
ডেস্ক রিপোর্ট : পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, পুলিশের বিতর্কিত কাউকে আগামী নির্বাচনে নেতৃত্ব স্থানে দেওয়া হবে না। এখনো বিতর্র্কিতদের তালিকা করা না হলেও বিগত সময়ের বিতর্কিতদের সংশ্লিষ্ট জেলার এসপি ও ডিআইজি চিহ্নিত করছেন।
শনিবার দুপুরে খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) লাইনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে গণমাধ্যম কর্মীদের এ কথা বলেন। তার আগে তিনি আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করার জন্য পুলিশের অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে যোগ দেন।
আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, দেশের মানুষ নির্বাচনের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। মানুষ নির্বাচনকে স্বাগত জানাচ্ছে। বর্তমান অন্তবর্তী সরকারও চাচ্ছে একটি অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক আছে। তাই পুলিশ নিজের ইচ্ছায় প্রশিক্ষিত হচ্ছে। কিভাবে একটি সষ্ঠু নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়া যায়। বিগত তিনটি নির্বাচনে বাংলাদেশ পুলিশের কিছু সদস্য কোনো কারণে দায়িত্ব থেকে বিচ্যুতি হয়েছে বা ভুল করতে বাধ্য হয়েছে তা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ প্রশিক্ষণ নিচ্ছে পুলিশ। যাতে করে অতীতের ভুলগুলো শুধরে নেওয়া যায়। একটি সফল নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য পুলিশ সদস্যরা উজ্জ্বীবিত।
তিনি বলেন, গত তিনটি নির্বাচন নিয়ে নানান বিতর্ক আছে, সমালোচনা আছে। আমরা যেন সেইসব সমালোচনা থেকে বেরিয়ে আসতে পারি। সমাজের সকল অংশের সহযোগিতায় সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে একটা সফল নির্বাচনে আমাদের ওপর যে দায়িত্ব এসেছে আমরা তা ভালোভাবে পালন করতে পারব।
তিনি বলেন, আমি আমার ৩৫ বছরের পুলিশি জীবনে শুনি নাই নির্বাচনী দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশকে প্রশিক্ষণ নিতে হয়- আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা ও অপরাধ দমন করা-এগুলো আমাদের মান্ডেডেট (মৌলিক) কাজ।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের মৌলিক প্রশিক্ষণ যখন একাডেমিতে নেই, তখন এর পরে রেফ্রেশান প্রশিক্ষণ যখন থাকে, তখন এগুলো আমাদের মধ্যে আসতে আসতে গড়ে ওঠে। তবে এবারই, এই প্রথম নির্বাচনী প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছি। মূলত আমাদের বেদনাদায়ক যে অভিজ্ঞতা আছে, আগের তিনটা ইলেকশন ১৪, ১৮ এবং ২৪ যেখানে যেটা নিয়ে নানান বিতর্ক এসেছে, নানান ধরনের সমালোচনা আছে। দুর্ভাগ্যজনকভাবে আমরাও সেই সমালোচনার শিকার হয়েছি, অংশীদার হয়েছি কারণ আমরাও তিনটি নির্বাচনেই পার্টিসিফেট (অংশগ্রহণ) করেছি। আমাদের ভুলগুলো করেছি, অথবা করতে বাধ্য হয়েছি, সেগুলো আর যেন না করি, ঐ ভুলগুলো যেন শুধরাতে পারি, এই জন্য সমস্ত ব্যাড প্র্যাকটিস, ম্যাল প্র্যাকটিস না করি, পক্ষপাতিত্ব না করি সব ঝেড়ে ফেলে দিয়ে ইন্টারিম (অন্তবর্তীকালীন সরকার) গভমেন্টের যে অঙ্গীকার সেই অঙ্গীকার সবচাইতে সুন্দর একটা নির্বাচন তা আমরা পূরণ করতে পারব।
এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, আমরা ক্রসফায়ার দিয়ে সন্ত্রাস দমন করতে চাই না। আইনের শাসন সমুন্বত রাখতে চাই। অপরাধীকে আদালতে প্রেরণ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাই বর্তমান পুলিশের লক্ষ্য। সমাজের প্রতিটি মানুষ আমাদের শক্তি। পুলিশের শক্তি পুলিশের একার পক্ষে সব সমাধান করা সম্ভব নয়।
আগামী নির্বাচনে সাইবার সন্ত্রাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এই জায়গায় আমরা দুর্বল। কিছু ব্যক্তি মত প্রকাশের স্বাধীনতার নামে সোস্যাল মিডিয়ায় এআই দিয়ে যা ইচ্ছা তাই ভাইরাল করছে। আমরা প্রথম বিটিআরসিকে জানাই। বিটিআরসি ফেসবুকের মেটাকে জানায়। অনেক সময় ৪০ ভাগ সেগুলো অপসারিত করে মেটা। সবগুলো পরিত্যাজ্য করে না। এখানে পুলিশের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
বিগত দিনে নির্বাচনে বিতর্কিত পুলিশ কর্মকর্তারা আগামী নির্বাচনে কি দায়িত্ব পালন করবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কোনো বিতর্কিত ব্যক্তি নির্বাচনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকবে না। বর্তমান সরকার চায় একটি সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ সফল নির্বাচন। তাই আমরা পুলিশও সেটি চাই। পুলিশ নির্বাচন কমিশনের ডিরেকশন মেনে চলবে। নির্বাচন কমিশনও যথেষ্ট আন্তরিক। আমাদের বিশ্বাস আমরা সফল হবো।
এ সময় খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার জুলফিকার আলী হায়দার, খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি মো. রেজউল করিমসহ খুলনা বিভাগের পুলিশের বিভিন্ন দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।