1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
শনিবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৫, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন

উপকূলের কাকড়া চাষ এখন সোনার মুকুট ‌, বাদ পড়েনি বিশ্ব ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান

  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৩৩ বার পড়া হয়েছে

বিশেষ প্রতিনিধি : সুন্দরবনের উপকূলীয় অঞ্চলে চিংড়ি কে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছে কাঁকড়া চাষ ‌। কাঁকড়া ‌চাষ এখন উপকূলীয় মানুষের জন্য সোনার মুকুট এর থেকে বাদ পড়েনি বিশ্ব ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান ও ‌। এই কাঁকড়া চাষে ‌বদলে গেছে হাজারো মানুষের জীবনের পরিবর্তন ‌। এক সময় যারা দুমুঠো ভাত জোগাতে ‌কষ্ট পেতেন তারা এখন অনেকে হয়েছে আঙ্গুল ফুলে কলা গাছ ‌।উপকূলে কাঁকড়া চাষের মাধ্যমে নিজেদের উন্নয়নের চাকা ঘোরাতে ব্যস্ত চাষীরা। কাঁকড়া চাষের মাধ্যমে নিজসহ অন্যদের বেকারত্ব ঘুচিয়েছে দক্ষিণাঞ্চলের চাষিরা। ৮০’র দশকের সময় থেকে এ অঞ্চলের মানুষেরা চিংড়ি চাষে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে চিংড়ি তার সঠিক আবহাওয়া সময় মতো না পাওয়ায় অনেকেই এই চিংড়ি চাষে ঝুঁকিতে পড়েছেন। এমতাবস্থায় উপকূলের চাষীরা সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি ফেলে কালো সোনা কাঁকড়া চাষ নিয়েও নতুন করে ভাবতে শুরু করেছেন। এলাকার মানুষ ছাড়াও ভিনদেশী মানুষেরা নিজিদের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কাঁকড়া চাষের মাধ্যমে। এই ব্যবসাকে কেন্দ্র করে শিল্প নগরী গড়ে উঠেছে মুন্সিগঞ্জের কলবাড়ি থেকে নীলডুমুর রাস্তার দু’পাশে। বর্তমানে কালো সোনা খ্যাত সফট কাকঁকড়া নামে পরিচিত এই কাঁকড়া রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ৯টি দেশে রপ্তানি হয় উপক‚লীয় অঞ্চলের ১০ পা বিশিষ্ট চিংড়ি প্রজাতির এই কাঁকড়া। খুলনাসহ দেশের উপক‚লীয় অঞ্চল থেকে প্রচুর কাঁকড়া আহরণ করা হয়ে থাকে। এ অঞ্চলের প্রায় হাজার হাজার বনজীবী নারী ও পুরুষ কাঁকড়া আহরণ বা বিপণনের সাথে জড়িত। এলাকা ঘুরে দেখা যায়, বুড়িগোয়লীনি-নীলডুমুর রাস্তার দু’পাশ ছেয়ে গেছে এই কাঁকড়া চাষে। এদের সাথে বাদ যায়নি বাংলাদেশের খ্যাতনামা ব্যক্তি বাংলাদেশ ক্রিকেটের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তিনি তার নামে গড়ে তুলেছেন সাকিব আল হাসান এগ্রো ফার্ম লিমিটেড নামে একটি সফট কাঁকড়ার প্রতিষ্ঠান।
সংশ্লিষ্ঠ কাজে জড়িত একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বললে জানা যায়, সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর, আশাশুনি, কালিগঞ্জ, দেবহাটা ও তালা উপজেলায় কাঁকড়া চাষ করা হয়ে থাকে। জানা যায়, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান, ভিয়েতনাম, ইউকে, ইউএই, সৌদি-আরব, তাইওয়ান, হংকং নেদারল্যান্ড, জার্মান, ফ্রান্সা, অষ্ট্রিয়া, কুয়েত, কাতার, ওমান, বাহারাইন, উগন্ডা, হন্ডুরাস, ইউএসএ এবং ভারতে উপকূলীয় অঞ্চলের কাঁকড়া রপ্তানি করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয় বিগত দিনে কাঁকড়ার ক্রাভলেট অর্থাৎ বাচ্চা নদীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে সংগ্রহ করতে হলেও তা এখন চলে এসেছে হাতের মুঠোয়। তবে এই ব্যবসায় চাষীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় কাঁকড়ার রেণু অর্থাৎ ক্রাভলেট সংকটে পড়তে পারে সুন্দরবন এমনটাই ভাবছেন এলাকার মানুষেরা।

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কলবাড়ি নামক স্থানে কাঁকড়ার বাচ্চা ফুটিয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান নওয়াবেঁকী গণমুখী ফাউন্ডেশন। নওয়াঁেবকী গণমুখী ফাউন্ডেশনের কাকড়া উৎপান শুরু করলেও তা থেকে খুব বেশি উৎপাদন বাড়ছে না বলে জানা যায়। নওয়াবেঁকী গনমূখী ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ঠ কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলে জানা যায়, একটি মা কাঁকড়া থেকে কুঁড়ি হাজারের বেশি বাচ্চা সংগ্রহ করা সম্ভব। তবে এলাকায় মা কাঁকড়া পাওয়া দুষ্কর। কাকড়া চাষী মুকুল হোসেন বলেন, ‘সাধারণত আমাবশ্যা ও প‚র্ণিমার গোনে কাঁকড়া ব্যবসা জমজমাট থাকে। শীত মৌসুমে মাদি কাঁকড়ার চাহিদা বেশি থাকে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আশ্বিন মাসে কাঁকড়ার চাষ শুরু হয়। দুই মাস পর পর কাঁকড়া আমরা বিক্রি করি। স্থানীয় ডিপো (কাকড়া বিক্রয় করা ঘর) গুলোতে কাঁকড়া কেনাবেচা হয়।’ অন্যদিকে মুন্সিগঞ্জ কাকড়া চাষি রাম কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ‘আমি ১০ কাঠা জমিতে চার ভাগে ভাগ করে সারাবছর কাঁকড়া চাষ করি, সংসারের ৫ সদস্য আর দুই ছেলেকে লেখাপড়ার খরচ চালাচ্ছি।’
শুধু রামকৃষ্ণ মন্ডল নয় এখানকার গ্রামের অন্যান্যরাও লাভজনক কাঁকড়া চাষে ঝুঁকে পড়েছেন। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও স্বামীদের কাঁকড়া চাষে সহযোগিতা করেন। কাঁকড়া চাষ তরুণদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানেরও উপায়। এই প্রসঙ্গে বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের তরুণ কাকড়া চাষি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘মাস্টার্স পাশ করে কোন চাকুরি না হওয়ায় হতাশায় ভুগছিলাম। কিন্তু এই কাকঁড়া ফার্মের মাধ্যমে সেই হতাশা থেকে মুক্তি পেতে চলেছি বলে মনে করছি। কুড়ি হাজার কাঁকড়ার খাচায় কাঁকড়া মোটাতাজাকরণ বা ফ্যাটেনিং পদ্ধতিতে চাষ করছি, প্রথমবারেই ভালো লাভ পেয়েছি।’ অন্যান্য চাষিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরে ১১০ গ্রাম মাদি কাঁকড়া ২শ’ টাকা কেজি, ১৫০ গ্রামের মাদি কাঁকড়া ৩শ’ টাকা, ১৮০ গ্রামের মাদি কাঁকড়া ৮শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া পুরুষ কাকড়া ৫শ’ গ্রামের কেজির দাম ৯শ’ টাকা, ৪ গ্রাম পুরুষ ৮শ’ টাকা, ৩শ’ গ্রাম পুরুষ ৭শ’ টাকা, এবং ২শ’ গ্রাম সাইজের কাঁকড়া ৫শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বর্তমান সময়ে এলাকার শিক্ষিত, অশিক্ষিত বেকারেরা ব্যাপকভাবে ঝুঁকছে কাঁকড়া চাষের দিকে। তবে কাঁকড়া উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে আরও সচেতন হওয়া প্রয়োজন। নিয়ম না মেনে ছোট কাকঁড়া আহরণের ফলে একদিন এই ব্যবসা হুমকির মধ্যে পড়তে পারেন বলে জানান অনেকেই। এ এলাকার অন্যান্য চাষিরা বলেন, ‘কাঁকড়া চাষ হবে এলাকার শ্রেষ্ঠ চাষ সে আশা বুকে নিয়েই নেমেছি।’ স্থানীয় কলবাড়ি বাজার রেখে বুড়িগোয়ালিনি-মুন্সিগঞ্জ রাস্তার দু’পাশ্বে শোভা পাচ্ছে হাজার একর জমিতে কাঁকড়া চাষ। স্থানীয় মানুষদের পাশাপাশি দেশের অন্যান্য এলাকা থেকে অনেকেই এখানে এসে চাষ শুরু করেছে। কাঁকড়া চাষকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে একাধিক কাঁকড়া মজুদ কারখানা। কাঁকড়া চাষে কর্মসংস্থান হয়েছে হাজার হাজার মানুষের। প্রতিনিয়নত নদী থেকে শতশত মানুষ হাজার হাজার ছোট বড় কাঁকড়া ধরে চাষীদের কাছে বিক্রয়ের মাধ্যমে নিজেদের সংসার চালিয়ে নিচ্ছে। কিন্তু সুন্দরবন থেকে যে হারে কাঁকড়া আহরণ হচ্ছে তাতে করে একদিন সুন্দরবন কাঁকড়ার অভাবে হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে মনে করেছেন অনেকেই।
পৃথিবীর সেরা কাঁকড়া প্রজনন ক্ষেত্র হলো সুন্দরবন। বিশের¦ বিভিন্ন দেশে সুন্দরবনের কাঁকড়া বিশাল চাহিদা এবং বাজার সৃষ্টি হয়েছে। প্রতি বছর এই ভৌগলিক নির্দেশক পণ্যটি বাংলাদেশের রাজস্ব খাতকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। সুন্দরবন কাঁকড়া কালসোনা সুনাম অর্জন করেছে। সাদাসোনা চিংড়ি আমাদের পরিবেশ, প্রতিবেশ, এবং প্রাণবৈচিত্র্য নির্ভর জীবন জীবিকাকে ক্ষত-বিক্ষত করলেও সুন্দরবন কালসোনা কাঁকড়ার পরিবেশ-প্রতিবেশ এবং জীবন ও জীবিকাবান্ধব। কিন্তু পৃথিবীর সেরা এই ভৌগলিক পণ্যটি মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ এবং বিপন্ন তালিকায় অবস্থান করছে, শুধুমাত্র আইনের প্রয়োগ না থাকায় এবং ত্রুটিপূর্ণ ব্যবস্থাপনা ও দূর্নীতির কারণে। সুন্দরবনের কাঁকড়া প্রজনন মৌসুম জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। এই দুইমাস সুন্দরবন থেকে কাঁকড়া সংগ্রহ করা আইনত নিষিদ্ধ। তবে তা মেনে চলেন না কেউ এমন অভিযোগ প্রকৃতি প্রেমিকদের। কিভাবে এই দুই মাসে প্রকাশ্যে সুন্দরবন থেকে প্রতিদিন শত শত মণ কাঁকড়া সংগ্রহ করে বনবিভাগের পাশের বাজারগুলোতে বিক্রি হয়ে থাকে এমন প্রশ্নের শেষ নেই সুশীল সমাজের মানুষের। কাঁকড়া সংগ্রহে পাস বন্ধ থাকলে, কিভাবে অতিরিক্ত কাঁকড়া সংগ্রহের জন্য বনবিভাগ রাজস্ব/জরিমানা গ্রহণ করে থাকে? বনবিভাগ থেকে মাত্র ২/৩ কিলোমিটার দূরে কলবাড়ী বাজারে সুন্দরবন থেকে সংগ্রহ করে শত শত মণ কাঁকড়া প্রকাশ্যে বেচাকেনা চলে এই দুই মাসে। তাহলে কি অনিয়মই কাঁকড়া সংগ্রহের নিয়ম, না কি বনবিভাগের কর্মকর্তাদের সততা ও দেশপ্রেমের অভাব? কেন বনবিভাগ আইনের প্রয়োগ করতে ব্যর্থ?

এই কালো সোনা খ্যাত কাকঁড়া চাষ নিয়ে উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসাইন সাগরের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘সফট কাকঁড়া চাষের জন্য এই এলাকাটি উপকূলীয় এলাকা হিসেবে উপযুক্ত জায়গা। এখানে প্রকৃতি থেকে কাকঁড়ার রেণু অর্থাৎ ক্রাভলেট সহজেই মেলানো যায়। এই কাকঁড়ায় ঝুঁকি কম, আন্তর্জাতিক বাজারে চাহিদাও কম না এবং দ্রæত মুনাফা পাওয়া যায়। এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ব্যবসায় অন্যান্য চাষে ঝুঁকি থাকলেও এতে ঝুঁকির পরিমাণ কম। সফট কাঁকড়া চাষে এলাকার ৮ থেকে ১০ হাজার বেকার যুবক যুবতীদের কর্মসংস্থান হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘তবে এই ব্যবসাটি প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল, প্রকৃতি থেকে এভাবে নিয়মিত কাঁকড়ার রেণু ধরতে থাকলে একদিন প্রকৃতির উপর প্রভাব পড়বে। যদি কাঁকড়ার মজুদ নিরুপণ করা যেত তাহলে সে হিসাব মতে আহরণ নির্ধারণ করা যেত। তবে এই সফট কাঁকড়া চাষের পরিধি বাড়াতে চাইলে অবশ্যই সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে কাকঁড়া রেণুর হ্যাচারী তৈরি করতে হবে।’ মৎস্য কর্মকর্তা বলেন, ‘হ্যাচারী করতে গেলে অবশ্যই মা কাঁকড়ার প্রয়োজন। তবে সুন্দরবন থেকে মা কাকঁড়া খুজে পাওয়া দুরহ ব্যাপার। তাছাড়া কাকঁড়া চাষে পানির লবণাক্ততা থাকা প্রয়োজন ৩০-৩৫ পিপিটি যা আমাদের এই অঞ্চলের পানিতে নেই। তবে এই এলাকা না হলেও দেশের যে অঞ্চলে পানির লবণাক্ততার পিপিটি বেশি সে অঞ্চলে উদ্যোগ নিলে হ্যাচারী সফল হবে বলে মনে করি।’
যাই হোক, প্রতিবেশিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে সরকারসহ দেশের প্রতিটি নাগরিককে সুন্দরবন কালসোনা ক্ষাত কাঁকড়া সম্পদ রক্ষায় এগিয়ে আসা জরুরি। তবেই সমৃদ্ধশালী হবে এই কাঁকড়া ব্যবসা এমনটাই মনে করেন অনেকেই। পৃথিবীর সেরা ভৌগলিক নির্দেশক পণ্য কাঁকড়া, মধু, মাছসহ সকল ম্যানগ্রোভ সম্পদকে টেকসই ব্যবস্থাপনায় পৃথক আইন তৈরি করতে হবে। সৎ, যোগ্য এবং দেশপ্রেমী কর্মকর্তাকে সুন্দরবন সংরক্ষণে দায়িত্ব প্রদান এবং বিশেষ বনের বিশেষ দায়িত্বে নিয়োজিত কর্মকর্তাদের বিশেষ সুযোগ-সুবিধা রাখাও মারাত্মক জরুরি। সুন্দরবনের প্রতিটি সম্পদ রক্ষায় দেশের প্রতিটি নাগরিকের মধ্যে দেশপ্রেম আরো বেশি করে জাগরিত হোক।
সখিনা বেগম (৩৭)। স্বামী : রাশিদুল কাগজী (৪৫)। ২০০০ সালে বিয়ে হয় তাদের। দুই ছেলে ও এক মেয়ে সন্তান তাদের। সুন্দরবনের গা ঘেঁষা সাতক্ষীরার শ্যামনগরে কাঁকড়া চাষ এখন আর কেবল বিকল্প আয়ের উৎস নয়। এটি এখন লাভজনক ও টেকসই শিল্প। ডিজিটাল পদ্ধতিতে পরিচালিত এ চাষাবাদে স্বাবলম্বী হচ্ছে শত শত পরিবার। কর্মসংস্থান হয়েছে নারীদেরও।
এখন সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত গ্রামে গেলে দেয়া যায়, কাটা হচ্ছে হাজার হাজার তেলাপিয়া মাছ। যা খাঁচাবন্দি কাঁকড়াগুলোর খাবার। আর নিয়ম করে তিনবেলা লক্ষ্য রাখা কাঁকড়াগুলো খোলস পাল্টেছে কিনা। ২০ থেকে ২২ দিনের মধ্যেই কাঁকড়ার ওজন বাড়লে কাঁকড়াগুলো রপ্তানি হয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
কাঁকড়ার এমন সম্ভাবনা দেখে সরকারি-বেসরকারি নানা সংস্থা যেমন আগ্রহী, তেমনি বর্তমানে চাষিরাও হুমড়ি খেয়ে পড়ছেন এ খাতে।
শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের ৯নং সোরা গ্রামের বাসিন্দা মতিউর রহমান। ৬ বিঘা জমিতে কাঁকড়া চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তিনি বলেন, প্রায় পাঁচ-ছয় বছর ধরে খাঁচায় কাঁকড়া পালন করছি। ভালো লাভ হয়। তবে সমস্যা একটাই-পানির সংকট। আর যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না। গাবুরা ইউনিয়নে একটি কোম্পানি কাজ করে। তারা নদীপথে বোট নিয়ে এসে নির্ধারিত স্থানে কাঁকড়া সংগ্রহ করে নিয়ে যায়।
সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা এখনো কোনো সরকারি সহযোগিতা পাইনি। যদি প্রশিক্ষণ ও পানির সমস্যা সমাধানে কেউ এগিয়ে আসে, তাহলে এই পদ্ধতিতে আরও বেশি মানুষ যুক্ত হবে।
সাতক্ষীরার এই প্রকল্পে শুধু চাষিরাই নন, কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হয়েছে বহু শ্রমজীবী মানুষের জন্যও। তাদের একজন মো. রবিউল ইসলাম। তিনি বলেন, সকাল ৭টা থেকে রাত ৭টা পর্যন্ত ডিউটি। এর মধ্যে কাঁকড়ার খাঁচা চেক করতে হয় দিনে চারবার- সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যায়। এরপর রাত ১১টা ও রাত ৩টায় দেখতে হয় খোলস বদলেছে কি না।
তিনি জানান, সফটশেল কাঁকড়া আলাদা করে তোলা হয়। পরে কোম্পানি সেই কাঁকড়া বিভিন্ন গ্রেডে কিনে নেয়। খাদ্য হিসেবে তেলাপিয়া মাছ দেওয়া হয় প্রতি তিন দিন পরপর।
জানা যায়, এই প্রকল্পে নারীরাও সরাসরি যুক্ত। কেউ কাঁকড়ার খাবার হিসেবে তেলাপিয়া মাছ কেটে দেন, কেউ খাঁচা পরিষ্কারের কাজ করেন।
স্থানীয় যুবক জাফর সাদিক সোহাগ বলেন, এই চাষের কারণে গ্রামের মানুষের কর্মসংস্থান বেড়েছে। নারীরাও আয় করছেন। এটা অনেক লাভজনক পদ্ধতি।
মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সাতক্ষীরা জেলা থেকে ৬৪৪ মেট্রিক টন সফটশেল কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে, যার বাজারমূল্য প্রায় ১০০ কোটি টাকা। বর্তমানে ৩৬৪ জন চাষি, জেলার ৩২১টি স্থানে এই চাষ করছেন। বছরে উৎপাদন হচ্ছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন কাঁকড়া।
সাতক্ষীরা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জি এম সেলিম বলেন, সাতক্ষীরায় চিংড়ির পাশাপাশি কাঁকড়া চাষ দ্রুত জনপ্রিয় হচ্ছে। এটি খুব সম্ভাবনাময় একটি খাত। আমরা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালাচ্ছি, কিছু বেসরকারি সংস্থাও কাজ করছে।
তবে সমস্যার কথাও জানালেন তিনি। প্রতি বছর পাঁচ মাস সুন্দরবনে কাঁকড়া আহরণ বন্ধ থাকে এবং এখানে কাঁকড়ার হ্যাচারি নেই। হ্যাচারি হলে সারা বছর উৎপাদন সম্ভব হতো এবং কর্মসংস্থান অব্যাহত থাকত বলে মনে করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আমরা চেষ্টা করছি সরকারিভাবে কীভাবে এই বন্ধ সময়েও চাষিদের সহায়তা দেওয়া যায়। বনবিভাগের সঙ্গে আলোচনাও চলছে। বাগদা বা গলদার পাশাপাশি কাঁকড়া চাষ আত্মকর্মসংস্থানের বড় মাধ্যম হতে পারে।
এক সময়ের উপেক্ষিত সুন্দরবনঘেঁষা জনপদ আজ স্বপ্ন দেখছে কাঁকড়াকে ঘিরে। সরকারি সহায়তা, হ্যাচারি ও রপ্তানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা হলে সাতক্ষীরা হতে পারে দেশের কাঁকড়া রপ্তানির কেন্দ্রস্থল- এমনই বিশ্বাস স্থানীয়দের।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট