1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০৩ অপরাহ্ন

ডুমুরিয়ায় লেপ-তোশক কারিগররা দুশ্চিন্তায়

  • প্রকাশিত: সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫
  • ১০ বার পড়া হয়েছে

ডুমুরিয়া (খুলনা) প্রতিনিধি : ডুমুরিয়া (খুলনা) শীত আসতে না-আসতেই দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় ব্যস্ততা বেড়েছে ঐতিহ্যবাহী লেপ-তোশক কারখানাগুলোতে। খুলনা জেলার ডুমুরিয়া,চুকনগর,শাহাপুর,শ্যামপুর,সহ বিভিন্ন গ্রামও এই শিল্পের এক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। তবে কাঁচামালের অস্থির বাজার, যন্ত্রনির্ভর পণ্যের প্রতিযোগিতা এবং অভাবনীয় অফ সিজন- সব মিলিয়ে ক্ষুদ্র কারিগরদের অবস্থা নাজুক হয়ে উঠছে। বছরের পাঁচ মাস- কার্তিক থেকে ফাল্গুন-এই অঞ্চলের লেপ ও তোশক কারিগরদের প্রধান কাজের মৌসুম। শীত মৌসুমে তাদের কর্মব্যস্ততা থাকলেও অফ সিজনে বেকারত্ব ও অনিশ্চয়তার মুখে পড়তে হয় বেশির ভাগ কারিগরকে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও টিকে থাকার সংগ্রাম যেন তাদের নিত্যসঙ্গী।
জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লেপ-তোশকের কাজের সুনাম যেমন আছে, তেমনি আছে কষ্ট, পরিশ্রম ও আর্থিক অস্থিরতা।
জেলার ডুমুরিয়া বাজারের নুর ইসলাম (৪২) এই পেশায় আছেন দীর্ঘ ২৪ বছর। পেশাগত ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন তিনি। মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শীত মৌসুমে কাজের চাপ বেশি থাকে, তখন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকতে হয়। কিন্তু অফ সিজনে প্রায়ই কাজ না থাকায় দুশ্চিন্তায় পড়তে হয় পরিবার নিয়ে।
মোঃ মোজাহার আলী জানান, সিজনে দিনে গড়ে ৭ থেকে ৮টি লেপ বা তোশক তৈরি করতে পারেন তারা। দুজন মিলে একটি লেপ তৈরি করতে সময় লাগে প্রায় এক ঘণ্টা। তবে সিজন শেষ হলে কাজ কমে এসে দৈনিক দুই-তিন পিসে ঠেকে। ফলে উপার্জনও হয়ে যায় অর্ধেকের কম।

কারিগররা জানিয়েছেন, তুলা এবং পলি ফোম- এই দুটি কাঁচামালের দামের ওঠানামায় তাদের শ্রমের মূল আয়কে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করে। প্রতিটি লেপ তৈরিতে লাগে ৬ থেকে ৭ কেজি তুলা। তুলার দাম কেজিপ্রতি কখনো ৫০ টাকা, কখনো ৬০ বা ৭০ টাকাও হয়ে থাকে। আর পলি ফোমের পাইকারি দাম কেজিপ্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা।

তোশক তৈরির ক্ষেত্রে খরচ আরো বেশি। একটি তোশকে তুলা লাগে ১৫ থেকে ২০ কেজি, যার দাম এক হাজার ৬০০ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকার মধ্যে ওঠানামা করে। মিলন বলেন, দাম বাড়লে আমাদের লাভের পরিমাণ কমে যায়। আবার কম দামে বিক্রি করলে খরচই ওঠে না। তাই প্রতিনিয়ত সবকিছু হিসাবনিকাশ কষে চলতে হয়।
তাদের তৈরি ছোট লেপ বাজারে বিক্রি হয় এক হাজার ২০০ টাকা, আর বড় লেপ এক হাজার ৭০০ টাকা। প্রতিটি পিস তৈরির জন্য মালিকপক্ষ থেকে তারা পান ২৫০ টাকা করে।

তিনি আরো জানান, মৌসুমে একজনের আয় মাসে গড়ে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়। কিন্তু মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দীর্ঘ অফ সিজনে আয় নেমে আসে মাত্র ১০ হাজার টাকায়। এই আয়ে পরিবার চালানো, কাঁচামাল কেনা এবং দৈনন্দিন ব্যয় মেটানো অনেক সময় অসম্ভব হয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, সিজনে যা আয় করি, তা দিয়ে পুরো বছরের খরচ চালানো যায় না। অফ সিজনে অন্য কোনো কাজ না পেলে খুব কষ্টে দিন কাটাতে হয়। এই কারিগররা শুধু লেপ নয়, তোশক, বালিশ ও জাজিমও তৈরি করেন। একটি বালিশে ব্যবহার করা হয় প্রায় দেড় কেজি তুলা। তবে বালিশের বাজারদর কম হওয়ায় শ্রম অনুযায়ী লাভও কম।

লেপ-তোশক তৈরির মতো লোকজ কারুশিল্প বাংলাদেশের গ্রামীণ অর্থনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তবে এ শিল্পটির স্থায়ীত্ব এখন নানা চ্যালেঞ্জের মুখে। কাঁচামালের অস্থির বাজার, যন্ত্রনির্ভর পণ্যের প্রতিযোগিতা এবং অভাবনীয় অফ সিজন-সব মিলিয়ে ক্ষুদ্র কারিগরদের অবস্থা নাজুক হয়ে উঠছে।

স্থানীয় কারিগরদের সঙ্গে কথা হলে অভিযোগের সুরে অনেকেই বলেন, একটু সরকারি সহযোগিতা পেলে তারা নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন। বিশেষ করে অফ সিজনে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বিনা সুদে ঋণ, কিংবা বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তাদের জীবনকে অনেকটাই স্থিতিশীল করবে।
আমরা কারিগর। হাতের কাজ জানি। কিন্তু সারা বছর কাজ থাকে না। তাই সরকারের কাছে দাবি- অফ সিজনে যেন আমরা সুদমুক্ত ঋণ পাই। অথবা কোনো ছোটখাটো সরকারি কর্মসংস্থানের সুযোগ যোগ তৈরি করে দিলে আমরা আমরা পরিবার পরিবার নিয়ে নিয়ে স্বস্তিতে থাকতে পারব।

স্থানীয়দের মতে, লেপ-তোশক শিল্প শুধু অর্থনৈতিক সুবিধাই দেয় না বরং একটি পুরনো গ্রামীণ ঐতিহ্যকেও ধরে রাখে। সময়ের সঙ্গে এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে কারিগরদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি।
সাংবাদিক আজহারুল ইসলাম বলেন, এই পেশাকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের উচিত লেপ-তোশক কারিগরদের জন্য বিশেষ বরাদ্দ রাখা। সিজনের বাইরে সুদমুক্ত ঋণের ব্যবস্থা করা এবং প্রশিক্ষণ ও বাজারসংযোগে সহায়তা দেয়া। এতে যেমন একটি ঐতিহ্যবাহী পেশা টিকে থাকবে, তেমনি গ্রামীণ অর্থনীতিতেও নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।

সরকারি চাকরিজিবি খান জাহান আলী জানান, শীত পড়ার আগেই পরিবারের জন্য লেপ কিনলাম। আগের বছরের তুলনায় এবার দোকানগুলোতে মান ভালো মনে হয়েছে। দামও সাধারণ মানুষের নাগালে। একই বাজারে কেনাকাটা করতে আসা সুমাইয়া খাতুন বলেন, বাচ্চার জন্য হালকা কিন্তু উষ্ণ লেপ দরকার ছিল। এখানে পাওয়া লেপটা বেশ নরম, সেলাইও ভালো। ব্যবহারে টেকসই হবে মনে হচ্ছে।

হোস্টেলে থাকা কলেজশিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, শীতের সময় রাত কাটানো কষ্টকর হয়ে যায়, তাই একটু ভারী আর টেকসই তোশক কিনলাম। ব্যবহার করে দেখছি, উষ্ণতা ঠিকমতো ধরে রাখে।

ব্যবসায়ী সুমন বলেন, দাম এবং মান মিলিয়ে লেপ-তোশক পাওয়া এখন একটু কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু কিছু দোকানে এবার মানসম্মত তুলা ভরাট লেপ পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতারাও পছন্দ করছেন।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট