
বিশেষ প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা, একসময়ের শান্ত ও নির্মল জেলা শহর, আজ যানজটের এক ভয়াবহ আগ্রাসনে জর্জরিত। শহরের প্রধান সড়ক থেকে শুরু করে অলিগলিতেও এখন যানবাহনের দীর্ঘ সারি নিত্যদিনের দৃশ্য। ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপ, অপর্যাপ্ত রাস্তাঘাট শহরটিকে যেন এক অবরুদ্ধ নগরীতে পরিণত করেছে। বিশেষ করে অবৈধ ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক,রাস্তার প্রস্ততা কম ও মটর ভ্যানের সীমাহীন চলাচল এই সংকটের মূল কারণ। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী—সবাই এই যানজটের শিকার।এই যানজট শুধু মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে স্থবির করে দিচ্ছে না, একইসাথে শহরের অর্থনীতিতেও গভীর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
সাতক্ষীরা শহরের বেশিরভাগ রাস্তার প্রশস্ততা খুবই কম। পুরোনো শহরের বিন্যাস অনুযায়ী গড়ে ওঠা এই রাস্তাগুলো বর্তমান সময়ের যানবাহনের চাপ সামলানোর জন্য মোটেও যথেষ্ট নয়। শহরের প্রধান সড়ক, যেমন পাকাপোল থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত অংশটি, যানবাহনের চাপ সামলানোর জন্য যথেষঠ প্রশস্ত নয়।প্রধান সড়কগুলো থেকে শুরু করে অলিগলির রাস্তাগুলোও সরু হওয়ায় সামান্য যানবাহনের চাপেই দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। একটি ছোট রাস্তার উপর দিয়ে শত শত ইজিবাইক, রিকশা, মোটরসাইকেল এবং অন্যান্য যানবাহন চলাচল করে, ফলে স্বাভাবিকভাবেই যানজটের সৃষ্টি হয়।বিশেষ করে দীঘির পাড়, পাকাপোলের মোড়, নিউমার্কেট, খুলনা রোড মোড়, সঙ্গীতা মোড়, তুফান কোম্পানির মোড়, নাবারুন স্কুল মোড়, হাটের মোড় এবং সদর হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় এই সমস্যা প্রথম নয়
সাতক্ষীরার যানজটের সবচেয়ে বড় কারণ হলো অনুমোদনহীন ও নিয়ন্ত্রণহীন ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক ও মটর ভ্যান। শহরের অলিগলিতে হাজার হাজার ইজিবাইক চলাচল করে, যার অধিকাংশই কোনো প্রকার আইনানুগ রেজিস্ট্রেশন বা রুট পারমিট ছাড়াই চলছে।শহরের প্রায় প্রতিটি মোড়ে এবং সড়কে শত শত ইজিবাইক ও ভ্যান চলাচল করে। এই যানবাহনগুলো ব্যাটারি চালিত হওয়ায় কোনো আইনগত বাধ্যবাধকতার আওতায় পড়ে না এবং এর ফলে যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, এলোমেলো পার্কিং এবং প্রতিযোগিতামূলক ড্রাইভিং শহরের স্বাভাবিক গতিকে বাধাগ্রস্ত করে।এসব যানবাহন একদিকে যেমন দ্রুত গতিতে চলে না, অন্যদিকে ট্র্যাফিক আইনও মানতে চায় না। ফলে এরা প্রায়ই পুরো রাস্তা দখল করে নেয়।
সমাজের বেকারত্বের হার বৃদ্ধি পাওয়ায় অনেক যুবক বিকল্প কর্মসংস্থান হিসেবে ইজিবাইক ও মোটর ভ্যান চালানোকে বেছে নিচ্ছেন। এতে একদিকে যেমন তাদের কর্মসংস্থান হচ্ছে, অন্যদিকে শহরে এই ধরনের যানবাহনের সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে।এটি সরাসরি যানজট বাড়াচ্ছে এবং শহরকে আরও বেশি করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে ফেলছে।
শহরের বাণিজ্যিক এলাকাগুলোতে গাড়ি পার্কিং-এর জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট স্থান নেই। ফলে ব্যক্তিগত গাড়ি, মোটরসাইকেল এবং বাণিজ্যিক গাড়িগুলো রাস্তার পাশেই পার্ক করা হয়।বিভিন্ন মার্কেটের সামনে, সড়কের পাশে এবং ফুটপাতে যত্রতত্র গাড়ি ও ইজিবাইক পার্ক করা থাকে। এতে করে রাস্তার অর্ধেক অংশই দখল হয়ে যায় এবং বাকি অর্ধেক দিয়ে কোনোমতে যানবাহন চলাচল করতে হয়।
শহরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় ফুটপাতগুলো হকার ও অবৈধ দোকানদারদের দখলে চলে গেছে। এতে পথচারীরা বাধ্য হয়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটে, যা যানবাহন চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে। নিউমার্কেট, খুলনা রোড, পাকাপোল, কেষ্ট মাইরার ব্রিজ এই দৃশ্য খুব সাধার
সাতক্ষীরার ট্রাফিক ব্যবস্থা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ না থাকা এবং কার্যকর ট্রাফিক সিগন্যালের অভাব যানজটকে আরও বাড়িয়ে তোলে। অনেক ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ থাকা সত্ত্বেও যানজট নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হচ্ছে না।
সাতক্ষীরার এই অসহনীয় যানজট শুধু সময় নষ্ট করে না, বরং সমাজের প্রতিটি স্তরে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
যানজটের কারণে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। পণ্য পরিবহনে দেরি হয়, সময় মতো ক্রেতা বা বিক্রেতা গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না,যা ব্যবসায়ীদের জন্য লোকসানের কারণ হয়। এছাড়া এতে আর্থিক লেনদেন ও ব্যবসার গতি কমে যায়।এছাড়া, জ্বালানি তেলের অপচয় এবং যানবাহনের রক্ষণাবেক্ষণ খরচও বৃদ্ধি পায়
যানজটে গাড়ির দীর্ঘ সময় ধরে থেমে থাকার ফলে অসম্পূর্ণ দহনের (incomplete combustion) কারণে কালো ধোঁয়া নির্গত হয়। এই ধোঁয়ায় মূলত পার্টিকুলেট ম্যাটার বা পিএম (PM), কার্বন মনোক্সাইড (CO), নাইট্রোজেন অক্সাইড (NOx), সালফার ডাইঅক্সাইড (SO2) এবং বেনজিনের মতো ক্ষতিকর রাসায়নিক উপাদান থাকে। যানজটে আটকে থাকা গাড়ির ধোঁয়া বায়ু দূষণ বাড়িয়ে দেয়। যানজটের কারণে সৃষ্ট বায়ু দূষণ একটি গুরুতর জনস্বাস্থ্য সমস্যা।এর ফলে ক্যান্সার, শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ, অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস, পালমোনারি ডিজিজ এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়,যা নীরব ঘাতকের মতো মানুষের জীবন কেড়ে নিচ্ছ।দীর্ঘমেয়াদী দূষণের কারণে ফুসফুসের কার্যকারিতা হ্রাস পায় এবং শ্বাসকষ্টের সমস্যা বেড়ে যায়। এছাড়া, দীর্ঘ সময় যানজটে বসে থাকার কারণে মানুষের মানসিক চাপ ও হতাশা বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে স্কুলগামী শিক্ষার্থী ও বয়স্ক রোগীদের জন্য এটি এক বিরাট দুর্ভোগের কারণ।
যানজটে গাড়ি যখন স্থির থাকে, তখন তা অপরাধীদের জন্য একটি সহজ লক্ষ্য হয়ে ওঠে।জরুরি প্রয়োজনে, যেমন অ্যাম্বুলেন্সকে সঠিক সময়ে হাসপাতালে না পৌঁছানো,কোনো অপরাধ ব দুর্ঘটনার খবর পেয়েও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারে না, যার ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের গাড়িগুলোকে দ্রুত আগুন নেভানোর স্থানে পৌঁছানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। যানজটে আটকে থাকার কারণে মানুষের মূল্যবান সময় নষ্ট হয়। যেমনটি একজন কলেজ ছাত্র সোহাগ বলেছেন, পাকাপোল থেকে নিউমার্কেট পর্যন্ত হেঁটে যেতে যেখানে মাত্র ০৩ মিনিট লাগে, তীব্র যানজটের কারণে সেখানে ৩০ মিনিট বা তারও বেশি সময় লাগছে।সাধারণ মানুষ, চাকরিজীবী, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রতিদিন কর্মক্ষেত্রে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পৌঁছাতে গিয়ে তীব্র ভোগান্তির শিকার হয়।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা একই জায়গায় আটকে থাকা মানুষের মধ্যে তীব্র মানসিক চাপ তৈরি করে। এই চাপ থেকে জন্ম নেয় বিরক্তি, হতাশা এবং ক্ষোভ। এর ফলে সামান্য কথা কাটাকাটি বা হর্ন বাজানো নিয়েও চালক ও যাত্রীদের মধ্যে মারামারি বা হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। অনেক সময় এই ধরনের ঘটনা গুরুতর আহত বা এমনকি মৃত্যুর কারণ হয়।যানজটের ফলে রাস্তায় চলাচলের সময় প্রায়শই চালকদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এতে আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে।
সাতক্ষীরার যানজট নিরসনে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অপরিহার্য। এই সমস্যা সমাধানে স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে
সাংবাদিক এস এম রেজাউল ইসলাম জানান, ব্যাটারি-চালিত ইজিবাইক ও মোটর ভ্যানের সংখ্যা সীমিত করা এবং সেগুলোকে একটি নির্দিষ্ট রুটে চলাচলের জন্য অনুমতি দেওয়া উচিত। এর পাশাপাশি, অবৈধ যানবাহন চলাচল বন্ধ করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন। নির্দিষ্ট সংখ্যক ইজিবাইককে নিবন্ধনের আওতায় এনে লাইসেন্স প্রদান করা যেতে পারে এবং বাকিগুলোকে ধীরে ধীরে অপসারণের ব্যবস্থা নিতে হবে।শহরের কেন্দ্রস্থলে ইজিবাইকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে প্রধান সড়কগুলোতে শুধু সীমিত সংখ্যক বাস চালানোর অনুমতি দেওয়া যেতে পারে।
সাতক্ষীরা পৌরসভা হতে জানা যায়, পৌরসভা থেকে নিবন্ধনকৃত ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক এর সংখ্যা ৬৯৬ টি।অথচ শহরের ভিতরে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েক হাজার ইজিবাইক। যাদের অধিকাংশই সাতক্ষীরা পৌরসভা থেকে নিবন্ধন নেওয়া নেই।
সাতক্ষীরার সুশীল সমাজ দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্যা সমাধানের জন্য প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আসছে। সাতক্ষীরার প্রধান সড়কগুলোর প্রশস্ততা দ্রুত বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধান হলেও শহরের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। শহরের অভ্যন্তরীণ রাস্তাগুলোকেও প্রশস্ত করার উদ্যোগ নিতে হবে।শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে মাল্টি-লেভেল পার্কিং-এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। এছাড়া, রাস্তার পাশে অবৈধ পার্কিং বন্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৭০ বছর বয়সী মুন্সি মো:আনিসুর রহমান বলেন, শহরের নাগরিকদের জন্য উন্নত এবং সাশ্রয়ী গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু করা গেলে ব্যক্তিগত যানবাহন ব্যবহারের প্রবণতা কমবে।বেকারত্বের কারণে মানুষ এসব যানবাহনের দিকে ঝুঁকছে। সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনকে বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে
সাতক্ষীরা পৌরসভার নাগরিক মোঃ রফিকুল ইসলাম বলেন, নিয়মিত অভিযান চালিয়ে ফুটপাতগুলো হকার মুক্ত করতে হবে এবং পথচারীদের চলাচলের জন্য ফুটপাতকে উন্মুক্ত রাখতে হবে।ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাকে ঢেলে সাজাতে হবে। আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা স্থাপন, পর্যাপ্ত সংখ্যক প্রশিক্ষিত ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ এবং ট্রাফিক আইন মেনে চলার জন্য জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরী।মানসম্মত ও পর্যাপ্ত গণপরিবহন চালু করলে ব্যক্তিগত গাড়ি এবং ইজিবাইকের ওপর নির্ভরতা কমবে। এতে যানজট বহুলাংশে হ্রাস পাবে
সাতক্ষীরার যানজট একটি গুরুতর সমস্যা যা জনজীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে এবং শহরের অর্থনৈতিক অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করছে। এই সমস্যা সমাধানে প্রশাসন, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং জনগণের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। শুধুমাত্র কঠোর আইন প্রয়োগ নয়, বরং সচেতনতা বৃদ্ধি এবং একটি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সাতক্ষীরাকে যানজট মুক্ত করে একটি বাসযোগ্য শহরে পরিণত করা সম্ভব। অন্যথায়, এই যানজটের জাঁতাকলে পিষ্ট হয়ে সাতক্ষীরার উন্নয়ন ও জনজীবন পুরোপুরি স্থবির হয়ে পড়বে।
যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে সাতক্ষীরা শহরে। মাঝেমধ্যে যানজটের ভয়াবহতা এতটাই তীব্র থাকে, পাঁচ মিনিটের রাস্তা অতিক্রম করতে ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যায়।শহরের ব্যস্ততম নিউমার্কেট ও পাকাপোল মোড়ে প্রতিদিনই লেগে থাকে যানজট।পাকাপোলের দুই পাড়ের দীর্ঘ যানজটের কারণে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মজীবী মানুষ সঠিক সময় গস্তব্যে পৌঁছাতে পারে না। এতে লক্ষাধিক মানুষের জীবনযাত্রা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যান ও ইজিবাইকের নৈরাজ্য যার মুখ্য কারন।
এসব নিরসনের উদ্যোগ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে সাতক্ষীরা পৌরসভা ও ট্র্যাফিক বিভাগ কাজ করছে। কিন্তু আজ অবধি দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেখেনি পৌরবাসী।
পথচারী ও যাত্রীদের অভিযোগ, ইচ্ছে হলেই যেখানে সেখানে ‘অঘোষিত স্ট্যান্ড’ বানিয়ে ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যান, ইজিবাইক ও বাস দাঁড় করিয়ে যাত্রী ওঠানামা করার ফলে এলাকার মূল সড়কগুলোতে প্রতিদিন যানজট লেগেই থাকে। এছাড়াও অবৈধ যানবাহনের বেপরোয়া গতির কারণে দুর্ঘটনা লেগেই আছ।
সাতক্ষীরা পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরা পৌরসভার আয়তন ৩১ দশমিক ১০ বর্গকিলোমিটার। লোকসংখ্যা প্রায় দুই লাখ। পৌরসভায় ২০১ কিলোমিটার পাকা সড়ক রয়েছে। শহরের মধ্যে পড়েছে ৩০ কিলোমিটার সড়ক। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে সাতক্ষীরা পৌরসভা ৬৯৫টি ইজিবাইকের লাইসেন্স অনুমোদন করে। এরপরে আর কোন লাইসেন্স এর অনুমোদন দেয়নি পৌরসভা
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকায় সড়কের প্রস্থ অনেক কম, সড়কের পাশে নেই ফুট।পাতও। এখন সাতক্ষীরা পৌরসভার মধ্যে প্রতিদিনই ৩ থেকে ৪ হাজার ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যান চলাচল করছে। বেশি আয়ের জন্য বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং উপজেলা থেকে এসব যানবাহন সরাসরি শহরে প্রবেশ করছে। যে কারণে শহরবাসী সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এখন জনসাধারণের ভোগান্তির মুখ্য কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অবৈধ ভ্যান ও ইজিবাই।
১২নভেম্বর সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত শহরে অবস্থান করে দেখা গেছে, শহরের শহীদ নাজমুল সরণি, শহীদ কাজল সরণি, শহীদ সিরাজ সরণি, সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কের শহীদ আলাউদ্দিন চত্বর থেকে ইটেগাছা পর্যন্ত, সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের নিউ মার্কেট থেকে সার্কিট হাউস মোড় পর্যন্ত, নারিকেলতলা-টাউন বাজার ব্রিজ হয়ে পাকাপোল, তুফান মোড়, সুলতানপুরের কেষ্টময়রার মোড়, বড়বাজার মোড় এবং পুরাতন সাতক্ষীরা সড়কে প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস, ট্রাক এবং যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে বেপরোয়া গতিতে ব্যাটারিচালিত অবৈধ ভ্যান-ইজিবাইক অনিয়ন্ত্রিতভাবে চলাচল করছে। প্রধান এই সড়কগুলোতে শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিনই তীব্র যানজট লেগে থাকা
শহরের সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাফান্নুন নুসরাত বলেন, ভ্যান-ইজিবাইকের কারণে আমাদের চলাচলে চরম অসুবিধা হচ্ছে। ছুটির পরে স্কুলের সামনে ভ্যান ও ইজিবাইক দাঁড়িয়ে থাকে, আর এক পাশে গাড়ি চলে। যে কারণে চলাচল করতে পারি না, রাস্তা পার হওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। যানজটে আটকে প্রতিদিনই প্রায় আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা সময় নষ্ট হয়। আমাদের চলাফেরা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে
স্থানীয় পরিবেশ কর্মী কুমার রুদ্র বলেন, সাতক্ষীরার সড়কগুলোতে অবৈধ ভ্যান-ইজিবাইকের চলাচল একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, যা লক্ষাধিক মানুষের জীবনে নানা ধরনের দুর্ভোগ সৃষ্টি করছে। এর সমাধানে দ্রুত ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। স্থানীয় প্রশাসন, ট্র্যাফিক পুলিশ এবং জনগণের যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে এই সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসা প্রয়োজন, যাতে শহরের পরিবহন ব্যবস্থা নিরাপদ ও সুষ্ঠু রাখা সম্ভব হয়।
সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব এড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, আশির দশক পর্যন্ত সাতক্ষীরার যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল নদী কেন্দ্রিক। কিন্তু নৌপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এখন যোগাযোগের একমাত্র পথ সড়ক। কিন্তু গত পঞ্চাশ বছরে সাতক্ষীরা শহর বাইপাস সড়ক ছাড়া আর কোন নতুন সড়ক তৈরি হয়নি। এমন কি পুরাতন সড়কগুলো আগের মতই রয়েছে, সেগুলো প্রস্থ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এই সময়ে শহরে জনসংখ্যা বেড়েছে কমপক্ষে দশগুণ। প্রতিদিন ব্যবসা বাণিজ্য অফিস আদালতে হাজার হাজার মানুষ শহরে আসছে। ফলে যানবাহন বেড়েছে শতগুনেরও বেশি
তিনি আরও বলেন, শহরের মধ্যে প্রচুর অবৈধ যান চলাচল করে যার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। ফুটপাতগুলো নানাভাবে দখল করে রেখেছে দোকানদাররা। এছাড়া শহরের বাইরে দিয়ে একটি বাইপাস সড়ক থাকলেও অনিয়ন্ত্রিতভাবে প্রচুর যানবাহন শহরের মধ্য দিয়ে চলাচল করছে। প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষে যৌথভাবে কাজ করলে শহরের যানজট নিরসন করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম মুনীর জানান, সড়কে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সাতক্ষীরা ট্রাফিক পুলিশ অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। শহরের যানজট নিরসনে জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির সভায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা পৌরসভা থেকে অনুমোদিত ৬৯৫টি ইজিবাইক ছাড়া অন্য কোন ইজিবাইক চলতে পারবে না। যানজট নিরসনে অবৈধ যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে আনতে দ্রুত কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন।