1. mesharulislammonir1122@gmail.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন
  2. info@www.sangjogprotidin.com : দৈনিক সংযোগ প্রতিদিন :
মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:২০ অপরাহ্ন

সুন্দরবনে মধুর চাকে দোল খায় ৪ হাজার মৌয়ালের স্বপ্ন

  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৫
  • ৪৪ বার পড়া হয়েছে

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ‌: সুন্দরবনের মধু দেশের ঐতিহ্য। এখানকার খাঁটি মধুর ঘ্রাণ ও স্বাদ অতুলনীয়। মধু প্রিয়দের কাছে সুন্দরবনের খাঁটি মধুর কদর অন্যরকম। এ অঞ্চলে ৪ হাজার ১৩ জন পেশাদার মৌয়াল সুন্দরবন হতে মধু আহরণ করে। মধুর চাকে দোল খায় তাদের স্বপ্ন।
সুন্দরবনে প্রাকৃতিকভাবে জন্ম নেওয়া গরান, খলিষা, কেওড়া ও বাইন গাছের ফুল হতে মৌমাছি মধু সংগ্রহ করে। খলিষা ফুলের মধু সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের। দেখতে সাদা, খেতে সুস্বাদু।

পশ্চিম সুন্দরবনের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা এ জেড এম হাসানুর রহমান এই প্রতিবেদককের ‌সাথে কথা বলে জানা গেলো, প্রতি বছরের এপ্রিল ও মে দুই মাস মৌয়ালরা সুন্দরবন থেকে মধু সংগ্রহ করেন। ২০২০ সালে সাতক্ষীরা রেঞ্জে মধু আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ১ হাজার ৫০ কুইন্টাল। কিন্তু মধু আহরিত হয়েছে ২ হাজার ৬ কুইন্টাল। আর মোম আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ২৬৫ কুইন্টাল। মোম আহরিত হয়েছে ৬০২ কুইন্টাল। এ সময়কালে রাজস্ব উপার্জিত হয় ১৫ লাখ ৪ হাজার ৮৭৫ টাকা।
সুন্দরবনে মৌচাক হতে পর্যাপ্ত মধু আহরণের জন্য মৌয়ালদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। কারণ উপযুক্ত সময় ছাড়া মৌচাক থেকে পর্যাপ্ত মধু পাওয়া যায় না। তাছাড়া মধু আহরণের সময় যাতে মৌমাছি আঘাতপ্রাপ্ত না হয় সেদিকে সর্বোচ্চ নজর রাখতে হয়।
মিস্টার হাসানুর রহমান ‌আরও জানান, জলবায়ু পরিবর্তনে বিরূপ প্রভাবে গাছে ফুল ভালো না হলে মধু উৎপাদন ব্যাহত হয়। কারণ ফুলের সাথে মধু উৎপাদনের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। পরিচর্যা ও সংরক্ষণের ফলে ইদানিং সুন্দরবনে গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ফলে মধু উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে।

শ্যামনগরে মধু নিয়ে কাজ করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বাংলাদেশ এনভায়ারমেন্ট ডেভলপমেন্ট সোসাইটি। সংস্থাটির পরিচালক মাসুদুর রহমান মুকুল বলেন, প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত সুন্দরবনের মধু উৎকৃষ্টমানের। কিন্তু উৎপাদিত মধু সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাতকরণ করা গেলে বিদেশে বেশি দামে বিক্রি করা যাবে। সেক্ষেত্রে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে দেশ। তিনি নিউজিল্যান্ডে প্রাকৃতিকভাবে উৎপাদিত ভানুকা মধুর কথা উল্লেখ করে বলেন, পৃথীবির সবচেয়ে দামি মধু এটি। এ মধু প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।
তিনি আরও বলেন, সুন্দরবন অঞ্চলে মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা গড়ে উঠলে অধিক কর্মসংস্থানের পাশাপাশি বিদেশে মধু রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
বছর এপ্রিল ও মে মাসে উপকূলীয় অঞ্চলের চার হাজারেরও বেশি পেশাদার মৌয়াল রওনা হন বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবনের দিকে। তাঁদের মূল লক্ষ্য বনভিত্তিক খাঁটি মধু সংগ্রহ। বছরের অন্যান্য সময়ে জীবিকার টানাপোড়েনে থাকা এসব মৌয়ালের কাছে এই দুই মাস যেন স্বপ্নপূরণের মৌসুম। সুন্দরবনের মধু শুধু উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের আয়ের উৎস নয়, বরং এটি বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী ও স্বতন্ত্র পণ্য। এর স্বাদ, ঘ্রাণ ও বিশুদ্ধতা অতুলনীয়, যা দেশের বাজারে যেমন জনপ্রিয়, আন্তর্জাতিক বাজারেও যার চাহিদা ক্রমশ বাড়ছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে মৌচাষিরা ফুলভিত্তিক বিভিন্ন ধরনের মধু সংগ্রহ করলেও প্রাকৃতিক উৎপত্তি ও মানের দিক থেকে সুন্দরবনের মধুর কোনো তুলনা নেই। ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে এই মধু ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) স্বীকৃতি অর্জন করে, যা দেশের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ অর্জন। যদিও এর আগেই ২০২৪ সালে ভারত সুন্দরবনের মধুকে নিজেদের জিআই পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করায় বাংলাদেশে মধু ব্যবসায়ী, গবেষক ও মৌয়ালদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দেয়। সংশ্লিষ্ট দপ্তরের গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশও এই স্বীকৃতি অর্জনে সফল হয়। এই অর্জন যেমন গর্বের, তেমনি এর সঙ্গে জড়িত কিছু গভীর উদ্বেগও রয়েছে। মৌসুম শুরুর আগেই কিছু অসাধু জেলে ও বাওয়ালি অপরিপক্ক মধুর চাক কেটে নিচ্ছেন, যা মধুর গুণগত মান নষ্ট করার পাশাপাশি প্রাকৃতিক প্রজননচক্রও বাধাগ্রস্ত করছে। অন্যদিকে, কিছু মুনাফালোভী ব্যবসায়ী কৃত্রিমভাবে চিনি জ্বালিয়ে মধু তৈরি করছেন এবং বাক্সে মৌমাছি রেখে বনভিত্তিক মধু বলে চালিয়ে দিচ্ছেন। এতে প্রকৃত মৌয়ালরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি আন্তর্জাতিক বাজারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ২০২৪ সালে শুধু সাতক্ষীরা রেঞ্জেই ৩৬৪টি পাশের মাধ্যমে ১,২৩৫ দশমিক ৫০ কুইন্টাল মধু ও ৩৭০ দশমিক ৬৫ কুইন্টাল মোম সংগ্রহ হয়, যা থেকে সরকার প্রায় ২৮ লাখ টাকা রাজস্ব আয় করে। ২০২৫ সালের জন্য এ লক্ষ্যমাত্রা আরও বাড়িয়ে ধরা হয়েছেÍমধুর ক্ষেত্রে ১,৫০০ কুইন্টাল এবং মোমের ক্ষেত্রে ৪০০ কুইন্টাল। তবে জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বনাঞ্চলে ফুল ফোটার হার কমে যাওয়ায় মধু উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। মধু উৎপাদনের সঙ্গে ফুলের সরাসরি সম্পর্ক থাকায় এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে আশার কথা হলো, বন বিভাগ ও স্থানীয় উদ্যোক্তারা বিভিন্ন ফুলজাতীয় গাছ লাগানোর উদ্যোগ নিয়েছেন, যা দীর্ঘমেয়াদে মধু উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বিশ্বের সবচেয়ে দামি প্রাকৃতিক মধু নিউজিল্যান্ডের ‘ভানুকা’ মধু, যার কেজিপ্রতি দাম ৫০-৬০ হাজার টাকা। সুন্দরবনের মধুও যদি উপযুক্তভাবে প্রক্রিয়াজাত ও মান নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা যায়, তবে এটি আন্তর্জাতিক বাজারে একই মর্যাদা লাভ করতে পারে। সরকারিভাবে মধু প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানা স্থাপন, মান নির্ধারণ ও রপ্তানির কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা গেলে এ খাত হতে পারে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের একটি বড় উৎস। এতে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির সুযোগ সৃষ্টি হবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে তৈরি হবে নতুন কর্মসংস্থান, যা জাতীয় অর্থনীতিকে আরও চাঙা করতে সহায়তা করবে। সুন্দরবনের মধু শুধু এক বোতল সুস্বাদু তরল নয়, এটি আমাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য, জীবিকাভিত্তিক সম্ভাবনা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে আত্মনির্ভরতার প্রতীক। এই সম্পদ রক্ষা করা শুধু দায়িত্ব নয়, বরং এটি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি মূল্যবান সঞ্চয়ও বটে।

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত -২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
ওয়েবসাইট ডিজাইন : ইয়োলো হোস্ট