1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
বুধবার, ১২ নভেম্বর ২০২৫, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন

সংগ্রাম করে ‌ জীবন চলে ‌উপকূলের নারীদের

  • প্রকাশিত: বুধবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি : দেশে দেশে জলবায়ুগত সমস্যার প্রভাব পড়েছে ভিন্নভাবে। জলবায়ুগত সমস্যা বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার নারীদের বহুমুখী বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারীর স্বাস্থের ওপর প্রভাব পড়েছে বেশি। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটের সুন্দরবনসংলগ্ন অঞ্চলের লাখ লাখ নারী নদীতে নেট জাল টেনে জীবন নির্বাহ করেন। লবণাক্ত পানিতে দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলে তাদের শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে লবণাক্ত পানিতে নেট জাল টানার ফলে নারীর প্রজনন স্বাস্থের ক্ষতি হচ্ছে।
৮ মার্চ প্রতিবছর পালিত হয়‘আন্তর্জাতিক নারী দিবস’। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দ থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। মূলত লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ, নারীর প্রতি সম্মান ও সমান অধিকারের বার্তা ছড়িয়ে দিতে বিশ্বজুড়ে দিবসটির সূচনা। নারীর জীবন সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ের গল্পগুলো একেক দেশে একেক রকম। মানবসৃষ্ট বৈষম্য ও সমস্যার বিরুদ্ধে নারীর সংগ্রাম ও অধিকার আদায়ের ইতিহাস সাম্প্রতিক কালের।
তবে প্রকৃতিসৃষ্ট দুর্যোগ নারীর জীবনকে তছনছ করে দিলেও সেটি খুব কম উচ্চারিত হয়। যদিও জলবায়ুসৃষ্ট দুর্যোগ মানুষের কর্মকাণ্ডেরই ফসল। পৃথিবীর দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোতে জলবায়ু সমস্যার প্রভাব পড়েছে সবচেয়ে বেশি। বর্তমান সময়ে বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন।
দেশে দেশে জলবায়ুগত সমস্যার প্রভাব পড়েছে ভিন্নভাবে। জলবায়ুগত সমস্যা বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকার নারীদের বহুমুখী বিপর্যয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নারীর স্বাস্থের ওপর প্রভাব পড়েছে বেশি। সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাটের সুন্দরবনসংলগ্ন অঞ্চলের লাখ লাখ নারী নদীতে নেট জাল টেনে জীবন নির্বাহ করেন। লবণাক্ত পানিতে দীর্ঘক্ষণ থাকার ফলে তাদের শারীরিক ক্ষতি হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে লবণাক্ত পানিতে নেট জাল টানার ফলে নারীর প্রজনন স্বাস্থের ক্ষতি হচ্ছে।
উপকূল জুড়ে লবণাক্ততার ভয়াবহ প্রভাবের কথা এখন লুকিয়ে রাখার মতো বিষয় নয়। জলবায়ু সমস্যায় ফসল কম হচ্ছে। লবণপানির চিংড়ি চাষ ও জোয়ারে লোনাপানির প্রবেশের ফলে উপকূল জুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে লবণাক্ততার ভয়াবহ প্রভাব। পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় নারীদের ঘণ্টার পর ঘন্টা কষ্ট করে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অল্প বয়সে বুড়িয়ে যাচ্ছে নারীরা। লবণপানি পান করার কারণে নারীর গর্ভপাত, ত্বকের ক্ষতিসহ নানা জটিলতায় ভুগতে হচ্ছে।
উপকূলের সার্বিক ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়েছে। খাদ্য সংগ্রহ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বাল্যবিবাহ ও সামগ্রিক জীবনে নারীর কষ্টের কারণ জলবায়ু পরিবর্তন। জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত আন্তঃসরকার প্যানেল (আইপিসিসি)- এর তথ্য মতে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে ২০৫০ খ্রিষ্টাব্দ নাগাদ সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা প্রায় ১ ফুট বৃদ্ধি পাবে। ফলে বাংলাদেশসহ দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর উপকূলের বড় একটা অংশ পানিতে তলিয়ে যাবে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির ধারা অব্যাহত থাকলে অর্থাৎ তাপমাত্রা ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেতে পারে ১০ থেকে ৩০ ইঞ্চি। জলবায়ু সমস্যা নারীর মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দিচ্ছে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা কর্মসূচি (ইউএনএফপিএ) প্রতিবেদন বলছে, ১৯৯১ খ্রিষ্টাব্দের ঘূর্ণিঝড়ে উপকূলে ১ লাখ ৪০ হাজার নিহতের মধ্যে ৭৭ শতাংশ ছিলো নারী।
আর ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের আইলায় আহত ও নিহত মিলিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ নারীই ছিলো ৭৩ শতাংশ। সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেস (সিইজিআইএস)-এর উপকূলের পশুর নদী অববাহিকায় করা গবেষণা বলছে, পশুর নদী অববাহিকায় মানুষদের পানি ও অন্যান্য খাবার থেকে দৈনিক ১৬ গ্রাম অতিরিক্ত লবণ গ্রহণ করতে হচ্ছে, যা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্ধারিত মাত্রা থেকে বেশি। জলবায়ুগত সমস্যায় উপকূলে কর্মসংস্থানের ব্যাপক অভাব দেখা দেয়ায় পুরুষ মানুষকে দূর দূরান্ত গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। ফলে ঘরের সমস্যা সামলাতে হচ্ছে নারীকেই। উপকূলে পানির জন্য হাহাকার চলছে। জ্বালানি কাঠ ও পানি সংগ্রহ করতে নারীকে অনেক বেশি কষ্ট করতে হচ্ছে। বনের মধ্য দিয়ে মাইলের পর মাইল হেঁটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। অনেক পরিবার পানি সংগ্রহ করতে না পেরে অর্থ খরচ করে পানি কিনে খাচ্ছেন। লবণাক্ত পানি গ্রহণের ফলে অপরিণত শিশুর জন্ম, উচ্চ রক্তচাপ, গর্ভকালীন খিঁচুনি, নারীদের জরায়ুসংক্রান্ত ত্রুটি, পানিবাহিত রোগ ও চর্মরোগের সংক্রমণের ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। কিশোরীদের বাল্যবিবাহ ও স্কুল থেকে ঝরে পড়ার হার ত্বরান্বিত করছে জলবায়ু পরিবর্তন।
স্কুল সাপ্লাই
জলবায়ু সমস্যার শিকার হয়ে নারীরা উদ্বাস্তু হয়ে শহরে ভিড় জমাচ্ছে। কিশোরীদের শিক্ষাজীবন এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। উপকূলে শিক্ষার সুযোগ ও স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নারী ও কন্যারা। জলবায়ুগত সমস্যা আগামী দিনগুলোতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে না পারলে উপকূলের নারী ও কিশোরীদের জীবন আরো বেশি মাত্রায় নাজুক অবস্থায় উপনীত হবে। উপকূলের নারীদের রক্ষায় বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবিলায় নারীদের যত বেশি সম্পৃক্ত করা যাবে অভিযোজনের মাধ্যমে নারীরা তত বেশি নিজেদের রক্ষায় সক্ষম হবে। উপকূলের নারীদের অধিকার ব্যতিরেকে সমগ্র নারীর উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারীরা তাদের জলবায়ু ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য সোচ্চার হচ্ছে। দিনকে দিন তাদের দাবি জোরালো হচ্ছে। যারা জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য দায়ী নয়, তারা কেনো জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হবে? উপকূলের নারীদের ক্ষয়ে যাওয়া জীবন দেশের সামগ্রিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। উপকূলের নারীদের পানির কষ্ট দূর করতে হবে। নারীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ন্যায্যতা ও অধিকার নিশ্চিতপূর্বক উপকূলের নারীদের এখন অনেক বেশি দরকার মানবিক সহায়তা। নারীর ক্ষমতায়ন, অংশগ্রহণ ও নেতৃত্ব ব্যতীত দেশে নারীর অধিকার ।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চল সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলা। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে এই উপকূলীয় এলাকার নারীরা স্বামীর অনুপস্থিতিতে ওঠেন পরিবারের প্রধান। শ্যামনগরের উপকূলবর্তী মুন্সীগঞ্জ, গাবুরা, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, কৈখালী ও রমজাননগরসহ অন্যান্য ইউনিয়নের অধিকাংশ নারী জীবিকার তাগিদে সুন্দরবনসংলগ্ন নদীগুলোতে রেণু পোনা ও কাঁকড়া আহরণ করেন।
উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ নারীকে এভাবে সংগ্রাম করে সংসার চালাতে হয়। তবু কোথাও তারা পান না এতটুকু স্বীকৃতি। নির্যাতন, অবহেলা আর বৈষম্য যেন এদের নিত্যদিনের সঙ্গী। এ ছাড়া আছে যৌতুকের চাপ, তালাকের ভয়। স্বামীর একাধিক বিয়ে শেষ জীবনে উপকূলীয় নারীদের রাখে চরম অস্বস্তিতে।
তাদেরই একজন সোনামনি দাসী (৬০)। তিনি শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ বাজারের পাশের জেলেপাড়ায় থাকেন। তার একাকী জীবন। ছোটবেলায় সোনামনির বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েক বছরের মাথায় সুন্দরবনে মাছ শিকারে গিয়ে বাঘের আক্রমণে তার স্বামী মারা যান।
এরপর এক মাস বয়সী শিশুসহ সোনামনিকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেন শাশুড়ি। বাঘ তার স্বামীকে নিয়েছে গেছে এ কারণে সমাজ সোনামনিকে ‘অপয়া’ আখ্যা দেন। কিছুদিন পর দেবরের সঙ্গে সোনামনির বিয়ে হয়। মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে দ্বিতীয় স্বামীও বাঘের আক্রমণে মারা যান। দুই স্বামী বাঘের পেটে যাওয়ার পর সোনামনি সমাজে ‘স্বামীখেকো’ বলে পরিচিতি পান। সমাজ তাকে দেখে ভিন্ন চোখে। কোনো অনুষ্ঠানে তাকে দাওয়াত দেওয়া হতো না। সমাজে চলাফেরাই তার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। শাশুড়ি তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন, যাতে সকালে ঘুম থেকে উঠে সোনামনির মুখ দেখতে না হয়।
সোনামনির প্রথম স্বামীর একটি সন্তান ও দ্বিতীয় স্বামীর তিনটি সন্তান। অর্থাৎ তার দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। ছেলেমেয়েরা সবাই বিবাহিত। থাকেন আলাদা আলাদা। মাকে তারা তাদের সঙ্গে রাখেননি। এমনকি তারা মায়ের খোঁজখবরও নেন না।
বর্তমানে সংসার কীভাবে চলে জানতে চাইলে সোনামনি দাসী বলেন, ‘আমার আর সংসার! আমি একলা! বাজারের দোকান ঝাড়ু দিই, গাঙে জাল টানি মাছ, কাঁকড়া ধরি। ঘেরে মাটি কাটার কাজ করি। যখন যে কাজ পাই তা-ই করি। এভাবে চলতিছে।’
তবে তিনি আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি বিধবা’ তা তোমরা জানো, কিন্তু আমাগে চেয়ারম্যান-মেম্বাররা জানেন না।
চন্দ্রিকা বন্দ্যোপাধ্যায় (৫৫)। শ্যামনগর পৌরসভার হায়বাতপুর গ্রামের মৃত অনিমেষ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মেয়ে। তার বাবা ছিলেন দক্ষিণ খুলনার বিশিষ্ট সেতার বাদক ও সংগীতশিল্পী। তার তিন মেয়ের মধ্যে চন্দ্রিকা বন্দ্যোপাধ্যায় সবার বড়।
চন্দ্রিকা উপকূলীয় এলাকার সুবিধাবঞ্চিত নারীদের একত্রিত করে তৈরি করেন নারী সংগঠন ‘নকশিকাঁথা’।
সংগঠনটি মহিলাবিষয়ক অধিদপ্তরে নিবন্ধিত। চন্দ্রিকা বন্দ্যোপাধ্যায় সংগঠনটির পরিচালক পদে দায়িত্ব পালন করছেন। এ সংগঠনের মাধ্যমে তিনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে কার্যক্রম, কৃষি, হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ, সুপেয় পানির নিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। এসব কার্যক্রমের কারণে তিনি জয়িতা ও সফল সংগঠক পুরস্কারসহ অন্যান্য সম্মাননা লাভ করেন।
তিনি উপজেলা সরকারি কৃষি কমিটি, ভূমি কমিটি, স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কমিটি, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি, কমিউনিটি ক্লিনিকের কমিটি, বেসরকারি পানি কমিটি, জলবায়ু পরিষদ সদস্য, মহিলা ক্রীড়া সংস্থাসহ বিভিন্ন কমিটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। গত কয়েক বছর আগে তিনি দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট বাংলাদেশের সহায়তায় ইউরোপ, সুইডেন, ডেনমার্কসহ কয়েকটি দেশে ভ্রমণ করে বাংলাদেশের নারীদের সাফল্য নিয়ে বিভিন্ন সেমিনারে বক্তব্য দেন।
চন্দ্রিকা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ১৯৯৪ সালে তিনি সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন দাতা সংস্থার সহায়তায় তার সংগঠন বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ প্রযুক্তি, পুকুরে ফিল্টার স্থাপন, ঝরে পড়া শিশুদের উপ-আনুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান, নারীদের লবণসহিষ্ণু ধানবীজ বিতরণ, পুষ্টির চাহিদা পূরণে নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে ক্লাব গঠন ও প্রশিক্ষণ, প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা প্রদান, হস্তশিল্প ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে।
শেফালী বিবি (৫৫) সুন্দরবনঘেঁষা দাতিনাখালী গ্রামের ছবেদ আলী গাজীর স্ত্রী। কেওড়া ফলের টক-ঝাল-মিষ্টি আচার আর জেলি তৈরি করে তিনি তার ভাগ্যের চাকা ঘুরিয়েছেন।
শেফালী জানান, সুন্দরবনের কোলে চুনা নদীর পাড়ে খাস জমিতে তার বসতি। তার স্বামী সুন্দরবন থেকে মোম, মধু, মাছ, কাঁকড়া ও গোলপাতা আহরণ করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। কিন্তু তাতে ছয়জনের সংসার ঠিকমতো চলত না। তাই নিজেই কিছু করার কথা ভাবতে থাকেন। একপর্যায়ে গবেষণা প্রতিষ্ঠান বারসিকের পরামর্শে তিনি সুন্দরবনের কেওড়া ফল দিয়ে টক, ঝাল ও মিষ্টি আচার, জেলি এবং চকলেট তৈরি শুরু করেন। একই সঙ্গে মোম দিয়ে শোপিস, মোমবাতিসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি করে বিক্রি করতে থাকেন। এতে তার ভাগ্যের চাকা ঘুরে যায়। অর্থনৈতিকভাবে সাফল্যের মুখ দেখেন তিনি।
শেফালী শুধু নিজের ভাগ্যের চাকাই ঘোরাননি, তিনি বননির্ভর নারীদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘দাতিনাখালী বনজীবী নারী উন্নয়ন সংগঠন’। শতাধিক নারীকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে করেছেন আত্মনির্ভরশীল। প্রশিক্ষিত এসব নারীও কেওড়া ফলের চকলেট, আচার ও জেলি এবং সুন্দরবনের মধু বয়ামজাত করে বিক্রির মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করছেন। আর এসব পণ্য বিক্রির লভ্যাংশ ব্যয় হচ্ছে ‘বাঘ বিধবা’ ও বনজীবী নারীদের ভাগ্য উন্নয়নে।
এ বিষয়ে শ্যামনগর উপজেলা জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান মিসেস শাহানা হামিদ বলেন, উপকূলের নারীরা যেভাবে সংসারের হাল ধরছেন সেটি অবশ্যই প্রশংসনীয়। তবে সরকারি সহায়তার মাধ্যমে নারীদের এসব কাজে আরও উদ্যোগী করা প্রয়োজন। কারণ এরাই অর্থনীতি চাঙা করার মূল হাতিয়ার। উপকূলে নারী জেলে রয়েছেন। আর এ তথ্য সরকারের কাছে নেই। তাদের নিয়ে নতুন করে ভাবা দরকার।
তিনি আরও বলেন, উপকূলের নারীরা যেসব কাজে এগিয়ে রয়েছে, তা দেখতে হলে এখানে আসতে হবে। দেশের সামগ্রিক নারী উন্নয়নের ক্ষেত্রে এসব নারীও অংশীদার। তাই সরকারের পক্ষ থেকে এসব নারীকে বিনা সুদে ঋণ সহায়তা দেওয়া উচিত।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট