরেস্ট ফ্লোর-এর উচ্চতা দেড় থেকে দুই ফুট বেড়ে যাওয়ায় এই উচ্চতা পার হয়ে বনে ঢুকতে পারছে না জোয়ারের পানি। পূর্ব সুন্দরবন অঞ্চলের কমপক্ষে ছয় এলাকায় এখন এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গিয়েছে চাঁদপাই রেঞ্জ এলাকায়। প্রত্যেক ভরা অমাবস্যা ও পূর্ণিমার জোয়ারে সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা ভেসে যায়। কিন্তু এ ছয় এলাকায় তা হচ্ছে না। এসব এলাকায় ফরেস্ট ফ্লোরের উচ্চতা বেড়েছে প্রায় দুই দশক ধরে। এলাকাগুলোয় বর্তমানে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গে সম্প‚র্ণ বেমানান গাছপালার উপস্থিতিও দেখা যাচ্ছে অনেক। অন্যদিকে জোয়ারের পানি আসতে না পারায় সুন্দরীসহ অন্যান্য ম্যানগ্রোভ বৃক্ষরাজির বংশবিস্তারও ব্যাহত হচ্ছে। ব্যাঘাত ঘটছে পাতা ও গুল্মের পচন প্রক্রিয়ায়ও। বনের মাটিতে এসব পাতা ও গুল্মের আবরণ পড়ে এখন অগ্নিঝুঁকিও বাড়ছে।
ফরেস্ট ফ্লোর উঁচু হয়ে পড়া এলাকাগুলোর মধ্যে রয়েছে চাঁদপাই রেঞ্জের অধীন কাটাখালি, ধানসাগর, গুলিশাখালী, নাঙলী, আমুর বুনিয়া ও শরণখোলা রেঞ্জের অধীন দাসের ভারানী। বন বিভাগ-সংশ্লিষ্টরা জানাচ্ছেন, গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে এসব এলাকায় জোয়ারের পানি উঠতে পারছে না। ফলে ব্যাহত হচ্ছে বনের সাধারণ বাস্তুতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। অন্যদিকে পাতাগুল্মের স্তর বেড়ে আগুনের ঝুঁকিও চরম মাত্রায় তৈরি হয়েছে। ফলে মৌয়াল বা অন্য কোনো উৎস থেকে সামান্য আগুনের আঁচ এলেই তৈরি হচ্ছে বড় ধরনের অগ্নিকান্ডের ঝুঁকি। চলতি বছরেই পূর্ব সুন্দরবন এলাকায় দুবার অগ্নিকান্ড হয়েছে। বছরের শুরুতে দাসের ভারানী এলাকায় অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এ অগ্নিকান্ডে ক্ষতির শিকার হয়েছে প্রায় ১০ একর বনভূমি।
স্থানীয়রা জানালেন, দাসের ভারানী ক্যাম্প স্টেশন এলাকায় ফরেস্ট ফ্লোর এক-দুই ফুট উঁচু হয়েছে কয়েক কিলোমিটার জুড়ে। গত দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে এখানে শুষ্ক মৌসুমে জোয়ারের পানি উঠছে না। গত কয়েক যুগ ধরেই এ অবস্থার তৈরি হচ্ছে। বনের ভোলা নদী বেশ কয়েক জায়গায় পানিশূন্য অবস্থা। এ অঞ্চলে সুন্দরবনের বৈশিষ্ট্যের নানা দিক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।
সুন্দরবন নিয়ে কাজ করা ‘ক্লিন’ নামের একটি বেসরকারি সংগঠনের নির্বাহী প্রধান হাসান মেহেদী বলেন, সুন্দরবনের নদী-খালগুলোয় পলি জমে ভরাট হওয়ায় প্রাণিক‚লের বিচরণ কমছে, সংখ্যাও কমে যাচ্ছে।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদীন জানান, সুন্দরবনে পানির অভাবে প্রায়ই হরিণ, বাঘ, বানরসহ জীব জন্তু লোকালয়ে প্রবেশ করছে। দুই তিন যুগ আগেও এমনটা আমরা হতে দেখিনি। ভোলা টহল ফাড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রবিউল ইসলাম জানান, নদী ভরাট হয়ে যাওয়ার সুন্দরবনের বন্যপ্রাণী সহজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।
এ বিষয়ে বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, গত দুই যুগের বেশি সময় ধরেই পূর্ব সুন্দরবনের বেশকিছু অঞ্চলে জোয়ারের পানি প্রবেশে বড় ধরনের পরিবর্তন আমরা লক্ষ্য করেছি। ফরেস্ট ফ্লোর বেশ উঁচু হয়ে যাওয়ার কারণেই জোয়ারের পানি প্রবেশ করতে পারছে না। শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রবেশ করতে পারছে না বিধায় আবার এ অঞ্চলে সুন্দরবন-বহির্ভ‚ত গাছপালাও জন্মাচ্ছে। সুন্দরবনের প্রকৃতিগত এ পরিবর্তন বনের পাশাপাশি বাস্তুসংস্থানে বড় ধরনের ঝুঁকি তৈরি করছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো জানান, সুন্দরবনের প্রাণপ্রকৃতি সুরক্ষায় ১৮৭ কোটি ৮৭ লাখ ব্যয়ে ৩ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সুন্দরবনে প্রাণীক‚লের জন্য সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। বন্যপ্রাণির সুপেয় পানির চাহিদা মেটাতে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮৪টি পুকুর খনন ও পুনঃখনন প্রকল্পের কাজ চলছে। যা এই এলাকার প্রাণি বৈচিত্র রক্ষায় কাজ করছে।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট