ডেস্ক রিপোর্ট : জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৮০তম অধিবেশনে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সফরের শুরুতেই নিউইয়র্কে উত্তেজনা দেখা দেয় প্রবাসী বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মীদের মধ্যে।
ড. ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত প্রতিনিধি দলে রয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্য সচিব আখতার হোসেন, যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির। যুক্তরাষ্ট্র থেকেই প্রতিনিধি দলে যোগ দেন জামায়াত নেতা ড. নাকিবুর রহমান।
নিউইয়র্কে পৌঁছানোর পর থেকেই বিএনপি-আওয়ামী লীগ ও জামায়াতপন্থী প্রবাসী সংগঠনগুলো মুখোমুখি অবস্থানে চলে আসে। রোববার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি এক স্বাগত মিছিল ও সমাবেশ করে। একই স্থানে ড. ইউনূসের আগমনের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগও।
সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে শুরু হলেও পরিস্থিতি দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি স্লোগান, বাগবিতণ্ডা এবং শেষ পর্যন্ত হাতাহাতির ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে নিউইয়র্ক পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। স্থানীয় তথ্য বলছে, ঘটনাস্থল থেকে মির্জা ফখরুলকে গালিগালাজকারী এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে আটকও করে নিউইয়র্ক পুলিশ।
এদিকে, নিউইয়র্কে বিমানবন্দর থেকে বের হওয়ার পরপরই বিএনপি ও এনসিপি নেতাদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। বিশেষ করে এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনকে লক্ষ্য করে ডিম ছোড়া হয় এবং তাকে অশালীন ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। এ ঘটনায় সামাজিকমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রাজনৈতিক কর্মী ও সাধারণ প্রবাসীরা।
দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আখতার হোসেনের ওপর এ হামলা তার ব্যক্তি পরিচয়ের কারণে নয়, বরং তিনি যে রাজনৈতিক শক্তিকে প্রতিনিধিত্ব করেন, সেই গণতন্ত্রপন্থী অবস্থানের কারণেই তাকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। এই আক্রমণ পরাজিত ও ভীত শক্তির দিশেহারার বহিঃপ্রকাশ, বলেও মন্তব্য করেন দলটির যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা।
সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, হামলার সময় মির্জা ফখরুল, আখতার হোসেন ও তাসনিম জারা আলাদা হয়ে হাঁটছিলেন। এ সময় জামায়াতপন্থী কর্মীরা অনুরোধ করলেও তারা একত্রে চলেননি। ফলে সুযোগ পেয়ে আওয়ামী লীগের একদল কর্মী মির্জা ফখরুল ও আখতারকে হেনস্তা করে। অন্যদিকে, জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. তাহেরকে চারপাশ ঘিরে ঘন নিরাপত্তা দিয়ে সুরক্ষিতভাবে গাড়িতে তুলে দেন জামায়াতের কর্মীরা।
ফেসবুকসহ সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া বিভিন্ন ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, বিমানবন্দরে বিএনপি কিংবা এনসিপির তেমন কোনো কর্মী উপস্থিত ছিল না। বিপরীতে জামায়াতপন্থী কর্মীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয় এবং তারা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে একদল ডা. তাহের এবং অন্যদল মির্জা ফখরুলদের সহায়তা করছিল। জামায়াতের কর্মীদের সংগঠিত অবস্থান ও নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য তুলে ধরেই তাদের প্রশংসা করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ আগেই ঘোষণা দিয়েছিল, তারা ড. ইউনূসের নিউইয়র্ক আগমনের বিরোধিতা করবে এবং তার হোটেল সামনেও প্রতিদিন বিক্ষোভ চালাবে। সেই অনুযায়ী তারা রোববারের ঘটনার পরও আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেয়।
পরিস্থিতির জটিলতা এবং উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে নিউইয়র্কে অবস্থিত বাংলাদেশের কনস্যুলেট ইতোমধ্যে নিউইয়র্ক পুলিশ, মেয়র অফিস এবং যুক্তরাষ্ট্রের ফরেন সার্ভিস বিভাগে চিঠি দিয়ে ড. ইউনূস ও তার সফরসঙ্গীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে।
কনস্যুলেট থেকে জানানো হয়েছে, অনুমতি ছাড়া কনস্যুলেট প্রাঙ্গণ বা সংলগ্ন এলাকায় কোনো ধরনের রাজনৈতিক জমায়েত বেআইনি হিসেবে বিবেচিত হবে। কূটনৈতিক শিষ্টাচার রক্ষা করতেও সকল পক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ড. ইউনূস ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণ দেবেন। তার ভাষণে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক সংস্কার, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রক্রিয়া, রোহিঙ্গা সংকট, জলবায়ু পরিবর্তন এবং দক্ষিণ এশিয়ার ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি— এসব বিষয় উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।