1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:১২ পূর্বাহ্ন

দুবলারচরে রাস উৎসবে যেতে ব্যাপক প্রস্তুতি; তৎপর শিকারীরাও

  • প্রকাশিত: বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২৫
  • ৭১ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি : দুবলারচরের রাসমেলা হলো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের একটি ঐতিহ্যবাহী উৎসব, যা প্রতি বছর কার্তিক বা অগ্রহায়ণ মাসের পূর্ণিমা তিথি উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এই উৎসবে পুণ্যার্থীরা রাসপূর্ণিমা উপলক্ষে সমুদ্রস্নান ও রাসপূজা করেন। বর্তমানে পরিবেশগত সংরক্ষণের জন্য মেলা আয়োজন সীমিত রাখা হয়, তবে পুণ্যস্নান ও পূজা হয়ে থাকে।
সুন্দরবনের দুবলারচরে রাসমেলা ঘিরে উপকূল অঞ্চলে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। মেলায় যেতে পূর্ণার্থী ও দর্শনার্থীদের প্রস্তুতি চলছে। প্রতিবছর কার্তিক মাসের শেষ বা অগ্রহায়ণের প্রথম দিকে শুক্লপক্ষের ভরা পূর্ণিমায় সুন্দরবনের দুবলারচর আলোরকোলে ৩ দিন ব্যাপী রাস মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটি এশিয়ার সব থেকে বড় সমুদ্র মেলা। ৩ নভেম্বর থেকে ৫ নভেম্বর পর্যন্ত ৩ দিন ব্যাপী রাসমেলা অনুষ্ঠিত হবে।
হাজার হাজার পুর্ণার্থী ও দর্শনার্থীদের আগমনে মেলা উৎসব মূখর হয়ে ওঠে। এ মেলাকে কেন্দ্র করে সুন্দরবন উপকূলবর্তী মানুষের মধ্যে উৎসব মূখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। মেলায় যাওয়ার জন্য ট্রলার ভাড়াসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি চলছে। হিন্দু ধর্মালম্বীরা পূর্ণিমার জোয়ারে নোনা জলে স্নানের মধ্যদিয়ে পাপমোচন হয়ে মনস্কামনা পূর্ণ হবে, এ বিশ্বাসে রাসমেলায় যোগ দিলেও সময়ের ব্যবধানে এখন নানা ধর্ম ও বর্ণের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা যোগে তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীরা সমবেত হয়। আসে অসংখ্য বিদেশী পর্যটকও। তবে মেলাকে সামনে রেখে চোরা শিকারী ও মৌসুমী শিকারী চক্র সুন্দরবনের হরিণ শিকারের সুযোগ নেয়। তাই তাদের আগাম তৎপরতাও শুরু হয়ে যায়।
সূত্র জানাগেছে, সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলার চোরা শিকারী চক্র সক্রিয় রয়েছে। সুন্দরবনে প্রবেশে কড়াকড়ির মধ্যেও রাস পূর্ণিমার মেলাকে ঘিরে শিকারীদের হরিণ নিধনের সুযোগ গ্রহণ করে। সুন্দরবন সংলগ্ন উপজেলার শিকারীরা রাসমেলার আড়ালে হরিণ শিকারের ফাঁদ, জাল, বরশিসহ বিভিন্ন উপকরণ তৈরীতে ব্যস্ত।
রাসমেলা উপলক্ষ্যে ব্যাপক নিরাপত্তা গ্রহণ করা হলেও শ্যামনগর, কয়রা, পাইকগাছা, দাকোপ, বটিয়াঘাটা, মংলা, রামপালসহ উপকূলীয় এলাকার শিকারীরা মেলা শুরু হওয়ার ১০/১৫ দিন আগে জেলে বা বনজীবী সেজে বনের মধ্যে প্রবেশ করে রেখে আসা শিকার করার উপকরণ। মেলার আনন্দে মেতে উঠা দর্শনার্থী ও নিরাপত্তা কর্মীদের চোখ ফাকি দিয়ে এসব ফাঁদ দিয়ে হরিণ শিকারের সুযোগ গ্রহণ করে।
রাসমেলার সময় হিরণ পয়েন্ট, দুর্বারচর আলোর কোল সহ বিভিন্ন চর ও সুন্দরবন সাগর মোহনায় পুর্ণার্থী, দর্শনার্থী ও পর্যাটক সহ হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। এ সময় জনসমুদ্রে শিকারী চক্র মিশে গিয়ে চোখ ফাকি দিয়ে হরিণ নিধনে মেতে উঠে। ব্যাপক নজরদারী থাকা স্বত্বেও শুধুমাত্র হরিণ শিকারের উদ্দেশ্যে এ বিশাল মেলায় দর্শনার্থীরুপে আগত শিকারীদের আটকানো অনেক সময় সম্ভব হয় না।
পুণ্যনস্নানে অংশ নিতে দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের ৩ থেকে ৫ নভেম্বর-এ তিন দিনের জন্য অনুমতি প্রদান করা হবে এবং প্রবেশের সময় এন্ট্রি পয়েন্টে লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকার প্রবেশ ফি, অবস্থান ফি এবং লোকের সংখ্যা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক রাজস্ব আদায়পূর্বক পাশ প্রদান করা হবে। অনুমতি পেতে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপিসহ তীর্থযাত্রীদের আবেদন করতে হবে।
প্রতিটি অনুমতিপত্রে সিল মেরে পথ/রুট উল্লেখ্য করা হবে এবং তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীগণ পছন্দমত একটি রুট বা পথ ব্যবহার করবেন। ৩ নভেম্বর দিনের ভাটায় যাত্রা আরম্ভ করতে হবে। রাসপূূর্ণিমা পুণ্যনস্নানের উদ্দেশ্যে নৌযান নির্ধারিত রুটে শুধু দিনের বেলায় চলাচল করতে পারবে। বন বিভাগের চেকিং পয়েন্ট ছাড়া কোথাও লঞ্চ, ট্রলার ও নৌকা থামানো যাবে না। ট্রলারে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লাইফ জ্যাকেট বা বয়া সংরক্ষণ করতে হবে।
রাসপূর্ণিমা পুণ্যনস্নানে সময় কোন বিস্ফোরকদ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার ও বহন নিষিদ্ধ। কারো কাছে কোন আগ্নেয়াস্ত্র, বিস্ফোরকদ্রব্য, হরিণ মারার ফাঁদ, দড়ি, গাছ কাটার কুড়াল, করাত ইত্যাদি অবৈধ কিছু পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কোন অবস্থায়ই সিঙ্গেল ইউজ প্লাস্টিক যেমন প্লাস্টিকের প্লেট, পানির বোতল, গ্লাস বা চামচ বহন করা যাবে না।
লঞ্চ, ট্রলার, নৌকায় এবং পুণ্যনস্নান স্থলে মাইক বাজানো, পটকা, বাজি ইত্যাদি ফোটানোসহ সকল প্রকার শব্দ দূষণ নিষিদ্ধ। রাসপূর্ণিমায় আগত পুণ্যার্থীদের সুন্দরবনে প্রবেশের সময় জাতীয় পরিচয়পত্র অথবা ইউপি চেয়ারম্যানের নিকট হতে প্রাপ্ত সনদপত্রের মূলকপি সাথে রাখতে হবে।
সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এ জেড এম হাছানুর রহমান এই প্রতিবেদককে ‌ জানান, পুণ্যনস্নান নিরাপদে যাতায়াতের জন্য দর্শনার্থী ও তীর্থযাত্রীদের জন্য সুন্দরবন পশ্চিম বন বিভাগ পাঁচটি পথ নির্ধারণ করেছে। এ সকল পথে বন বিভাগ, পুলিশ, বিজিবি ও কোস্টগার্ডের টহল দল তীর্থযাত্রী ও দর্শনার্থীদের জানমালের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবে।
বঙ্গোপসাগর তটবর্তী সুন্দররবনের দুবলার চরের ঐতিহাসিক রাস উৎসব ঘিরে এবার ব্যাপক কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। শুধুমাত্র সনাতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থী ছাড়া কোনো টুরিস্ট যাওয়ার অনুমতি পাবেন না সেখানে। বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষা, হরিণ শিকার ও প্লাস্টিক বর্জ্য দূষণরোধে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী ।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, পুণ্যার্থীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৫টি নৌপথ। উৎসবকে কেন্দ্র করে বনবিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিরাপত্তাও বৃদ্ধি করা হয়েছে। আগামী ৩ নভেম্বর থেকে প্রতিবছরের ন্যায় পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরের আলোরকোলে অনুষ্ঠিত হবে তিন দিনের রাস উৎসব। আলোরকোলে নির্মিত অস্থায়ী মন্দিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সনাতন ধর্মের মানুষ এসে সেখানে পূজা করবেন।
সনাতন ধর্মের বিধান অনুযায়ী পূর্ণিমার ভরা তিথিতে ৫ নভেম্বর ভোরের সাগরের প্রথম জোয়ারের লোনা জলে পুণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হবে সনাতনীদের এই মিলন মেলা।
ঐতিহাসিকভাবে জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে অর্থাৎ ১৮শ শতকের শেষভাগে বা ১৯শ শতকের শুরুর দিকে সুন্দরবনের দুবলার চরে রাস পূজা শুরু হয়। হরভজন দাস নামে এক হিন্দু সন্ন্যাসী এই রাস পূজার গোড়াপত্তন করেন। তিনি তার ভক্তদের নিয়ে রাস পূর্ণিমার তিথিতে দুবলার চরে পূজাআর্চনা ও সাগরের লোনা জলে স্নান করতেন। সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান থেকেই ধীরে ধীরে ‘দুবলার চরের রাস মেলার প্রচল ঘটে। এরপর থেকে দুবলা ফিমারমেন গ্রুপের আয়োজনে সাগরদীপ আলোরকোলে রাস পূর্ণিমা সনাতনীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় ও পর্যটন উৎসব হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
কিন্তু পরবর্তীতে এই রাস উৎসব কেন্দ্র করে লাখো মানুষের লোকসমাগ ঘটে। সনাতন ধর্মের মানুষের পাশাপাশি উৎসবে যোগ হয় দেশি-বিদেশি পর্যটকও। ভক্ত ও পর্যটকদের ভিড়ে চাপ বাড়তে থাকে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলের ওপর। মেলাকে কেন্দ্র করে শব্দ দূষণ ও প্লাস্টিক বর্জ্যে ক্ষতির মুখে পড়ে বনের পরিবেশ। এছাড়া বাড়তে থাকে পুণ্যার্থীর ছদ্মবেশে আসা হরিণ শিকারি চক্রের অপতৎপরতা। শেষমেষ জীববৈচিত্র্য রক্ষা ও দূষণের কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালে সীমিত করা হয় মেলার কার্যক্রম। এরপর থেকে রাস উৎসব শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা ও স্নান উৎসবের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হয়।
রাস উৎসব উদ্‌যাপন কমিটির সভাপতি ও দুবলা ফিশারমেন গ্রুপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. কামাল উদ্দিন আহমেদ জানান, ৩ নভেম্বর থেকে রাস উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। বনবিভাগের অনুমতি নিয়ে মূল পূজাস্থলে আলোরকোলে শুরু হয়েছে রাধা-কৃষ্ণের অস্থায়ী মন্দির নির্মাণের কাজ। এই মন্দিরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে হিন্দু ধর্মের ভক্তরা এসে তাদের মনোবাসনা পূরণের আশায় পূজা-অর্চনা করবেন। ৫ নভেম্বর প্রত্যুষে সাগরের প্রথম জোয়ারে পুণ্যস্নান শেষে যে যার গন্তব্যে ফিরে যাবেন পুণ্যার্থীরা। উৎসবকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে সতর্ক রয়েছে কমিট।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ বাগেরহাটের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. রেজাউল করিম চৌধুরী জানান, এ বছর রাস উৎসবে শুধু সানতন ধর্মাবলম্বী পুণ্যার্থীরা যেতে পারবেন। এর বাইরে রাস উৎসবের উদ্দেশে কোনো পর্যটক যেতে পারবেন না। রাস পূজায় ট্যুরিস্টদের নেওয়ার জন্য কোনো ট্যুর অপারেটরকে অনুমতি দেওয়া হয়নি।
ডিএফও রেজাউল করিম চৌধুরী আরও জানান, এর আগে রাস উৎসবে অবাধ যাতায়াতের কারণে পূণ্যার্থীদের ছদ্মবেশে হরিণ শিকারিরা প্রবেশ করত। এছাড়া ব্যাপক লোক সমাগমের ফলে প্লাস্টিক দূণষসহ সংরক্ষিত বনের পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। যে কারণে এ বছর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট